পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বীরবলের হালখাতা وال ) ( না-পড়ে-পণ্ডিত হওয়া সম্ভব হলেও না-লিখে-লেখক হওয়া যায় কি না সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে, এবং সেইজন্যই মাসিকপত্রের বংশবৃদ্ধিটি সুখের কিংবা দুঃখের বিষয়, সে বিষয়ে আমি মনস্থির করে উঠতে পারি নি। সাময়িক সাহিত্য যে অপাঠ্য, অস্কার ওআইন্ডের এ মত আমাদের গ্রাহ করবার দরকার নেই। মাসিক সাপ্তাহিক এবং দৈনিক পত্র সম্বন্ধে অস্কার ওআইল্ড যে মত প্ৰকাশ করেছেন, তার চাইতে ঢ়ের বড়ো লেখক চার্লস ল্যাম সাহিত্য সম্বন্ধে সেই একই মত প্ৰকারাস্তরে প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘একখানি নতুন বই প্ৰকাশিত হলে একখানি পুরনো বই পোড়ো।” এর থেকে বোঝা যায় যে সেকালের মায়ায় আমরা স্বকালের মর্যাদা বুঝতে পারি নে। কারো-কারো মতে নবসাহিত্য রচনা করা আর সরস্বতীর শ্ৰাদ্ধ করা একই কথা- তা মাসিকই হোক, আর সাংবাৎসরিকই হোক । তবে বইয়ের সঙ্গে মাসিকপত্রের যে একটা প্ৰভেদ আছে, তা আমরা সকলেই মানতে বাধ্য। বই লেখে একজনে, আর মাসিকপত্র অনেকে মিলে । এক কথায়, মাসিকপত্রের উদ্দেশ্য হচ্ছে সরস্বতীর বারোয়ারি পুজো করা। কাজেই ব্যাপারটা অনেক সময়ে গোলেহরিবোলে পরিণত হয়। তার পর যেখানে চান্দা করে। কাৰ্য উদ্ধার করতে হয়, সেখানে জাতবিচার করা চলে না— ব্ৰাহ্মণ শূদ্র সকলের পক্ষে সে উৎসবে যোগদান করবার সমান অধিকার আছে। গোল তো এই নিয়েই । সকলে কথা কইতে পারলেও যে গান গাইতে পারে না, হাটতে পারলেও যে নাচতে পারে না, এ কথা সকলেই জানেন এবং সকলেই মানেন। কিন্তু অনেকে লিখতে পারলেও যে “লিখতে পারে না, এ জ্ঞান আমরা হারিয়ে বসে আছি। 'হারিয়ে বসে আছি’ বলবার কারণ এই যে, সংগীতের মতো লেখা-জিনিসটেও যে একটি আর্ট, এ জ্ঞান আমাদের পূর্বপুরুষদের ছিল। সকল আলংকারিক একবাক্যে বলে গেছেন যে, কাব্যরচনা করবার জন্য দুটি জিনিস চাই - প্রথমত, প্ৰাক্তন সংস্কার ; দ্বিতীয়ত, শিক্ষা । একালের অনেক লেখকের বিশ্বাস যে, সাহিত্যিক হবার জন্য একমাত্র প্রাক্তন সংস্কারই যথেষ্ট, শিক্ষা-দীক্ষার কোনোরূপ আবশ্যক নেই ; কেননা তাদের লেখা পড়ে বোঝা যায় না, তারা তাদের নৈসৰ্গিকী প্ৰতিভা ব্যতীত অপর কিসের উপর নির্ভর করেন। মহর্ষি চরকের শিষ্য অগ্নিবেশ বলেছেন যে, যে-সকল চিকিৎসকের গুরুর নাম কেউ জানে না যাদের কোনো সতীর্থ নেই, তঁরা ‘দ্বিজিহব বায়ু ভক্ষকা:” । এই শ্রেণীর সাহিত্য-চিকিৎসকের দল যে ক্ৰমে বৃদ্ধিপ্ৰাপ্ত হচ্ছে, সে বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই এবং মাসিকপত্ৰসকল এই শ্রেণীর সাহিত্যিকদের প্রশ্ৰয় দিতে বাধ্য ।