পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

f)<ej vef53if St. বাংলাদেশে আজকাল যদিও বা লেখক থাকে তো লেখবার বিষয় বড়ো একটা নেই। লেখবার সামগ্রীর যে অনটন ঘটেছে তার প্রমাণ, আজকাল কী লেখা উচিত, কী ভাষায় লেখা উচিত, কী ধরনের লেখা উচিত- এই-সব নিয়ে সকলে মহা গণ্ডগোল বাধিয়েছেন। কী শহুরে কী পাড়া গেয়ে, এমন মাসিকপত্র নেই, যা এই পণ্ডিতের বিচারে যোগদান করে নি। এ-সকল তর্কবিতর্কের যে কোনো সার্থকতা নেই, এ কথা আমার মুখে শোভা পায় না। তবে এই-সব আলংকারিক-তত্ত্ব নিয়ে এতটা দেশজোড়া আন্দোলন হওয়াটাই আক্ষেপের বিষয়। কেননা, এ-সব সমস্যার বিচার করতে হলে, প্রথমত, সে বিচার করবার শিক্ষা এবং শক্তি থাকা আবশ্যক ; দ্বিতীয়ত যুক্তিযুক্ত তর্ক করবার অভ্যাস থাকা আবশ্যক। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে অন্যরূপ। নিত্যই দেখতে পাই যে র্যারা দু ছত্র সোজা করে লিখতে পারেন না, তারাও রচনা-রীতি নিয়ে মস্ত-মস্ত আঁকাবঁকা প্ৰবন্ধ লেখেন । তার পর দেখতে পাই, এই-সব লেখকদের ধৈর্যের অপেক্ষ বীৰ্য ঢের বেশি। এর যুক্তিতর্কের ধার ধারেন না- উপদেশ দেন, আদেশ করেন। সম্ভবত এদের বিশ্বাস যে রাগের মাথায় যে-কথা বলা যায়, তা সত্য হতে বাধ্য। এরা ভুলে যান যে ক্রোধান্ধ হলে মানুষের দিগ বিদিক-জ্ঞান থাকে না। ফলে, এরা সাহিত্যের যে-সব ইটপাটকেল কুড়িয়ে পান তা মাতৃভাষার উপর নিক্ষেপ করতে শুরু করেছেন। আমার সুমুখে তিনখানি মাসিকপত্র খোলা রয়েছে; তার একখানিতে মাতৃভাষাকে ‘কিস্কিন্ধ্যার ভাষা’ [| সাহিত্য-সংহিতা ], আর-একখানিতে 'পেত্ত্বিভাষা’ [ ভারতী ], আর-একখানিতে ‘চণ্ডালীভাষা’ [ উপাসনা ] বলা হয়েছে। এরকম কথা যারা মুখে আনতে পারেন, তাদের কথার প্রতিবাদ করা অসম্ভব ও নিম্প্রয়োজন ; কেননা, তারা যে বঙ্গসরস্বতীর কতদূৱ সুসন্তান, তার পরিচয় নিজ-মুখেই দেন। কিন্তু আমাদের মাসিকপত্ৰসকল যে এই-সব অকথা কুকথা প্রচারের সহায়তা করেন- তার থেকে বোঝা যায় যে, বাংলার বন্দেমাতরম-যুগ চলে গিয়েছে। আমাদের লেখবার বিষয় যে বড়ো-একটা নেই, তার অপর প্রমাণ- বাংলা-মাসিকে প্রত্নতত্ত্বের প্রাধান্য। প্রত্নতত্ত্ব আর যাই হোক সাহিত্য নয়। ও বস্তু মূল্যবান, এই হিসেবেই যদি প্রত্নতত্ত্বকে মাসিকপত্রে স্থান দেওয়া হয় তা হলে রত্নতত্ত্বই বা বাদ যায় কেন । তবে যদি সম্পাদক মহাশয়েরা বলেন, বাংলার সাহিত্যাওয়ালদের মধ্যে কোনো জহুরি নেই, তা হলে অবশ্য আমাদের নিরুত্তর থাকতে হবে। মাসিক সাহিত্যের প্রধান সম্বল হচ্ছে ছোটোগল্প। এই ছোটোগল্প কা ভাবে লেখা উচিত সে বিষয়েও আজকাল আলোচনা শুরু হয়েছে। এও আর-একটি প্রমাণ