পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ao বীরবলের হালখাতা আবার রঙ ফলাতে হবে। এ কথা খুব ঠিক। জীবন আমরা কিসের জন্য ধারণ করি তা না জানলেও, এটা জানি যে, পরের জন্য আমরা তা ধারণ করি নে- অপর দেশের অপর লোকের জন্য তো নয়ই। তবে রিদেশীর কথা উত্থাপন করবার সার্থকতা এই যে, জাতীয়-জীবনের ক্রটি বিদেশীর চোখে৷ যেমন এক-নজরে ধরা পড়ে, স্বদেশীর চোখে তা পড়ে না । কেননা, আজন্ম দেখে দেখে লোকের চোখে যা সয়ে গেছে, যারা 2 C7AN VT57K (SCR VS F3 a এই বিদেশীরাই আমাদের সজ্ঞান করে দিয়েছে যে, রূপ সম্বন্ধে আমরা চোখ থাকতেও কানা । আমাদের রূপজ্ঞান যে নেই, কিংবা যদি থাকে তো অতি কম, সে বিষয়ে বোধ হয় কোনো মতভেদ নেই। কেননা, এ জ্ঞানের অভাবটা আমরা জাতীয় মনের দৈন্য বলে মনে করি নে। বরং সত্য কথা বলতে গেলে, আমাদের বিশ্বাস যে, এই রূপান্ধতাটাই আমাদের জাতীয় চরিত্রের মহত্ত্বের পরিচয় দেয়। রূপ তো একটা বাইরের জিনিস ; শুধু তাই নয়, বাহাবস্তুরও বাইরের জিনিস ; ও জিনিসকে যারা উপেক্ষা, এমন-কি, অবজ্ঞা করতে না শিখেছে তারা আধ্যাত্মিকতার সন্ধান জানে না । আর আমরা আর-কিছু হই আর না-হই বালবৃদ্ধবনিতা সকলেই যে আধ্যাত্মিক সে কথা যে অস্বীকার করবে, সে নিশ্চয়ই স্বদেশ এবং স্বজাতিদ্রোহী । V রূপ-জিনিসটাকে র্যারা একটা পাপ মনে করেন তাদের মতে অবশ্য রূপের প্রশ্ৰয় দেওয়ার অর্থ পাপের প্রশ্ৰয় দেওয়া। কিন্তু দলে পাতলা হলেও পৃথিবীতে এমন-সব লোক আছে, যারা রূপকে মান্য করে শ্রদ্ধা করে, এমন-কি, পূজা করতেও প্ৰস্তুত ; অথচ নিজেদের মহাপাপী মনে করে না । এই রূপভক্তের দল অবশ্য স্বদেশীর কাছে কৈফিয়ত দিতে বাধা, অর্থাৎ প্ৰমাণ-প্ৰয়োগ-সঙ্গ করে রূপের স্বত্বসাব্যস্ত করতে বাধ্য। আপসোসের কথা এই যে, যে-সত্য সকলের প্রত্যক্ষ হওয়া উচিত, সেই সত্য এ দেশে প্ৰমাণ করতে হয়- অর্থাৎ একটা সহজ কথা বলতে গেলে, আমাদের ন্যায়-অন্যায়ের তর্কস্রোতের উজান ঠেলে যেতে হয় । যা সকলে জানে— আছে, তা নেই বলতে অতিবুদ্ধির পরিচয় দেওয়া হতে পারে, কিন্তু বুদ্ধির পরিচয় দেওয়া হয় না। কিন্তু দুৰ্ভাগ্যবশত আমরা এই ‘অতি'র অতিভক্ত হওয়াতে আমাদের ইতির জ্ঞান নষ্ট হয়েছে। বস্তুর রূপ বলে যে একটি ধর্ম আছে। এ হচ্ছে শোনা-কথা নয়- দেখা-জিনিস । র্যার চোখ-নামক ইন্দ্ৰিয় আছে, তিনিই কখনো-না-কখনো তার সাক্ষাৎ লাভ করেছেন।