পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

YAV বীরবলের হালখাতা মানুষে তিনটি কথাকে বড়ো বলে স্বীকার করে, তার অর্থ তারা বুকুক আর নাবুকুক। সে তিনটি হচ্ছে : সত্য শিব আর সুন্দর। যার রূপের প্রতি বিদ্বেষ আছে, সে সুন্দরকে তাড়না করতে হলে হয়। সত্যের নয় শিবের দোহাই দেয় ; যদিচ সম্ভবত সে ব্যক্তি সত্য কিংবা শিবের কখনো একমনে সেবা করে নি। যদি কেউ বলেন যে, সুন্দরের সাধনা কর— অমনি দশজনে বলে ওঠেন, কী দুনীতির কথা। বিষয়বুদ্ধির মতে সৌন্দৰ্যপ্রিয়তা বিলাসিত এবং রূপের চর্চা চরিত্রহীনতার পরিচয় দেয়। সুন্দরের উপর এ দেশে সত্যের অত্যাচার কম, কেননা এ দেশে সত্যের আরাধনা করবার লোকও কম। শিবই হচ্ছে এখন আমাদের একমাত্র, কেননা অমনি-পাওয়া, ধন । এ তিনটির প্রতিটি যে প্ৰতি-অপরটির শত্ৰু, তার কোনো প্ৰমাণ নেই। সুতরাং এদের একের প্রতি অভক্তি অপরের প্রতি ভক্তির পরিচায়ক নয়। সে যাই হোক, শিবের দোহাই দিয়ে কেউ কখনো সত্যকে চেপে রাখতে পারে নি ; আমার বিশ্বাস, সুন্দরকেও পারবে না । যে জানে পৃথিবী সুর্যের চার দিকে ঘুরছে, সে সে-সত্য স্বীকার করতে বাধ্য, এবং সামাজিক জীবনের উপর তার কী ফলাফল হবে সে কথা উপেক্ষা করে সে-সত্য প্রচার করতেও বাধ্য। কেননা, সত্যসেবকদের একটা বিশ্বাস আছে যে, সত্যজ্ঞানের শেষফল ভালো বৈ মন্দ নয়। তেমনি যার রূপজ্ঞান আছে, সে সৌন্দর্যের চর্চা এবং সুন্দর বস্তুর সৃষ্টি করতে বাধ্য- তার আশু সামাজিক ফলাফল উপেক্ষা ক’রে, কেননা, রূপের পূজারীদেরও বিশ্বাস যে, রূপজ্ঞানের শেষফল ভালো বৈ মন্দ নয়। তবে মানুষের এ জ্ঞানলাভ করতে দেরি লাগে । শিবজ্ঞান আসে সবচাইতে আগে । কেননা, মোটামুটি ও-জ্ঞান না থাকলে সমাজের সৃষ্টিই হয় না, রক্ষা হওয়া তো দূরের কথা। ও-জ্ঞান বিষয়বুদ্ধির উত্তমাঙ্গ হলেও একটা অঙ্গমাত্র। তার পর আসে। সত্যের জ্ঞান। এ জ্ঞান শিবজ্ঞানের চাইতে ঢের সূক্ষ্মজ্ঞান এবং এ জ্ঞান আংশিকভাবে বৈষয়িক, অতএব জীবনের সহায় ; এবং আংশিকভাবে তার বহির্ভূত, অতএব মনের সম্পদ। সবশেষে আসে রূপজ্ঞান। কেননা, এঞ্জোন অতিসূক্ষ্ম এবং সাংসারিক হিসেবে অকেজো । রূপজজ্ঞানের প্রসাদে মানুষের মনের পরমায়ু বেড়ে যায়, দেহের নয়। সুনীতি সভ্যসমাজের গোড়ার কথা হলেও সুরুচি তার শেষকথা । শিব সমাজের ভিত্তি, আর সুন্দর তার অভ্ৰভেদী চুড়া। অবশ্য হাৰ্বাট স্পেনসার বলেছেন যে, মানুষের রূপঞ্জন আসে আগে এবং সত্য জ্ঞান তার পরে। তার কারণ, যে জ্ঞান তার জন্মায় নি, তিনি মনে করতেন। সে জ্ঞান বাতিল