পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

तैौद्रवृढद्ध शंक्श्रांड সঙ্গে আমার আত্মীয়তা না থাকলেও তার মোড়কের সঙ্গে এবং মলাটের সঙ্গে আমার চক্ষুষ পরিচয় আছে। আমি বহু ঔষধের এবং বহু গ্রন্থের কেবলমাত্র মুখ চিনি ও নাম জানি। যা জানি, তারই সমালোচনা করা সম্ভব। সুতরাং আমি মলাটের সমালোচনা করতে উদ্যত হয়েছি। অন্তত মুখপাতটুকু দোৱন্ত করে দিতে পারলে আপাতত বঙ্গসাহিত্যের মুখরক্ষা হয়। আমি পূর্বেই বলেছি যে, নব্যবঙ্গসাহিত্যের কেবলমাত্র নামরূপের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। প্ৰধানত সেই নাম-জিনিসটার সমালোচনা করাই আমার উদ্দেশ্য । কিন্তু রূপ-জিনিসটে একেবারে ছোট দেওয়া চলে না বলে সে সম্বন্ধে দুই-একটা কথা বলতে চাই। ডাক্তারখানার আলো যেমন লাল নীল সবুজ বেগুনে প্রভৃতি নানারূপ কঁচের আবরণের মধ্যে দিয়ে প্ৰকাশ পায়, তেমনি পুস্তকের দোকানে একালের পুস্তকপুস্তিকাগুলি নানারূপ বর্ণচ্ছটায় নিজেদের প্রকাশ করে। সুতরাং নব্যসাহিত্যের বর্ণপরিচয় যে আমার হয় নি, এ কথা বলতে পারি নে। কবিতা আজকাল গোধূলিতে গা-ঢাকা দিয়ে ‘লজ্জানােম নববধু সম’ আমাদের কাছে এসে উপস্থিত হয় না; কিন্তু গালে আলতা মেখে রাজপথের সুমুখে বাতায়নে এসে দেখা দেয়। বর্ণেরও একটা আভিজাত্য আছে। তার সুসংযত ভাবের উপরেই তার গাম্ভীৰ্য ও সৌন্দৰ্য নির্ভর করে। বাড়াবাড়িজিনিসটা সব ক্ষেত্রেই ইত্যরতার পরিচায়ক। আমার মতে পূজার বাজারের নানারূপ রঙচঙে পোশাক পরে প্রাপ্তবয়স্ক সাহিত্যের সমাজে বার হওয়া উচিত নয়। তবে পূজার উপহারস্বরূপে যদি তার চলন হয়, তা হলে অবশ্য কিছু বলা চলে না। সাহিত্য যখন কুন্তলীন তাম্বলীন এবং তরল-আলতার সঙ্গে একশ্রেণীভুক্ত হয়, তখন পুরুষের পক্ষে পরুষ বাক্য ছাড়া তার সম্বন্ধে অন্য-কোনো ভাষা ব্যবহার করা চলে না । তবে এই কথা জিজ্ঞাসা করি যে, এতে যে আত্মমৰ্যাদার লাঘব হয়, এ সহজ কথাটা কি গ্ৰন্থকারেরা বুঝতে পারেন না; কবি কি চান যে, তার হৃদয়বৃক্ত তরল-আলতার শামিল হয়; চিন্তাশীল লেখক কি এই কথা মনে করে সুখী হন যে, তার মস্তিষ্ক লোকে সুবাসিত নারিকেলতৈল হিসাবে দেখবো ; এবং বাণী কি রসনানিঃসৃত পানের পিকের সঙ্গে জড়িত হতে লজ্জা বোধ করেন না ? আশা করি যে, বইয়ের মলাটের এই অতিরঞ্জিত রূপ শীঘ্রই সকলের পক্ষেই অরুচিকর হয়ে উঠবে। অ্যান্টিক কাগজে ছাপানো এবং চকচকে ঝকঝকে তকতকে করে বাধানো পুস্তকে আমার কোনো আপত্তি নেই। দপ্তরিকে আসল গ্ৰন্থকার বলে ভুল না করলেই খুশি হই। আমরা যেন ভুলে না। যাই যে, লেখকের কৃতিত্ব মলাটে শুধু চাকা পড়ে । জীৰ্ণ কাগজে, শীর্ণ অক্ষরে, ক্ষীণ কালিতে ছাপানো একখানি পদকল্পতরু “যে শত শত তকতকে ঝকঝকে চকচকে গ্রন্থের চাইতে শতগুণ আদরের সামগ্ৰী ।