পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বীরবলের হালখাতা হয়ে থাকে। এ-সকল উপায়ে যে বইয়ের কাটতির কতকটা সাহায্য করে সে-বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেইসঙ্গে বাধাও যে দেয় সে ধারণাটি বোধ হয় বিক্রেতাদের মনে তত স্পষ্ট নয়। প্রথমত, বিশখানি বইয়ের যদি একসঙ্গে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং তারা প্ৰতিখানিকেই ধাদ সর্বশ্রেষ্ঠ বলা হয়, তা হলে তার মধ্যে কোনখানি যে কেনা উচিত, সে-বিষয়ে অধিকাংশ পাঠক মনস্থির করে উঠতে পারে না। অপরাপর মালের একটি সুনির্দিষ্ট শ্ৰেণীবিভাগ আছে। বিজ্ঞাপনেই আমাদের জানিয়ে দেয় যে, তার মধ্যে কোনটি পয়লা নম্বরের, কোনটি দোসর নম্বরের, কোনটি তেসরা নম্বরের ইত্যাদি ; এবং সেই ইতরবিশেষ-অনুসারে দামেরও তারতম্য হয়ে থাকে । সুতরাং সে-সব মাল কিনতে ক্রেতাকে বঁাশবনে-ডোমকানা হতে হয় না, প্ৰত্যেকে নিজের অবস্থা এবং রুচি অনুসারে নিজের আবশ্যকীয় জিনিস কিনতে পারে। কিন্তু বই সম্বন্ধে এরূপ শ্রেণীবিভাগ করে বিজ্ঞাপন দেওয়া সম্ভব নয় ; কেননা, যদিচ সাহিত্যে ভালোমন্দের তারতম্য অগাধ, তবুও কোনো লেখক তঁর লেখা যে প্ৰথমশ্রেণীর নয়, এ কথা নিজমুখে সমাজের কাছে জাহির করবেন। না । সুতরাং বিজ্ঞাপনের উপর আস্থা স্থাপন করে, হয় আমাদের বিশখানি বই একসঙ্গে কিনতে হয়, নয়। কেনা থেকে নিরস্ত থাকতে হয়। ফলে দাড়ায় এই যে, বই বিক্রি হয় না । কেননা, যার বিশখানি বই কেনবার সংগতি আছে, তঁর বিশ্বাস যে সাহিত্য নিয়ে কারবার করে শুধু লক্ষ্মীছাড়ার দল। অধমূল্যে এবং সিকিমূল্যে বিক্রি করবার দোষ যে, লোকের সহজেই সন্দেহ হয় যে বস্তাপচা সাহিত্যই শুধু ঐ উপায়ে ঝেড়ে ফেলা হয়। পয়সা খরচ করে গোলাম-চোর হতে লোকের বড়ো-একটা উৎসাহ হয় না । কোনোবই ফাউ হিসেবে দেবার আমি সম্পূর্ণ বিপক্ষে। আর-পাঁচজনের বই লোকে পয়সা দিয়ে কিনবে এবং আমার বইখানি সেইসঙ্গে বিনে পয়সায় পাবে, এ কথা ভাবতে গেলেও লেখকের দোয়াতের কালি জল হয়ে আসে। লেখকদের এইরূপ প্ৰকাশ্যে অপমান করে সাহিত্যের মান কিংবা পরিমাণ দুয়ের কোনোটিই বাড়ানো যায় না। যদি কোনো বই বিনামূল্যে বিতরণ করতেই হয় তো প্ৰথম থেকে প্ৰথম সংস্করণ এইরূপ বিতরণ করা উচিত, যাতে করে পাঠকদের সঙ্গে সহজে সে বইটির পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়। উক্ত উপায়ে Tab-সিগারেট এ দেশে চালানো হয়েছে। প্ৰথমে কিছুদিন বিলিয়ে দিয়ে, তার পর দ্বিগুণ দাম চড়িয়ে সে সিগারেট আজকাল বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ; এবং এত বিক্রি বোধ হয়। অন্য-কোনো সিগারেটের নেই। বই-জিনিসটিকে ধুমপত্রের সঙ্গে তুলনা করাটাও অসংগত নয়। কারণ, অধিকাংশ বই কাগজে-মোড়া