পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

仓心 বীরবলের হালখাতা সু-মনোভাব ব্যক্ত করেন, তার চাইতে, যিনি সমাজের কু-মনোভাব ব্যক্তি করেন, তার আদর কিছু কম নয়। কিপ লিঙের বই টেনিসনের বইয়ের চাইতে কম পয়সায় বিক্রি হয় না। সুতরাং সাহিত্যব্যবসায়ীদের পক্ষে ভালো বই লেখবার চেষ্টা করবার কোনো দরকার নেই; বই যাতে খারাপ না হয়, এই চেষ্টাটুকু করলেই কাৰ্যোদ্ধার হবে। এবং কী ভালো আর কী মন্দ, তা নিণয় করতে সমাজের প্রচলিত মতামতগুলি আয়ত্ত করতে হবে। এক কথায়, ব্যাবসা চালাতে হলে যেরকমের সাহিত্য সমাজ চায়, তাই আমাদের 6छा?ाgङ श्हत - ‘নিত্য তুমি খেল যাহা, নিত্য ভালো নহে। তাহা, ভারত যেমত চাহে, সেই খেলা খেল হে’ এরূপ অনুরোধ করে যে কোনো ফল নেই, তা স্বয়ং ভারতচন্দ্ৰ টের পেয়েছিলেন- আমরা তো কোন ছার। বাংলাদেশে কিরকমের বইয়ের সবচাইতে বেশি কাটতি, সেইটি জানতে পারলে বাঙালিজাতির মানসিক খোৱাক জোগানো আমাদের পক্ষে কঠিন হবে না। শুনতে পাই, বাজারে শুধু রূপকথা, রামায়ণ-মহাভারতের আখ্যান এবং গল্পের বই কাটে। একথা যদি সত্যা হয় তো আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে বালবৃদ্ধবনিতাতেই বাংলা বইয়ের ব্যাবসা টিকিয়ে রেখেছে। আর এ কথা যে সত্য, সে বিষয়ে সন্দেহ করবার কোনো কারণ নেই ; কেননা, মানুষ সবচাইতে ভালোবাসে গল্প। আমাদের অধিকাংশ লোকের জীবনের ইতিহাস সম্পূর্ণ ঘটনাশূন্য, অর্থাৎ আমাদের বাহিক কিংবা মানসিক জীবনে কিছু ঘটে না। দিনের পর দিন আসে, দিন যায়। আর সে-সব দিনও একটি অপরটির যমজ ভ্রাতার ন্যায়। বিশেষত এ দেশে যেমন রাম না জন্মাতে রামায়ণ লেখা হয়েছিল, তেমনি আমরা না জন্মাতেই আমাদের জীবনের ইতিহাস সমাজ-কর্তৃক লিখিত হয়ে থাকে। আমরা শুধু চিরজীবন তার আবৃত্তি করে যাই। সেই আবৃত্তির এখানেওখানে ভুলভ্রান্তিটুকুতেই পরস্পরের ভিতর যা বৈচিত্ৰ্য। কিন্তু যন্ত্রবৎ চালিত হলেও মানুষ এ কথা একেবারে ভুলে যায় না যে, তারা কলের পুতুল নয়- ইচ্ছাশক্তিবিশিষ্ট স্বাধীন জীব। তাই নিজের জীবন ঘটনাশূন্য হলেও অপর লোকের ঘটনাপূর্ণ জীবনের ইতিহাস চর্চা করে মানুষ সুখ পায় । অন্যরূপ অবস্থায় পড়লে নিজের জীবন ও নিতান্ত একঘেয়ে না হয়ে অপূর্ব বৈচিত্ৰাপূৰ্ণ হতে পারত, এই মনে ক’রে আনন্দ অনুভব করে। মানুষের উপবাসী হৃদয়ের ক্ষুধা মেটাবার প্রধান সামগ্রী হচ্ছে গল্প, তা সত্যই হোক আর মিথ্যাই হোক। স্ত্রী-সংগ্ৰহ করবার জন্য আমাদের ধনুৰ্ভঙ্গ ও করতে হয় না, লক্ষ্যভেদও। করতে হয় না, সেইজন্যই আমরা দ্ৰৌপদী’স্বয়ংবর এবং রামচন্দ্রের বিবাহের কথা শুনতে ভালোবাসি। আমাদের বাড়ির ভিতর ‘কুন্দ’ও ফোটে না এবং বাড়ির বাহিরে