পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গসাহিত্যের নবযুগ &ልግ আর দৈন্য ঘুচিবে না। তাই আমরা অহৰ্নিশি কাব্যে ভাবপ্রকাশ করতে প্ৰস্তুত। ঐ ভাবপ্রকাশের অদম্য প্ৰবৃত্তিটিই আমাদের সাহিত্যে সকল অনার্থের মূল হয়ে দাড়িয়েছে। আমার মনোভাবের মূল্য আমার কাছে যতই বেশি হােক-না, অপরের কাছে তার যাকিছু মূল্য সে তার প্রকাশের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। অনেকখানি ভাব মরে একটুখানি ভাষায় পরিণত না হলে রসগ্রোহী লোকের নিকট তা মুখরোচক হয় না। এই ধারণাটি যদি আমাদের মনে স্থান পেত, তা হলে আমরা সিকি পয়সার ভাবে আত্মহারা হয়ে কলার অমূল্য আত্মসংযম হতে ভ্ৰষ্ট হতুম না। মানুষমাত্রেরই মনে দিবারাত্র নানারূপ ভাবের উদয় এবং বিলয় হয়- এই অস্থির ভাবকে ভাষায় স্থির করবার নামই হচ্ছে রচনাশক্তি। কাব্যের উদ্দেশ্য ভাব প্ৰকাশ করা নয়, ভােব উদ্রেক করা । কবি যদি নিজেকে বীণা হিসেবে না দেখে বাদক হিসেবে দেখেন, তা হলে পরের মনের উপর আধিপত্য লাভ করবার সম্ভাবনা তঁর অনেক বেড়ে যায়। এবং যে মুহুর্ত থেকে কবিরা নিজেদের পরের মনোবীণার বাদ কহিসেবে দেখতে শিখবেন, সেই মুহুর্ত থেকে তঁরা বস্তুজ্ঞানের এবং কলার নিয়মের একান্ত শাসনাধীন হবার সার্থকতা বুঝতে পারবেন। তখন আর নিজের ভাববস্তুকে এমন দিব্যরত্ন মনে করবেন না যে, সেটিকে আকার দেবার পরিশ্রম থেকে বিমুখ হবেন। অবলীলাক্রমে রচনা করা আর অবহেলাক্রমে রচনা করা যে এক জিনিস নয়, এ কথা গণধর্মাবলম্বীরা সহজে মানতে চান না- এই কারণেই এত কথা বলা । আমার শেষ বক্তব্য এই ষে, ক্ষুদ্রত্বের মধ্যেও যে মহত্ত্ব আছে, আমাদের নিত্যপরিচিত লৌকিক পদার্থের ভিতরেও যে অলৌকিকতা প্রচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে; তার উদ্ধারসাধন করতে হলে, অব্যক্তকে ব্যক্ত করতে হলে, সাধনার আবশ্যক ; এবং সে সাধনার প্রক্রিয়া হচ্ছে, দেহমনকে বাহাজগৎ এবং অন্তর্জগতের নিয়মাধীন করা । যার চোখ নেই, তিনিই কেবল সৌন্দর্ধের দর্শনলাভের জন্য শিবনেত্রী হন ; এবং যার মন নেই, তিনিই মনস্বীতা লাভের জন্য অন্যমনস্কতার আশ্ৰয় গ্ৰহণ করেন। নব্যলেখকদের নিকট আমার বিনীত প্রার্থনা এই ষে, তারা যেন দেশী বিলেতি কোনোরূপ বুলির বশবর্তী না হয়ে, নিজের অন্তর্নিহিত শক্তির পরিচয় লাভ করবার জন্য ব্ৰতী হন । তাতে পরের না হোক, অন্তত নিজের উপকার করা হবে । उत्रबि >७२ ●