পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বীরবলের চিঠি (A আপনি জানেন যে, লেখকমাত্রেরই একটি বিশেষ ধরন আছে, সেই নিজস্ব ধরনে রচনা করাই তার পক্ষে স্বাভাবিক এবং কর্তব্য। পরের ঢঙের নকল করে শুধু সঙ। ষা লিখতে আমি আনন্দ লাভ করি নে তা পড়তে যে পাঠকে আনন্দ লাভ করবেন, যে লেখায় আমার শিক্ষা নেই সে লেখায় যে পাঠকের শিক্ষা হবে, এত বড়ো মিথ্যা ? কথাতে আমি বিশ্বাস করি নে। আমার দেহমনের ভঙ্গিটি আমার চিরসঙ্গী, সেটিকে ত্যাগ করা অসম্ভব বললেও অত্যুক্তি হবে না। সমালোচকদের তাড়নায় লেখার ভঙ্গিটি ছাড়ার চাইতে লেখা ছাড়া ঢের সহজ ; অথচ সমালোচকদের মনোরঞ্জন করতে হলে হয়তো আমার লেখার ঢঙে বদলাতে হবে । আমার কলমের মুখে অক্ষরগুলো সহজেই একটু বাকা হয়ে বেরোয়। আমি সেগুলি সিধে করতে চেষ্টা না ক’রে যেদিকে তাদের সহজ গতি সেই দিকেই ঝোক দিই। কিন্তু এর দরুন আমার লেখা এত বঙ্কিম হয়ে উঠেছে যে, তা ফারসি বলে কারো ভ্রম হতে পারে- এ সন্দেহ আমার মনে কখনো উদয় হয় নি। অথচ আমার বাংলা যে কারো কারো কাছে ফারসি কিংবা আরবি হয়ে উঠেছে, তার প্রমাণ মানসীতেই পাওয়া যায়। আমি নোবেল প্ৰাইজ নিয়ে যে একটু রসিকতা করবার প্ৰয়াস পেয়েছিলুম, মানসীর সমালোচক তা তত্ত্বকথা হিসাবে অগ্ৰাহ করেছেন। যদি কেউ রসিকতাকে রসিকতা বলে না বোঝেন, তা হলে আমি নিরুপায় ; কারণ তর্ক করে তা বুঝানো যায় না। যে কথা একবার জমিয়ে ৰলা গেছে, তার আর ফেনিয়ে JJ । b८ 5 ।। এ অবস্থায় যদি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি যে, আমার কপালে অৱসিকে রসানিবেদন ‘মা লিখ, মা লিখ, মা লিখ’, তা হলে সমালোচকেরাও আমাকে বলবেন, ‘মা লিখ, মা লিখ, মা লিখ” । এদের উপদেশ অনুসারে রসিকতা করার অভ্যাসটা ত্যাগ করতে রাজি আছি, যদি কেউ আমাকে এ ভরসা দিতে পারেন যে সত্যকথা বললে এরা তা রসিকতা মনে করবেন না । সে ভরসা কি আপনি দিতে পারেন ? লোকে বলে সাহিত্যের উদ্দেশ্য, হয় লোকের মনোরঞ্জন করা, নয় শিক্ষা দেওয়া । আমার বিশ্বাস সাহিত্যের উদ্দেশ্য দুই নয়, এক। এ ক্ষেত্রে উপায়ে ও উদ্দেশ্যে কোনো প্ৰভেদ নেই। এই শিক্ষার কথাটাই ধরা যাক। সাহিত্যের শিক্ষা ও স্কুলের শিক্ষা এক নয়। সাহিত্যে লেখক ও পাঠকের সম্বন্ধ গুরুশিষ্যের সম্বন্ধ নয়, বয়ষ্ঠের সম্বন্ধ। সুতরাং সাহিত্যে নিরানন্দ শিক্ষার স্থান নেই। অপর দিকে, যে কথার ; ভিতর সত্য নেই, তা ছেলের মন ভোলাতে পারে। কিন্তু মানুষের মনোরঞ্জন করতে । is a