পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 বীৱবলের হালখাতা পন্থকে হিল্লোলে ও কল্লোলে ভরপুর করে তুলতে হলে মধ্য-অনুপ্রাসের ঘনঘাট আবশ্যক। সে কবিতার সঙ্গে সততসঞ্চরমান নবজলধর পটলের সংযোগ করিয়ে দিতে হয়, এবং তার চলোমির গতি যাদ,পতিরোধ ব্যতীত অন্য কোনোরূপ রোধ মানে না। আমার সরস্বতী হচ্ছেন প্ৰাচীন সরস্বতী, শুস্কা না হলেও ক্ষীণা ; দামোদর নন যে, শব্দের-বন্যায় বাংলার সকল ছাদবধ ভেঙে বেরিয়ে যাবেন । অতএব মিলের অভাববশতই আমাকে ক্ষান্ত থাকতে হচ্ছে। অবশ্য দরশ পরশ সরস হরুষ প্ৰভৃতি শব্দকে আকার দিয়ে বরষার সঙ্গে মেলানো যায়। কিন্তু সে কাজ। রবীন্দ্ৰনাথ আগেই করে বসে আছেন। আমি যদি ঐ-সকল শব্দকে সাকার করে ব্যবহার করি, তা হলে আমার চুরি বিদ্যে ঐ আকারেই ধরা পড়ে যাবে। ঐরূপ শব্দসমূহ আত্মসাৎ করা চৌর্যবৃত্তি কি না, সে বিষয়ে অবশ্য প্ৰচণ্ড মতভেদ আছে। নব্যকবিদের মতে, মাতৃভাষা যখন কারো পৈতৃকসম্পত্তি নয়, তখন তা নিজের কাৰ্যোপযোগী করে ব্যবহার করবার সকলেরই সমান অধিকার আছে। ঈষৎ বদল-সদল করেছেন বলে রবীন্দ্ৰনাথ ও-সব কথার আর কিছু পেটেণ্ট নেন নি যে, আমরা তা ব্যবহার করলে চোর-দায়ে ধরা পড়ব- বিশেষত যখন তাদের কোনো বদলি পাওয়া যায় না । যে কথা একবার ছাপা হয়ে গেছে, তাকে আর চাপা দিয়ে রাখবার জো নেই ; সে যার-তার কবিতায় নিজেকে ব্যক্তি করবে। নব্যাকবিদের আরএকটি কথা বলবার আছে, যা বিশেধ প্ৰণিধানযোগ্য। সে হচ্ছে এই যে, রবীন্দ্ৰনাথ যদি অনেক কথা আগে না ব্যবহার করে ফেলতেন, তা হলে পরবর্তী কবিরা তা ব্যবহার করতেন। পরে জন্মগ্রহণ করার দরুন সে সুযোগ হারিয়েছি বলে আমাদের যে চুপ করে থাকতে হবে, সাহিত্যজগতের এমন-কোনো নিয়ম নেই। এ মত গ্ৰাহ করলেও বর্ষার বিষয়ে কবিতা লেখার আর-একটি বাধা আছে। কলম ধরলেই মনে হয়, মেঘের সম্বন্ধে লিখব আর কী ছাই ? বর্ষার রূপগুণ সম্বন্ধে যা-কিছু বক্তব্য ছিল, তা কালিদাস সবই বলে গেছেন, বাকি যা ছিল তা রবীন্দ্রনাথ বলেছেন। এ বিষয়ে একটি নূতন উপমা কিংবা নূতন অনুপ্রাস খুঁজে পাওয়া ভার। যদি পরিচিত সকল বসনভূষণ বাদ দিয়ে বর্ষার নগ্নমূর্তির বর্ণনা করতে উদ্যত হই, তা হলেও বড়ো সুবিধে করতে পারা যায় না। কারণ, বর্ষার রূপ কালো, রস জোলো, গন্ধ পঙ্কজের নয়- পঙ্কের, স্পর্শ ভিজে, এবং শব্দ বেজায় । সুতরাং যে বর্ষা আমাদের ইন্দ্ৰিয়ের বিষয়ীভূত, তার যথাযথ বর্ণনাতে বস্তুতন্ত্রতা থাকতে পারে। কিন্তু কবিত্ব থাকবে কি না, তা বলা কঠিন । কবিতার যা দরকার এবং যা নিয়ে কবিতার কারবার, সেইসব আনুষঙ্গিক