পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/১৬৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বৌদ্ধ সাধকের আদর্শ

দুর্গতি বর্ণনাতীত। তাহারা তথাগতকে স্বীকার করে না, তাঁহারা মঙ্গলকর উপদেশ গ্রাহ্য করে না, সাধকদের প্রতিও তাহাদের শ্রদ্ধা নাই। এই ভাবনার প্রথম অভ্যুদয়ে বোধিসত্ত্বের চিত্ত শোকান্ধকারে আচ্ছন্ন হয়; সেই শোক মন্দীভূত হইবামাত্রই জীবের সেবার জন্য তাঁহার হৃদয়ে অবিচলিত সাধু সঙ্কল্প জাগিয়া উঠে, তিনি তখন সকল জীবের অবিদ্যার বোঝা গ্রহণ করিয়া সকলের জন্য নির্ব্বাণ সাধনায় প্রবৃত্ত হইয়া থাকেন; তাঁহার বোঝা যতই ভারী হউক না কেন, সঙ্কল্পের সুদৃঢ় বর্ম্মে সমাবৃত হৃদয় কদাচ দমিয়া যায় না। তাঁহার প্রজ্ঞা তাঁহার করুণা তাঁহার মৈত্রী তাঁহার সুকৃতি সমস্তই অনন্তজীবের হিতসাধনে উৎসৃষ্ট।

 কি ব্রত গ্রহণ করিয়া উদ্বুদ্ধচিত্ত নবীন বোধিসত্ত্ব সাধনায় প্রবৃত্ত হইয়া থাকেন সপ্তম শতাব্দীর বৌদ্ধগ্রন্থকার শান্তিদেব তৎপ্রণীত বোধিচর্য্যাবতার গ্রন্থে তাহার বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করিয়াছেন। তথায় উক্ত হইয়াছে যে, বোধিসত্ত্ব এইরূপ সঙ্কল্প করেন:—বুদ্ধদেব আরাধনা করিয়া, তাঁহাদের শরণাপন্ন হইয়া, স্বকৃত পাপ স্বীকার করিয়া আমি যে পুণ্য অর্জ্জন করি তাহা জীবের হিতে ও বোধিলাভের আনুকূল্যে ব্যয়িত হউক। যাহারা ক্ষুধার্ত্ত আমি তাহাদের অন্ন, যাহারা তৃষিত আমি তাহাদের পানীয় হইতে ইচ্ছা করি। আমি আমাকে আমার বর্ত্তমান ও জন্মজন্মান্তরের ভাবী সত্তাকে জীবকল্যাণে উৎসর্গ করিলাম। পূর্ব্ববর্ত্তী বুদ্ধগণ যে ভাবের বশবর্ত্তী হইয়া ব্রত গ্রহণ করিয়াছিলেন, আমি আপনাকে তাহাদের নিকটে অশেষ ঋণী মনে করিয়া সেই ভাবের অনুবর্ত্তী হইয়া সমগ্র জীবের নির্ব্বাণ সাধনায় প্রবৃত্ত হইলাম।

১৩১