পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/১৬৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বুদ্ধের জীবন ও বাণী

করিয়া তিনি যখন দিব্যচক্ষু দ্বারা ধর্ম্মদৃষ্টি দ্বারা সমস্ত প্রত্যক্ষ করেন তখনই জীবের প্রতি প্রেমে করুণায় তাঁহার হৃদয় পূর্ণ হইয়া উঠে। এই প্রীতি এই করুণা সাধারণ মানবের নাই বলিয়া ধর্ম্মপদ ইহাকেই “অমানুষী রতি” বলিয়া থাকিবেন।

 ধ্যানপ্রভাবে সাধকের চিত্ত যখন প্রশান্ত হয়, এবং বৈরাগ্যবলে তাঁহার মন যখনি নির্ব্বিকার হয়—তখনই নিত্য সত্যের সহিত তাঁহার সাক্ষাৎকার ঘটে; অর্থাৎ জ্ঞান সূর্য্যের উদয়ে তখন অবিদ্যার অন্ধকার বিদূরিত হয়। এই সময়ে বৌদ্ধ সাধক চারিটি আর্য্য সত্য প্রত্যক্ষ করেন। তিনি তখন সুস্পষ্ট বুঝিয়া থাকেন, দুঃখ কি? দুঃখ কেমন করিয়া উৎপন্ন হয়? দুঃখের নিবৃত্তি কিরূপ? এবং দুঃখ দূর করিবার উপায় কি? যে ব্যক্তি নিম্ন ভূমিতে বিচরণ করে চারিদিকের সংকীর্ণ সীমা তাহার দৃষ্টি রোধ করিয়া রাখে, কিন্তু যখনই সে অত্যুচ্চ পর্ব্বতের শৃঙ্গদেশে দণ্ডায়মান হয় তখনই তাহার দৃষ্টির প্রসার বর্দ্ধিত হয়। সাধনার ক্ষেত্রে একথা সত্য। মানব যতদিন জরা ব্যাধি মৃত্যুর লীলাভূমির মধ্যে বিচরণ করেন ততদিন অহংকারের গণ্ডী তাহার দৃষ্টি আবদ্ধ করিয়া রাখিবেই কিন্তু যখন তিনি ধ্যানের উচ্চ চূড়ায় আরোহণ করিয়া নিম্নক্ষেত্রে এই সকলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন তখনই এই জরাব্যাধির মৃত্যুর সত্য রূপ তাঁহার জ্ঞানগম্য হইয়া থাকে। যিনি দুঃখের মধ্যে নিমজ্জিত, দুঃখের জ্বালা তিনি অনুভব করেন সত্য, কিন্তু দুঃখের খাঁটি চেহারা তিনি দেখিতে পান না। সাধক দুঃখের উর্দ্ধে উন্নীত হইয়াই দুঃখের সত্যমূর্ত্তি দর্শন করেন। ইহাই তাঁহার নির্বাণ লাভ।

১৩৬