পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/১৭০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বৌদ্ধ সাধকের নির্ব্বাণ

 স্থূলতঃ বৌদ্ধ সাধকের নির্ব্বাণ, বাসনার নির্ব্বাণ—সংস্কারের নির্ব্বাণ, দুঃখের নির্ব্বাণ। কিন্তু এই নির্ব্বাণ কেবলমাত্র বিনাশ নহে,—কারণ মানব ভ্রান্তির হাত হইতে অব্যাহতি লাভ করিয়াছেন মাত্র; সাধনার পূর্ব্বে তিনি নিম্নভূমিতে অবস্থিত ছিলেন বলিয়া যাহা তাঁহার প্রত্যক্ষগোচর ছিল না, সাধনা দ্বারা উর্দ্ধে অবস্থিত হইয়াছেন বলিয়া তাহা সত্যরূপে তাঁহার দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছে এইমাত্র। বৈজ্ঞানিক তাঁহার আলোক যন্ত্র ঘুরাইয়া-ফিরাইয়া যখন একখানি পটের উপরে আলোকপাত করেন তখন তাহার উপরে নানা। চিত্র প্রতিবিম্বিত হইয়া থাকে, অনন্ত আকাশে আলোকপাত করেন তখন তাহার উপরে নানা চিত্র প্রতিবিম্ব দৃষ্টিগোচর হয় না। মানবের আমিত্বও এইরূপ একখানি সমীপবর্ত্তী স্থূল পটমাত্র, উহারই উপরে নানা দুঃখবেদনার ছবি প্রতিবিম্বিত হইয়া থাকে, কিন্তু তাহার বুদ্ধি যখন স্থূল আমিত্বকে অতিক্রম করিয়া অসীমে মিশিয়া যায় তখন আর তাহার দুঃখ বোধ থাকে না। এইরূপ আমিত্বের বিলোপ ঘটিলেই সাধক দুঃখ হইতে মুক্তি লাভ করেন। ইহাই নির্ব্বাণ। এই নির্ব্বাণকে কেবলমাত্র বিনাশ বলা চলে না; কারণ সাধকের চিত্ত আমিত্বের সীমা হইতে মুক্তি লাভ করিয়া অসীমের মধ্যে নিমজ্জিত হইল। সমস্ত বাধা ও বিকার দূরীভূত হওয়ায় তাহার চিত্ত এখন সর্ব্বাঙ্গীন স্বাধীনতা লাভ করিল, ইহাই মুক্তি ইহাই নির্ব্বাণ, ইহা বিনাশ নহে।

 বৌদ্ধদার্শনিকগণ নানাদিক দিয়া নানাভাবে নির্ব্বাণ রহস্য আলোচনা করিয়াছেন, সেই উচ্চ তত্ত্ব আমাদের আলোচনার বিষয় নহে। নির্ব্বাণপ্রাপ্ত সাধকের অবস্থা কিরূপ হয় তাহাই আমাদের আলোচ্য বিষয়। ধম্মপদ বলেন,—সাধক বুদ্ধির স্থৈর্য্য সম্পাদন

১৩৭