পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/৩৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বৈরাগ্যসঞ্চার

পিতার নিকটে নিজের অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলেন। রাজার আদেশে নগর, পত্রে পুষ্পে পতাকায় ও মঙ্গলকলসীতে সুসজ্জিত হইল। সারথি ছন্দককে লইয়া রথারোহণে সিদ্ধার্থ ভ্রমণে চলিলেন। এই সময়ে তিনি প্রথমদিনে পলিতকেশ শিথিলচর্ম্ম কম্পিতপদ জরাজীর্ণ বৃদ্ধ, দ্বিতীয় দিনে শুষ্ক শীর্ণ বিবর্ণ চলৎশক্তিহীন রোগী, এবং তৃতীয়দিনে এক মৃতদেহ দেখিতে পাইলেন।

 চরিত-আখ্যায়কগণ ঐ তিনদিনেব মনোহর বিস্তৃত বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। উক্ত বর্ণনা পাঠ করিলে ইহা অনায়াসেই হৃদয়ঙ্গম হয় যে, জরা ব্যাধি ও মৃত্যুর অপরিহার্য্য দুঃখ এই সময়ে সিদ্ধার্থকে ব্যাকুল করিয়া তুলিয়াছিল; কিন্তু এই সকল অতিরঞ্জিত আখ্যানগুলিকে সর্ব্বাংশে সত্য বলিয়া স্বীকার করা যায় না। সিদ্ধার্থ ঊনত্রিশ বৎসর বয়সে গৃহত্যাগ করেন, ঐ সময়পর্য্যন্ত তিনি জরা ব্যাধি ও মৃত্যু সম্বন্ধে শিশুতুল্য অজ্ঞ ছিলেন একথা শ্রদ্ধেয় নহে। তীক্ষ্ণধী ও স্বভাববিরাগী সিদ্ধার্থকে তাঁহার পিতা ভোগসুখে আসক্ত করিবার জন্য এত দীর্ঘকাল জরা, ব্যাধি ও মৃত্যুহীন প্রমোদলোকে আবদ্ধ করিয়া রাখিতে পারিয়াছিলেন, একথা বিশ্বাসযোগ্য নহে। তবে এই সময়ে এই তিনের রহস্য তাঁহার চিত্তকে গভীরভাবে নাড়া দিয়াছিল, জীবকুলের অপরিহার্য্য অনন্তদুঃখে তাঁহার অন্তর্দ্দৃষ্টির সম্মুখে উদ্ঘাটিত হইয়াছিল, এতদিন কেবল মাঝে মাঝে যে তত্ত্ব তাঁহার মনে আসিত, এক্ষণে উহা চির দিনের জন্য গভীরভাবে তাঁহার হৃদয় অধিকার করিল। গৃহজীবনের সুখভোগ হইতে তাঁহার মন চিরদিনের জন্য ফিরিয়া আসিল। আপনাকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করিয়া তিনি জীবের দুঃখমুক্তির উপায় আবিষ্কার করিতে প্রস্তুত হইলেন।

১১