মারের হস্তের খড়্গ যদি পর্ব্বতবর মেরুর ন্যায় প্রকাণ্ড হয়, তথাপি বিগ্রহে দৃঢ়বর্ম্মিত আমাকে পরাস্ত করা দূরে থাকুক, একবিন্দু টলাইতেও পারিবে না।
মার পলায়ন করিল। সকল বাসনা, সকল সংস্কার হইতে মুক্তিলাভ করিয়া সিদ্ধার্থের চিত্ত সত্যের বিমল আলোকে পরিপূর্ণ হইল। সাধনায় সিদ্ধিলাভ করিয়া তিনি এখন “বুদ্ধ” হইলেন। তাঁহার মনশ্চক্ষুর সম্মুখে জীবের যাবতীয় দুঃখের মূলীভূত কারণ প্রকাশিত হইল। তিনি ভাবিলেন—মানব যখন জ্ঞানদৃষ্টির দ্বারা অমঙ্গল কর্ম্মের ফলাফল প্রত্যক্ষ করে, তখনই সে বাসনার আক্রমণহইতে অব্যাহতি লাভ করে। ভোগলালসা হইতেই দুঃখের উৎপত্তি হইয়া থাকে। বাসনাবিলোপের পূর্ব্বে মৃত্যু ঘটিলেও মানব শান্তিলাভ করিতে পারে না। কারণ তাহার বাঁচিয়া থাকিবার কামনা থাকিয়া যায় এবং তাহাকে পুনঃ পুনঃ জন্মগ্রহণ করিতে হয়।
বুদ্ধদেব জ্ঞাননেত্রে দেখিলেন “ধর্ম্মই সত্য, ধর্ম্মই পবিত্র বিধি, ধর্ম্মেই জগৎ বিধৃত হইয়া আছে এবং একমাত্র ধর্ম্মেই মানব ভ্রান্তি পাপ এবং দুঃখ হইতে মুক্তিলাভ করিতে পারে।”
তাঁহার প্রজ্ঞানেত্রের সম্মুখে জন্ম মৃত্যুর সকল রহস্য উদ্ঘাটিত হইল। তিনি বুঝিলেন, দুঃখ, দুঃখের কারণ, দুঃখের নিরোধ এবং দুঃখনিরোধের উপায় এই চারিটি আর্য্য সত্য—অর্থাৎ (১) জন্মে দুঃখ, জরা ব্যাধি মৃত্যুতে দুঃখ, অপ্রিয়ের সহিত মিলনে দুঃখ, প্রিয়ের সহিত বিচ্ছেদে দুঃখ; (২) তৃষ্ণা হইতেই দুঃখের উৎপত্তি হইয়া থাকে; (৩) তৃষ্ণার নিবৃত্তি হইলেই দুঃখের নিরোধ ঘটে;