পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৌরাঙ্গ ও তাহার পরিকরবর্গ ԳeS তাহা আমার অঙ্গে লেপন কর, তবে এই জ্বালা জুড়াইবে । মাধব উড়িষ্যার অভিমুখে চলিলেন, তখন পথে রাজায় রাজায় বিরোধ, পথ অতি দুৰ্গম ও বিপদসঙ্কুল। মাধবের মাত্ৰ কটিবাস সম্বল, বিপদ সম্পদ তাহার জ্ঞান নাই।-- তিনি রেমুনা নগরীতে উপস্থিত হইয়া গোপীনাথ-বিগ্ৰহ দৰ্শন করিলেন, এই বিগ্রহকে ক্ষীরাভোগ দেওয়া হয়-গোপীনাথেৰ ক্ষীরভোগ অতি প্ৰসিদ্ধ । মাধব ভাবিলেন, “যদি এই ক্ষীবের একটু আস্বাদ পাইতাম তবে আমি বৃন্দাবনে যাইয়া গোপালকে এইরূপ ক্ষীবভোগ দিতে পাবিতাম।” কিন্তু পবক্ষণেই মনে বিবাগ উপস্থিত হইল, “ছিঃ, আমাব ক্ষীর খাইবাবি জন্য জিহবাব লালসা হইযাছে।” অনুতপ্ত হইযা তিনি বাজাবের অনতিদূরে একটি বৃক্ষমূলে বসিযা ধ্যান-ধারণার্য প্ৰবৃত্ত হইলেন। তখন বেলা পড়িষ্যা গিষাছে । গোপীনাথ-মন্দিরের প্রধান পাণ্ডা দেবতাকে ভোগ দেওয়ার পাব আহারাদি সমাপ্ত করিধা ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন, এমন সমযে হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গার পর তিনি চমকিযা উঠিলেন, এবং দ্রুতগতিতে মন্দিরে যাইয়া দেখিলেন-গোপীনাথের পৃষ্ঠে তাহার উত্তরায্যের সঙ্গে কতকটা ক্ষীর বাধা আছে । তখন পাণ্ডাব দুই চক্ষু জলে পূর্ণ। তিনি উচ্চৈঃস্বাবে বলিলেন, “গোপীনাথ "আমায় বলিতেছেন, ‘আজ আমি ভোগ খাই নাই, আমা ভিন্ন যে জানে না সেই মাধব না খাইয়া বাজ (বে উপবাসী হুইযা পড়িয়া আছে, তাহার জন্য আঁচলে কতকটা ক্ষীর রাখিয়াছি, মাধবকে ক্ষীর খাওধাইয়া এস, তবে আমি ভোগ পাইব ।” ” সেই ক্ষীর খণ্ড হাতে করিয়া পাগলের মত পাণ্ড বাজাবে ছুটিলেন, “এমন ভাগ্যবান কে যাহাব জন্য স্বয়ং গোপীনাথ ক্ষীব চুরি করিয়াছেন, তাহাব দর্শনের পুণ্য কবে পাইব ? কোন সন্নাসীর নাম মাধব ?” এই চীৎকাবে মাধবেব ধ্যানভঙ্গ হইল, তিনি ধরা দিলেন । ইহাব মধ্যেই সমুদ্রতবঙ্গের মত বিপুল জনতা ঠাঙ্গাকে ঘিরিয়া ফেরি ১, ছ। তিনি সমস্ত শুনিয়া রোমাঞ্চিত কলেববে ক্ষীরপ্রসাদ পাইলেন এবং আনন্দে নৃত্য কবিতে লাগিলেন, সেই সঙ্গে সমস্ত বেমুনাবাসী লোক নৃত্য কবিতে লাগিল—– তাহারা তাহার সঙ্গ ছাড়িতে চায় না। কিন্তু প্ৰতিষ্ঠা বৈষ্ণবদের চক্ষে অতি ঘৃণার বিষয, এই প্ৰতিষ্ঠায় ভয় পাইয়া সন্ন্যাসী রেমুনা হইতে উদ্ধার পাইবাব পথ খুজিতে লাগিলেন ; রাত্রে তিনি উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটিয়া পলাইয়া বহুদূবে চলিযা গেলেন ।—এখনও বৃন্দাবনেব পাণ্ডাবা বাঙ্গলায় রচিত এই দুইটি চরণ আবৃত্তি করিয়া থাকে-“ধন্য ধন্য মহাভক্ত মাধবেন্দ্র পুরী । যার জন্য গোপীনাথ ক্ষীব করিলেন চুরি।” এই চুবির অখ্যাতি উক্ত বিগ্রহের এখনও যায় নাই –এখনও রেমুনার গোপীনাথ “ক্ষীর-চোরা গোপীনাথ” নামে পরিচিত । পুরী হইতে চন্দন লইয়া মাধবেন্দ্ৰ বৃন্দাবনে ফিরিষা আসিলেন । দাক্ষিণাত্যে শ্ৰীপৰ্ব্বতে মাধবেন্দ্ৰ পুরীর সঙ্গে নিত্যানন্দের দেখা হইয়াছিল। মাধবেন্দ্রের ভক্তি অসাধারণ -আকাশে মেঘোদয হইলেই তিনি কৃষ্ণস্ৰমে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকিতেন এবং মুছিত হইয়া পড়িতেন। “মাধবেন্দ্র পুরীর কথা অকথ্য কথন । মেঘদরশনমাত্র হয় অচেতন ৷” এই মাধবেন্দ্ৰ পুবীর রচিত শ্লোকগুলি চৈতন্য আগ্রহ সহকারে আবৃত্তি করিতেন। “যার জন্য গোপীনাথ ক্ষীর করিলেন চুরি।”