পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৌরাঙ্গ ও তঁাহার পরিকরবর্গ Qyw0 করিয়া কঁাদিয়া উঠিতেন । এই অপরাধে পণ্ডিতেরা তঁহাকে একদিন সভা হইতে তাড়াইয়া দিয়াছিলেন ; পণ্ডিত-সমাজে এই উচ্ছাস ও ভাবুকতা, অনুমোদিত হয় নাই। যেদিন সর্বপ্রথম শচী দেবীর গৃহে যাইয়া তিনি চৈতন্যের ভক্তি দেখিলেন, সেইদিন তাহার জীবনের সৰ্ব্বাপেক্ষা স্মরণীয় দিন। ইহার বহুপূর্বে একদিন তিনি যথারীতি দেবানন্দ পণ্ডিতের গৃহে শাস্ত্রব্যাখ্যা শুনিতে গিয়াছিলেন, সেইদিন সন্ন্যাসীর নির্দিষ্ট একবৎসরেব শেষ দিন, হঠাৎ তিনি মূচ্ছিত ও নিম্পন্দ হইয়া পড়িলেন। তঁহাকে মৃত মনে করিয়া সকলে তঁহাকে বাহিবে লইয়া আসিল, এমন সময়ে কোথা হইতে সেই সন্ন্যাসী আসিয়া তাহাব পৃষ্ঠে চাপড় মারিয়া বলিলেন, “শ্ৰীবাস উঠ, জগতে তোমার আরও অনেক কাজ করিবাব আছে—তুমি নব জন্ম পাইলে ।” চৈতন্তেব্য ভক্তি-লীলা প্ৰকাশ হইবাব পাবেই শ্ৰীবাসের বিস্তৃত কুন্দ-কুসুমাকীর্ণ আঙ্গিনায় বাত্রিকালে প্ৰত্যহ একটি বিশিষ্ট ভক্তদল লইয়া কীৰ্ত্তন হইত। গঙ্গাদাস পণ্ডিত বাহির দ্বারে পাহাবা দিতেন, আব্ব কোন লোক ঢুকিতে পারিতেন না। চৈতন্তেব সন্ন্যাসগ্রহণের পূর্ব পৰ্য্যন্ত এই আঙ্গিনায় যে লীলা হইত, তাহা দেবীলীলা । সে লীলার কথা এখনও লোকে ভুলিতে পাবে নাই। সেই আঙ্গিনা এখন গঙ্গাগর্ভে, কিন্তু অদূৰ্ববৰ্ত্তী একটা স্থানকে “শ্ৰীবাসেব আঙ্গিনা” নাম দিয গোস্বামীরা এখনও সেই পবিত্ৰ স্মৃতি বজায় বাখিয়াছেন । এই আঙ্গিনাব্য একদিন কীৰ্ত্তন হইতেছিল, তখন শ্ৰীবাসের একমাত্র পুত্র মাবা যায়। কিন্তু শ্ৰীবাসব বাড়ীর মেযেবা ফুকবিয়া কঁাদেন নাই। শ্ৰীবাস যথাবীতি কীৰ্ত্তনে যোগ দিয়াছিলেন, র্তাহাব মুখে, গলাব সুরে এবং ব্যবহারে কোনও বৈলক্ষণ্য দেখা যায নাই! সংকীৰ্ত্তনের শেষে মৃত শিশুকে পোডাইবার জন্য বাহির করা হইল, তখন চৈতন্য এবং তাহার সহচরীগণ সেই দুর্ঘটনাব কথা প্রথম জানিতে পাবিয়াছিলেন । শ্ৰীচৈতন্য বলিয়াছিলেন, “পুত্ৰশোক না জানিল যে আমাব প্ৰেমে । হেন তব সঙ্গ মুই ত্যজিব কেমনে” ( চৈ. ভি. মধ্য, ২৫ অ ) । একদা পুৰীতে চৈতন্য-সংকীৰ্ত্তনে শ্ৰীবাস মহাবাজ প্রতাপরুদ্রের গা ঠেলিয়া চৈতন্তোব দিকে যাইতেছিলেন, তাহাতে বাজমন্ত্রী হবিচন্দন তঁহাকে ভৎসনা কবাতে তিনি মন্ত্রীর গণ্ডে চপেটাঘাত করি যাছিলেন, মন্ত্রী ক্রুদ্ধ হওয়াতে বাজা তাহাকে প্ৰবোধ দিয়া বলি’ ছিলেন,-“তুমি রাগ কবিও না, প্ৰভুৰ প্ৰতি উহাব ভক্তির কণিকা প্ৰসাদ পাইলে আমবা। ধন্য হাইতাম।” শ্ৰীবাসের আঙ্গিনায় কীৰ্ত্তন হইত ; তিনি হরিদাস ( মুসলমান ) ও জাতিচু্যুত নিতানন্দকে দুই বৎসরকাল তাহাব বাড়ীতে স্থান দি যাছিলেন । এই কারণে ভট্টাচাৰ্য্যগণ সৰ্ব্বদা তাহার সঙ্গে শত্রুতা করিতেন। হুসেন সাহার নৌসৈন্য আসিয়া যাহাতে শ্ৰীবাসের আঙ্গিনা ও গৃহাদি ধ্বংস কবিয়া ফেলে, এইৰূপ একটা ষড়যন্ত্রও তঁাহারা করিতেছিলেন। শ্ৰীবাস ও তাহার পবিবারবর্গ চৈতন্যগত প্ৰাণ ছিলেন, তাহারা ঐসকল কথা গ্ৰাহা করিতেন না। চৈতন্য-ভাগবতকার লিখিয়াছেন, “সপরিবারে করে তারা চৈতন্তের সেবা । শ্ৰীচৈতন্য বিনা নাহি মানে দেবীসেবা।” নবদ্বীপ ছাড়া শ্ৰীবাসের কুমারহট্ট এক বিশাল প্ৰাসাদ ছিল,