পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SV বৃহৎ বঙ্গ সমাধিস্থানটি আছে, তথায় যে বকুলবৃক্ষনিম্নে বসিয়া হরিদাস জপ করিতেন, সেই বৃক্ষটি এখনও আছে, উহার কাণ্ড নাই, স্থল ত্বকের উপর গাছটি দাড়াইয়া আছে। প্ৰায় ৪৫০ বৎসবের বৃক্ষটি দেখিলেই তাহার প্রাচীনত্ব প্ৰতীয়মান হইবে। আমি এমন গাছ আর দেখি নাই । হরিদাস বৈষ্ণব-সমাজে যে আদর, শ্রদ্ধা ও পূজা পাইয়াছিলেন, তাহা অপূৰ্ব্ব। এই মুসলমান সাধু বৈষ্ণব-ব্ৰাহ্মণদের সঙ্গে শ্ৰাদ্ধাদি উপলক্ষে এক পঙুক্তিতে বসিয়া আহার করিতেন, এবং শ্রেষ্ঠ ব্ৰাহ্মণের বিদায় প্রাপ্ত হইতেন। মৃত্যুকালে হাবিদাসের বয়স কিঞ্চিন্ন্যুন ৭০ বৎসর হইয়াছিল। W. লোকচিত্ৰনাথ গোস্লামী চৈতন্যের সতীর্থ ছিলেন। ইহার পিতা পদ্মনাভ চক্ৰবৰ্ত্তী যশোর জেলায় তালগড়িযা গ্রামের অধিবাসী, ইহাব মাতার নাম সীতা । ১৪৯০ খৃষ্টাব্দে ইনি জন্মগ্রহণ করেন । যখন চৈতন্য সন্ন্যাস গ্ৰহণ কবেন, তখন ইনি চৈতন্যের সঙ্গে সঙ্গে থাকিতে চাহিয়াছিলেন, কিন্তু চৈতন্য ইহাকে বৃন্দাবনে পাঠাইলেন। বৃন্দাবনতীৰ্থ লুপ্তগৌরব হইয়া একটা অবণ্যে পরিণত হইযাছিল, এই তীর্থকে পুনরায় পূর্ব-গৌববে প্ৰতিষ্ঠিত করিবার জন্য চৈতন্য অত্যন্ত প্ৰয়াসী হইয়াছিলেন । তদনুসারে রূপ, সনাতন, ভূগর্ভ ও লোকনাথকে তিনি বৃন্দাবনে পাঠাইয়াছিলেন । যাত্রাকালে লোকনাথ বলিয়াছিলেন, “তোমার মুখদর্শনের ন্যায় তোমার সঙ্গলাভের ন্যায-—সুখ আমাব নাই-তাহা হইতে বঞ্চিত কবিয়া তুমি আমাকে এখানে পাঠাইলোঁ” ( প্রেমবিলাস ) { চৈতন্যদেব বলিলেন—“তোমাব ও আমার ভাগ্যে বিধাতা সংসাবেল সুখ লেখেন নাই ।” যখন লোকনাথ বৃন্দাবন গমন কবেন, তখন পথ অতীব বিস্ত্রসস্কুল ছিল। ১৫১০ খৃষ্টাব্দে বাদসহদেব লড়াই চলিতেছিল। ভূগর্ভ ও লোকনাথ তাজপুরেব পথ ধরিয়া পূর্ণিয গিয়াছিলেন । তথা হইতে লক্ষেী দিয়া নবদ্বীপ হইতে ২৩ দিন প্রমণেব পর তিনি বৃন্দাবনে পৌছিয়াছিলেন। লোকনাথ মহাপ্ৰভুব দাক্ষিণাত্যে মাত্রা শুলিশ তাহাব সহিত দেখা করিতে গিয়াছিলেন, পথে শুনিলেন তিনি বৃন্দাবনে ফিরিয়া আসিয়াছেন ; বৃন্দাবনে গিয়া শুনিলেন তিনি তথা হইতে চলিযা গিয়াছেন, সুতরাং তঁাহার সঙ্গে আব্ব লোকনাথের দেখা হয় নাই ; বাঙ্গলা ও উডিষ্যায় তাহাব আসা নিষিদ্ধ হইযাছিল, কারণ তিনি সন্ন্যাস গ্ৰহণ করিয়াছিলেন । লোকনাথের মত নীরব কৰ্ম্মী এবং নিলোেভ সাধু বৈষ্ণব ইতিহাসে খুব বেশী নাই। তিনি কৃষ্ণদাস কবিরাজকে চৈতন্যচরিতামৃত লেখায় অনেক সাহায্য করিয়াছিলেন, কিন্তু কবিবাজকে প্ৰতিশ্রুতি দিতে হইয়াছিল যে তিনি তঁহার পুস্তকে তঁাহাব নামোল্লেখ কবিতে পাবিবেন না । তিনি একান্তভাবে প্রতিষ্ঠাব বিরোধী ছিলেন, এজন্য কোন শিষ্য গ্ৰহণ করেন নাই । শেষকালে নবোত্তমের গভীব অনুরাগ, দৈন্য ও মিনতি এড়াইতে না পারিয়া সেই একটি মাত্ৰ লোককে তিনি মন্ত্রদীক্ষা দিয়াছিলেন ! লোকনাথ দীর্ঘজীবন বৃন্দাবনে কাটাইয়াছিলেন, তথাষ তাহার স্মৃতি এখনও বিশেষভাবে পূজিত । দাক্ষিণাত্যের কোন রাজকুলে রূপ, সনাতন ও অনুপম (অপর নাম বল্লভ) লোকনাথ গোস্বামী ।