পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৌরাঙ্গ ও তাহার পরিকল্পবর্গ qy এই তিন ভ্ৰাত জন্মগ্রহণ করেন। ইহাদের অবস্থার অবনতি হওয়াতে ইহারা ইহাদের পিতৃবন্ধু বাঙ্গলার পাঠান নৃপতিদিগের সভায় মন্ত্রিীত্ব গ্ৰহণ কবেন। সনাতন ছিলেন পরম পণ্ডিত, সংস্কৃত, পারসী ও আরবীতে তাহার মত সুপণ্ডিত সেকালে দুর্লভ ছিল। রূপের অসামান্য কবিত্বশক্তি ছিল এবং তিনিও নানাশাস্ত্ৰবিৎ ছিলেন। অধিকন্তু রূপের হাতের লেখা ঠিক মুক্তার মত ছিল। চৈতন্য কতবার তাহার সুন্দর হস্তলিপির প্রশংসা করিয়া বলিতেন, “রূপের আখরা যেন মুকুতার পাতি।” দুই ভ্ৰাতাই ব্ৰাহ্মণকুলে জন্মিলেও কতকটা মুসলমান-ধৰ্ম্মানুরাগী এবং আচার-ব্যবহারে ঠিক মুসলমানের মত হইয়া গিয়াছিলেন। ইহারা হিন্দু নাম ত্যাগ করিয়া মুসলমান উপাধিতে পরিচিত হইয়াছিলেন। সনাতন ছিলেন হুসেন সাহের প্রধান মন্ত্রী এবং রূপ সম্রাটের লেখা-পড়ার দপ্তরে ভারপ্রাপ্ত কৰ্ম্মচারী। সনাতনের উপাধি ছিল “সাকর মল্লিক” এবং রূপ “দাবির খাস” নামে পরিচিত ছিলেন। ইহাদের হিন্দু নাম ছিল অমর ও সন্তোষ। তৃতীয় ভ্ৰাতা অনুপম একটি মাত্র পুত্র (জীব গোস্বামী) রাখিয়া অকালে প্ৰাণত্যাগ করেন। ১৫১০ খৃষ্টাব্দে চৈতন্য বৃন্দাবনের পথে গৌড়ের নিকটবৰ্ত্তী রামকেলী নগরে উপস্থিত হন, তখন রূপ ও সনাতন র্তাহার সহিত সাক্ষাৎ করেন। উভয় ভ্ৰাতারই জীবনে এই স্মরণীয় দিনে যে মহৎ পরিবর্তন ঘটিয়াছিল, তাহা বৈষ্ণব-সমাজের একটা গুরুতর ঘটনা। চৈতন্য সনাতনের সঙ্গে আলাপ করিয়া মুগ্ধ হন, যদিও সেই দিনই সনাতন তঁহাকে মনুষ্য-দেবতা বলিয়া গ্ৰহণ করেন, তথাপি তাহাকে তিনি সুস্পষ্ট ভাবে উপদেশ দিতে কুণ্ঠ বোধ করেন নাই। এদিকে রামকেলীতে চৈতন্যদর্শনের জন্য লক্ষাধিক লোকের ভিড হওয়াতে হুসেন সাহ কেশব ক্ষেত্ৰী নামক এক রাজকৰ্ম্মচারীকে পাঠাইয়া দেন। একজন তরুণবয়স্ক সন্ন্যাসীকে দেখিবার জন্য এত লোক জমিয়াছে কেন—এই বিষয়ে বিস্তারিত সংবাদ জানিবার ভার কেশবের উপর ছিল । কেশব ফিরিয়া গেলে হুসেন সাহ তাহাকে চৈতন্যসম্বন্ধে অনেক প্রশ্ন করেন, চৈতন্য-চরিতামৃতে লিখিত আছে যে, এই সকল প্রশ্নের উত্তরে সম্রাট যাহা বলিয়াছিলেন তাহাতে চৈতন্যের প্রতি র্তাহার বিশেষ শ্রদ্ধা জন্মিয়াছিল, ইহাই বুঝা যায়। এই ঘটনা উপলক্ষ করিয়া সনাতন চৈতন্যকে বলিলেন, “আপনি সন্ন্যাসী, তীর্থদর্শনে যাইবেন, অথচ সহস্ৰ সহস্ৰ লোক উৎসবানন্দ করিয়া আপনার পিছনে পিছনে ছুটয়াছে—মনে হইতেছে যেন কোন রাজাধিরাজ সমারোহপূর্বক যাইতেছেন, ইহা আপনার যোগ্য নহে। দ্বিতীয়তঃ হুসেন সাহ অতি খামখেয়ালী সম্রাট, সেদিনও উড়িষ্যায় কতকগুলি দেবমন্দির ও বিগ্ৰহ ভাঙ্গিয়া আসিয়াছেন। যদিও এখন আপনার উপর তাহার ভাল ভাব-কিন্তু ইহার ভাবান্তর হইতে এক মুহূৰ্ত্ত লাগে না। এত সমারোহ যদি তিনি প্রীতির চক্ষে না দেখেন এবং কেহ যদি কুপরামর্শ দেয়, তবে আপনার প্রতি অত্যাচার হইতে পারে-সুতরাং আপনি ফিরিয়া যাউন।” চৈতন্তের সঙ্গে যে লক্ষাধিক লোক চলিয়াছিল, কীৰ্ত্তনানন্দে যে দিল্মণ্ডল নিরবধি প্ৰতিধবনিত হইতেছিল-চৈতন্যের সে দিকে মোটেই লক্ষ্য ছিল না, অনেক সময়েই তিনি এ রাজ্যে থাকিয়াও অপররাজ্যে বাস করিতেন ! সনাতনের কথায় তাহার এদিকে দৃষ্টি পড়িল, তিনি পুরী ফিরিয়া চলিলেন ।

  • 不5cm 3 郡* l