পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳՀo বৃহৎ বঙ্গ শ্ৰীকণ্ঠের বহু অনুনয়ে বাধ্য হইয়া তিনি তিনটাক মূল্যের একখানি ভোট কম্বল গায়ে পরিতে স্বীকৃত হইলেন। সনাতন কাশীতে যাইয়া চৈতন্যদেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন। শীতকাল, তবু সকল সন্ন্যাসীরই নগ্নদেহ, শীতবাত উপেক্ষা করিয়া লতাটির গায়ে শত শত ফুল ফোটে-চৈতন্য সেইরূপ ভক্তি-সরোবরের সরস পদ্মের ন্যান্য ফুটিয়া আছেন। সনাতনের লজ্জা বোধ হইল, কাবণ “ভোট কম্বলেব পানে প্ৰভু চাহে বােব বার।” কম্বলখানি এক ভিক্ষুককে দিয়া সনাতন লজ্জার হাত এড়াইলেন। কাশীতে সনাতন চৈতন্যদেবকে বলিলেন, “আমার এই দেহ-মন আপনাকে সমৰ্পণ কবিলাম।” কাশী হইতে রূপের সঙ্গে দেখা করিতে সনাতন বৃন্দাবনে গেলেন, তথা হইতে চৈতন্যের সহিত মিলিত হইবার ইচ্ছায় পুনরায় পুরীর দিকে রওনা হইলেন। পথে ঝারিখণ্ডেব বন, ছোট নাগপুর । জঙ্গলের পথে নিতান্ত অপরিস্কার ডোবার জলে স্নান করার ফলে সনাতনের সোণার কান্তি স্নান হইল। গা-ভরিয়া ফোড়া হইল— এই অবস্থায় পুরীতে আসিয়া তিনি হরিদাসের আশ্রমে অতিথি হইলেন । গা-ময় ফোড়া, তিনি চৈতন্যের সঙ্গে দেখা করিতে সাহসী হইলেন না, কিন্তু চৈতন্য র্তাহাকে আবিষ্কার করিয়া টানিয়া আনিয়া বাহিচােব করিলেন এবং ঘন ঘন আলিঙ্গন করিতে লাগিলেন । সনাতনের শবীরের রক্ত-পূযে চৈতন্যের শবীর আপ্লুত হইল। সনাতন লজ্জিত হইলেন, তিনি সঙ্কল্প করিলেন, আষাঢ় মাসে জগন্নাথের ব্যথযাত্রাব সমযে তিনি রগেবি চাকার নীচে পডিয়া প্ৰাণত্যাগ করিবেন—কারণ তিনি বিধৰ্ম্মী হইয়াছিলেন এবং তাহার শবীর ব্যাধি দুষ্ট { একদিন চৈতন্যের নিত্যসহচর জগদানন্দকে সনাতন তাহার কলঙ্কিত দেহস্পর্শে চৈতন্তের দেহেব গ্লানি হইতেছে, এই কথা অতি দুঃখিত ভাবে বলিলেন । চৈতন্য যে সনাতনকে আলিঙ্গন কবেন। ইহা জগদানন্দের ভাল লাগিত না । জগদানন্দ বলিলেন, “আপনাব মথুরায় যাওয়াই উচিত।” সেদিন মহাপ্ৰভু সনাতনকে আবাব টানিয়া আনিয়া আলিঙ্গন করাতে সনাতনের মুখ শুকাইযা গেল। চৈতন্য বলিলেন, “তুমি জগন্নাথের বগেব নীচে প্ৰাণত্যাগ করিবে ? আত্মহত্যার পপসঙ্কল্প করিয়াছ ? তুমি তো কাশীতে তোমার দেহ-মন আমাকে দিয়াছ, এই দেহেব উপব তোমার কোন অধিকাৰ নাই।” এই বলিয়া তাহাকে পুনরাব্য আলিঙ্গন করা যা চৈতন্ত্যেব দেন্ত রক্তাক্ত হইল। সনাতন লজ্জায় মরিয়া গেলেন । চৈতন্য বলিলেন, “তোমার দেহ মন্দির, উহাব স্পর্শে আমার পাপ দূর হইল।” সনাতনকে মথুৱা যাওয়ার পরামর্শ দেওয়াব জন্য তিনি জগদানন্দকে ভৎসনা করিলেন । আর একদিন বাজপথ দিয়া না। যাইয়া চৈতন্যের আহবানে সনাতন উত্তপ্ত বালুকার পথ দিয়া গিয়াছিলেন ; তাহার পায়ে ফোস্কা পডিয়াছিল। চৈতন্য বলিলেন, “রাজপথ দিয়া আস নাই কেন ?” সনাতন বলিলেন, “ব্ৰাহ্মণদের হয়ত আপত্তি হইতে পাবে।” চৈতন্য বলিলেন, “তোমার স্পর্শে দেবতারাও পবিত্ৰ হইতে পারেন, তথাপি তুমি মন্দিরের আচার-ব্যবহারের প্রতি এরূপ সতর্ক, তোমার দৈন্ত জগতে অতুল্য।” সনাতন চৈতন্যের উপদেশ লইয়া “হরিভক্তি-বিলাস’ নামক স্মৃতিগ্ৰন্থ রচনা করেন, ইহা এখন গৌড়ীয় বৈষ্ণব-সম্প্রদায়ের একমাত্র অবলম্বন। ধৰ্ম্মচু্যত ব্যক্তির রচিত এই পুস্তক পাছে সমাজে গৃহীত না হয়, এজন্য এই পুস্তক সনাতনের ইচ্ছাক্রমে