পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ʻRSq বৃহৎ বঙ্গ উত্তরাধিকারী ছিলেন। হিরণ্য ও গোবৰ্দ্ধন উভয়েই সংস্কৃত, আরবী ও পার্শীতে কৃতবিদ্য ছিলেন। গোবৰ্দ্ধনের মত দাতা এদেশে কেহ ছিল না। এরূপ প্ৰবাদ আছে,-“মৰ্ত্তে গোবৰ্দ্ধন দাতা” (সংগীত-মাধব)। বলদেব আচাৰ্য্য নামক এক শিক্ষকের উপর রঘুনাথের শিক্ষার ভার ন্যস্ত ছিল। বলদেব “যবন হরিদাসে’র প্রিয় শিষ্য ছিলেন এবং সৰ্ব্বদা চৈতন্যের গুণানুবাদ কীৰ্ত্তন করিতেন। এই সম ; হইতেই বালক রঘুনাথের মনে চৈতন্যের মূৰ্ত্তি একখানি দেবমূৰ্ত্তির ন্যায় অঙ্কিত হইয়া যায়। ১৫১০ খৃঃ অব্দে চৈতন্য সন্ন্যাস গ্ৰহণ করেন। এই বাৰ্ত্ত তড়িদগতিতে সৰ্ব্বত্র প্রচারিত হয় ! ভ্রাতৃদ্বয়ের রাজসভায় চৈতন্যের কথা প্রায়ই হইত, বালক রঘুনাথ গৃহের এককোণে বসিয়া সেই করুণ কাহিনী শুনিয়া অশ্রপাত করিতেন, তিনি ষোড়শ বৎসর বয়সে একান্ত উন্মনা হইয়া গেলেন, বাজপ্ৰাসাদ তাহার ভাল লাগিতা না, একাকী নির্জনে থাকিতেন । পিতা ও খুল্লতাত আশঙ্কা করিলেন, ছেলেটি পাছে চৈতন্তের মত পাগল হইয়া সংসার ত্যাগ কবে,- এইজন্য র্তাহার কয়েকটি সৈনিক ও দুইজন ব্ৰাহ্মণ র্তাহার কাছে সৰ্ব্বদা নিযুক্ত রাখিলেন। ব্ৰাহ্মণের গাৰ্হস্থ্য কৰ্ত্তব্যনীতি তাহাকে ভাল করিয়া শিখাইবেন—এই ভার তাহদের উপর ছিল। চৈতন্যের সন্ন্যাসের পর রঘু পিতাকে বলিলেন, তিনি চৈতন্যদেবকে দেখিতে যাইবেন । বাড়ীর সকলে প্ৰমাদ গণিলেন, এইবার বুঝি পাখী। শিকল কাটিয়া বাহির হয়। হিরণ্য ও গোবৰ্দ্ধন সহজে সম্মতি দিলেন না। কিন্তু রঘুনাথ বলিলেন, চৈতন্যকে দেখিতে না পাইলে তিনি অনাহারে প্রাণত্যাগ করিবেন। ইহার ভাব দেখিয়া তাহারা বুঝিলেন-উহা ভীতি-প্ৰদৰ্শন নহে, বালক সত্যসত্যই ঐ রূপ কিছু করিতে পারে,-কারণ চৈতন্যের নাম শুনিলেই তাহার চক্ষু অশ্রীপূর্ণ হয় এবং তিনি স্নান-ভোজন একরূপ ছাড়িয়া দিয়াছিলেন । বাধ্য হইয়া কয়েকজন অশ্বারোহী সৈন্য ও অপরাপর লোকজন সহ গোবৰ্দ্ধন রঘুনাথকে চৈতন্তের নিকট পাঠাইয়া দিলেন ; চৈতন্য তীব্রভাষায় তাহাকে গঞ্জন দিয়া বলিলেন, “তুমি অকালে এই আশ্রমে প্ৰবেশ করিতে পারিবে না।--আগে সংসারের কৰ্ত্তব্য অনাসক্ত হইয়া সম্পাদন কর-তবে সন্ন্যাসের যোগ্যতা জন্মিবে। এখন যে বৈরাগ্য দেখাইতেছ, তাহা মৰ্কট-বৈবাগ্যি, তুমি গৃহে চলিয়া যাও এবং সমস্ত কৰ্ত্তব্য সমাধা করিয়া যোগ্যতা অর্জন কর।” রঘুনাথ গৃহে ফিবিয়া আসিলেন। বাঙ্গলার প্রতি পল্লী তন্ন তন্ন করিয়া সন্ধানপূর্বক পরম সুন্দরী এক কন্যার সঙ্গে তাহার বিবাহ হইয়া গেল। পিতা ও পিতৃব্য দেখিলেন, তাহার সম্পূর্ণ ভাবান্তর হইয়াছে। তিনি সুবোধ ও শান্ত ছেলেটির মত সর্বদা তাহদের অধীন হইয়া বিষয়কৰ্ম্ম করিতেছেন। এই সময়ে সপ্তগ্রামের ভূতপূৰ্ব্ব মুসলমান শাসনকৰ্ত্তা হিরণ্য ও গোবৰ্দ্ধনের বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা কথা বাদশাহের হুজুরে জানাইল। বাদশাহ ভ্ৰাতৃদ্বয়কে ধরিয়া আনিবার জন্য ফৌজ পঠাইয়া দিলেন। র্তাহারা বাড়ী ছিলেন না-ফৌজগণ রঘুনাথকে ধরিয়া লইয়া গেল । বাদশাহ বলিলেন, “তোমার পিতা ও খুড়া সপ্তগ্রাম হইতে বহু অর্থ অন্তর্জন করে এবং আমাকে ফাকি দেয়। তুমি তাহারা কোথায় আছেন বলিয়া দেও, নতুবা ভীষণ শাস্তি পাইবে।” রঘুনাথের মুখে চোখে অপর এক রাজ্যের জ্যোতি, তাহার কণ্ঠস্বরে স্বর্গের মাধুৰ্য্য, কথায় অপূৰ্ব্ব