পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳՀ8 বৃহৎ বঙ্গ টাকা পাঠাইয়াছিলেন। তঁহাদের মনে পাছে ব্যথা লাগে, এইজন্য তিনি সেই টাকা ফিরাইয়া না দিয়া তাহা হইতে মাসিক প/০ আনা গ্ৰহণ করিয়া সেই ব্যয়ে বৎসরে একদিন চৈতন্যকে নিমন্ত্ৰণ করিয়া খাওয়াইতেন । দুই বৎসর এইরূপে চালাইয়া সেই অর্থ হইতে আর কপির্দকও গ্ৰহণ করেন নাই । চৈতন্য তারপর একদিন স্বরূপকে জিজ্ঞাসা করেন, “রঘু আর আমাকে নিমন্ত্রণ করে না কেন?” স্বরূপ বলিলেন, “রঘু বিষয়ীর অর্থ গ্ৰহণ করা পাপ মনে করে।” চৈতন্য এই কথায় মহাসন্তুষ্ট হইয়াছিলেন। রঘুনাথ যে কৃন্তু করিতেন তাহা অসাধারণ । পুরীর মন্দিরের দ্বারে দুই ঘণ্টা দাড়াইয়া এক একটি তঙুল ভিক্ষা-স্বরূপ এক এক জনের কাছে গ্রহণপূর্বক যে এক মুষ্টি ভিক্ষা পাইতেন, তাহাই একবার রাধিয়া খাইতেন। অবশেষে তাহাও ছাড়িয়া দিলেন। মন্দিরের বাহিরে যে সমস্ত পচা প্ৰসাদ পাণ্ডারা ফেলিয়া দিত, গাভীগণ তাহ খাইয়া গেলেতাহারই এক মুষ্টি বারংবার পরিষ্কার জলে ধৌত করিয়া তিনি দিনান্তে একবার খাইতেন, প্ৰায় সবদিনই উপবাসে যাইত। উপবাস এবং অল্পাহারে কৃষ্ণের প্রতি ভক্তি ও প্ৰেম প্রবল হয়-ইহাই তাহার বিশ্বাস ছিল। এই বিনয়নম মধুর প্রকৃতি সুন্দর কুমার চৈতন্যদেবের কাছে আসিতে লজ্জিত ও ভীত হইতেন। একদিন তবু স্বরূপ-দামোদরকে দিয়া তঁহাকে বলিয়া পাঠাইয়াছিলেন যে, তিনি চৈতন্যের শ্ৰীমুখের উপদেশ শুনিতে চান । চৈতন্য তঁহাকে ডাকাইয়া বলিয়াছিলেন, “আমি ধৰ্ম্মধৰ্ম্মের বিশেষ খবর জানি না। নিজ খেয়ালে চলি, এসকল বিষয়ে স্বরূপ-দামোদরই বিশেষ প্ৰাজ্ঞ, সেই তোমাকে শিক্ষা দিতেছে-তথাপি যদি আমার কথা শুনিতে চাও, “গ্রাম্য কথা না শুনিবে, গ্ৰাম্য বাৰ্ত্তা না কহিবে। ভাল না খাইবে আর ভাল না পরিবে। তৃণাদপি সুনীচেন, তরোরিব সহিষ্ণুনা। অমানিনা মানদেন কীৰ্ত্তনীয়ঃ সদা হরিঃ ॥” ” ১৯ বৎসর বয়সে রঘুনাথ পুৱীতে আসিয়াছিলেন, র্তাহার যখন ৩৫ বৎসর বয়স তখন মহাপ্রভুর তিরোধান হয। একদিন রঘুনাথ চৈতন্যকে বলিয়াছিলেন, “আর কোন ঠাকুরের কথা আমাকে বলিতেছেন ? আপনি ছাড়া আমার আর ঠাকুর নাই।” ইহার পর রঘুনাথ বৃন্দাবনে যাইয়া দীর্ঘকাল তথায় যাপন করিয়াছিলেন, তাহার রচিত অনেক সংস্কৃত পুস্তক আছে। মহাভাবস্বরূপিণী রাধার সৌন্দৰ্য্যের ব্যাখ্যা একটি কবিতায় তিনি যাহা দিয়াছেন, তাহাতে তিনি জীবাত্মার কৃষ্ণাভিসারে যাত্রার গুণরাশি ব্ৰজনায়িকাতে আরোপ করিয়াছেন,-“রাধা তারুণ্যামৃতে স্নান করিয়া লাবণ্যামৃতের তিলক পরিয়াছেন, তঁাহার। সলজ্জভঙ্গিমা নীলবাসের ন্যায় অঙ্গে ঔজ্জ্বল্য সাধন করিতেছে, তাহার প্ৰিয়ের উপর একান্ত-নির্ভরতা এবং সহচরীদের প্ৰেম অঙ্গের সুরভির। কাৰ্য্য করিতেছে, তাহার একাগ্ৰতা দীপস্বরূপ অভিসারের পথ দেখাইতেছে।” ইত্যাদিরূপ ব্যাখ্যায় রাধাকৃষ্ণ-প্রেমের খোসা ও বহিরাবরণ বাদ দিয়া তিনি প্রেমের আধ্যাত্মিক রসটি গ্ৰহণ করিয়াছেন ; (মৎকৃত “Chaitanya and his Companions” পুস্তক দ্রষ্টব্য।) তঁহার সব পুস্তকগুলিই ভক্তির ব্যাখ্যা। কৃষ্ণদাস কবিরাজের শ্ৰীচৈতন্যচরিতামৃতের অনেক উপাদান তিনি দিয়াছিলেন। জন্ম ১৪৯৮ খৃঃ, মৃত্যু ৮৬ বৎসরে, ১৫৮৪ খৃঃ ।