পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৌরাঙ্গ ও তাহার পরিকরবর্গ १३१ পণ্ডিত বিস্ময়ে নবদ্বীপের টোলের নিকট মস্তক অবনত করিয়াছিলেন ;- এই সময়ে পাণ্ডিত্যের যুগে ভাবের নবদ্বীপের ব্ৰহ্মকুলনন্দন সংস্কৃত সৰ্ব্বশাস্ত্র মন্থন করিয়া যে স্মৃতি कौन । রচনা করিয়াছিলেন, তাহা বাঙ্গলাদেশে এখনও কোটী কোটী হিন্দুর একমাত্র অবলম্বন -এই সময়ে অনাগমবাগীশ তান্ত্রিক ধৰ্ম্মের সমুন্নত ব্যাখ্যা দ্বারা তান্ত্রিক অনুষ্ঠানগুলির গৃঢ়মৰ্ম্ম সকলকে বুঝাইয়া দিয়া তন্ত্রের প্রতি জনসাধারণের সশ্রদ্ধ দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া, বাসুদেব সাৰ্ব্বভৌম উড়িষ্যায বসিয়া, প্ৰকাশানন্দ সরস্বতী কাশীব বিদ্যাকেন্দ্রেব নায়ক এবং সন্ন্যাসীদিগের নেতৃস্বরূপ এবং দক্ষিণাত্যে ভারতী পোসনাই-চিন্তাজগতের কর্ণধারস্বরূপ সমস্ত হিন্দুস্থানের পূজা পাইতেছিলেন ; এই সময়ে একদিকে নবদ্বীপ অপৰদিকে পূণ্যনগবে (পুণায় ) সংস্কৃত বিস্যার যে অনুশীলন হইতেছিল তাহার একখানি বৃহৎ ইতিহাস লিখিবাব বিষয় বটে ; তখন মিথিলার দীপ নির্বাপিত, এবং নবদ্বীপেব বালকোবাও অদ্বৈতবাদেব গুঢ় মৰ্ম্ম লইয়া আলোচনা করিত-“বালকোহ ভট্টাচাৰ্য্য সনে কক্ষ করে” । চৈ, ভা, আদি ),- এই অদ্ভুত বিষ্মী ও চিন্তার অভাবনীয় প্রভাবের দিনে কেবল নাচিয়া গাহিয়া, কেবল ঢল ঢল। শতদল-প্রভ আনন্দাশ্র্যপূর্ণ একখানি সুন্দর মুখ দেখাইয়া এক তরুণ যুবক সমস্ত ভারতবর্ষকে মাতাইয়া তুলিলেন, এমন কি আকবর বাদশাহ পৰ্যন্তু ঔাহাব স্তুতিব্যঞ্জক পদ রচনা কপিলেন, ইহা কি আশ্চর্য্যের বিষয় নহে? মোটকথা চৈতন্য পণ্ডিত-শিবোমণি ছিলেন। কিন্তু তিনি টােলে যাইয়া আজীবন শাস্ত্ৰচৰ্চা করেন নাই, ভগবদন্তু অসাধারণ মেধা ও প্রতিভার বলে তিনি শাস্ত্ৰ পডিয়া যে জ্ঞান লাভ কবিয়ছিলেন, তাহ প্ৰগাঢ়, গভীব ও গ্রন্থ-কীটদিগের বিদ্যা হইতে অনেক বেশী। তিনি ভাবে মাতিয়া গিয ছিলেন সত্য, কিন্তু তঁাচার সাংসারিক জ্ঞান, সতর্কতা ও দূরদর্শন এরূপ ছিল যাহা বড় বড় সমাজ- ও ধৰ্ম্ম-সংস্কারকগণের ছিল না ; সনাতনকে দিয যখন তিনি হরিভক্তিবিলাস লিখাইয়াছিলেন, তখন তিনি পুনঃ পুনঃ তাহাকে সতর্ক কবিয়াছেন যে প্ৰত্যেক অনুশাসনের জন্য যেন শাস্ত্রীয় প্রমাণ দেওযা হয়। বহু শাস্ত্রীয় প্রমাণ তিনি নিজে কহিয়া দিছিলেন (চৈ, চা, সনাতন শিক্ষা )। বস্তুতঃ ইহা বড়ই বিস্মযেব বিষয় যে যিনি পণ্ডিতের শিৰোমণি ছিলেন, যিনি মেঘ দেখিলে মূচ্ছিত হইতেন, কৃষ্ণপ্রেমে উন্মত্ত হইয়া তরুণ তমালকে নির্জনে আলিঙ্গন করিষা থাকিতেন-“বিজনে আলিঙ্গই তরুণ তামােল, ”–এবং যাহার চক্ষের জল দ্বিতীয় হরিদ্বারের স্বষ্টি করিয়া তাঙ্গার নিভৃত প্রেমের উৎস হইতে অবিরত উছলিয়া পন্ডিত, তিনি শাস্ত্ৰ-বিচারের সময়ে একটিও ভাবের কথা বলিতেন না। বাণী যেন স্বয়ং জিহবাগ্ৰে বসিয়া তাহার শ্ৰীমুখে সৰ্ব্বশাস্ত্ৰ হইতে অবিরত প্ৰমাণ জোগাইত। যাহাবা। আজীবন কোন এক বিশেষ শাস্ত্র আলোচনা করিয়াছেন, তাহারা আশ্চৰ্য হইয়া দেখিতেন, ঠিক সেই শাস্ত্রে চৈতন্তের অন্তদৃষ্টি গভীরতর ও স্বাক্ষ্মতর ; সেই শাদের মৰ্ম্ম তিনিই বুঝিয়াছিলেন, আজীবন খাটিয়াও তীহারা সেই জ্ঞানের সীমান্তে প্ৰবেশ করিতে পারেন নাই। তিনি জানিতেন জনসাধারণ শাস্ত্রকে ত্যাগ করিয়া কোন কথা স্থায়ী ভাবে বিশ্বাস করিবে না। এজন্য তিনি তাঁহাদেস হৃদয় চোখের জলে ও