পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

98. বৃহৎ বজা পারিতে।” দুই ভ্ৰাতা বাড়ী ফিরিয়া গেল, কিন্তু তাহদের অনুতাপে রাত্রে ঘুম হইল না। রাত্ৰি থাকিতে থাকিতে তাহারা চৈতন্তের শয্যাগৃহের দ্বারে আঘাত করিয়া তাহাকে জাগাইয়া বলিল, “আপনি আমাদের ক্ষমা করুন।” চৈতন্য বলিলেন, “আমি সৰ্ব্বান্তঃকরণে তোমাদিগকে ক্ষমা করিলাম, কিন্তু তোমাদের অপরাধ তো আমার কাছে নহে, তোমরা নিতাইয়ের কাছে যাও।” নিতাই বলিলেন, “শিশু যদি পিতামাতার কাছে অপরাধ করে, তবে কি তঁাহারা তাহা গণ্য করেন-আমি তোমাদিগকে ক্ষমা করিলাম, পরন্তু আমি যদি জীবনে কোন পুণ্য করিয়া থাকি তবে তাহার ফল যেন তোমরা পাও-ইহাই আমি ভগবানের নিকট প্রার্থনা করি।” নিতাইয়ের চোখে অশ্রু ও মুখে হরিনাম এবং বাহুদ্বয় আলিঙ্গনের জন্য প্রসারিত। চৈতন্য ও নিত্যানন্দের দুই দেবমূৰ্ত্তি ভ্ৰাতৃত্যুগলের মনে চিরকালের জন্য অঙ্কিত হইয়া রহিল। কতক দিন পরে ইহারা নিত্যানন্দের নিকট আবার উপস্থিত হইল। মাধাই কঁাদিয়া তাহার পায়ে পড়িয়া বলিতে লাগিল, “ঠাকুর, তুমিত আমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছ, কিন্তু তোমার মত সাধুর গায়ে হাত দেওয়ার জন্য হৃদয়ের জ্বালা কিছুতেই কমিতেছে নাকত শত লোকের উপর যে আমরা অত্যাচার করিয়াছি তাহার অবধি নাই। অনুতাপের বৃশ্চিক-জ্বালা যে কিছুতেই কমিতেছে না, তুমি আমার পাপের বোঝা গ্ৰহণ কর।” নিত্যানন্দ তাহাদিগকে দীক্ষা দিয়া বলিলেন, “গঙ্গার ঘাটে যেসকল লোকের উপর অত্যাচার করিয়াছ, পায়ে পড়িয়া তাহদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর।” মাধাই কাহার উপর অত্যাচার করে নাই ! মাতাল হইয়া করিয়াছে, তাহা কি তাহার মনে আছে ? একখানি কোদাল হাতে সে মাটী কাটিয়া একটি ঘাট প্ৰস্তুত করিল এবং যে সকল লোক স্নানার্থ তথায় আসিত, করজোড়ে সাশ্রনেত্ৰে যাইয়া তাহদের প্রত্যেকের পা ধরিয়া ক্ষমা চাহিত । এইভাবে দুশ্চর সেবাবৃত্তি ও সাধুজীবনের দ্বারা তাহারা তাহাদের অসাধু জীবনের প্রায়শ্চিত্ত করিয়াছিল। সম্ভবতঃ ১৭২৫ খৃষ্টাব্দে নরহরি তাহার। ভক্তিরত্নাকর রচনা করেন, তখনও “মাধাইয়ের ঘাট” বিদ্যমান ছিল, এই ঘাট কোন দেশবিজয়েব স্মৃতিস্তান্ত নহে,-অপরাধ-ভঞ্জন প্ৰায়শ্চিত্তের চিরস্মরণীয় স্তম্ভ । স্বৰ্গীয় অজিতনাথ মহামহোপাধ্যায় আমাকে বলিয়াছিলেন যে তিনি এই ঘটের সামান্য অংশ তাহাব বাল্যকালে দেখিয়াছিলেন। এখন আর উহার কোন চিহ্ন নাই । এই জগাই-মাধাইয়ের জীবনের পরিবর্তনসম্বন্ধীয় যে কত গান পল্পী-কুসুমের মত বাঙ্গলার তরুচ্ছায়ার শীতল বাতাসে ভাসিযা বেড়াইতেছে, তাহার অবধি নাই। একটিতে জগাই-মাধাই যাহা বলিতেছে, তাহার ভাবাৰ্থ এই :-যারে,-জগাই-মধাই তুই শুনে আয়, গঙ্গাতীরে ঐ মধুর হরিনাম কার শ্ৰীকণ্ঠে ধ্বনিত হইতেছে, পূৰ্ব্বেতো ঐ নাম বঞ্জের মত কঠোর লাগিত, আজি নাম শুনিয়া কেন ঘন ঘন চোখের জল পড়িতেছে ? ইহার পর চৈতন্য সন্ন্যাসী হইলেন-ভট্টাচাৰ্য্যগণ র্তাহাকে প্ৰহার করিবেন, ভয় দেখাইয়াছিলেন। চৈতন্য মুকুন্দকে বলিলেন-আমি গৃহী, এইজন্য আমার মুখে ইহার নাম গ্ৰহণ করিবেন না। যাহারা আমাকে মারিতে চাহিতেছেন, কাল যাইয়া সন্ন্যাসী হইয়া