পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীনিবাস, নরোত্তম ও শ্যামানন্দ ፃ¢S) এ সম্বন্ধে বহু কথা জ্ঞাত হইবেন । মুসলমানদের মধ্যে জেলালুদ্দিন ( ১২০৭-১২৭৩ খৃঃ), হাফিজ ( ১৩০০-১৩৮৮ খৃঃ), এবং জামি ( ১৪১৪-১৪৯৩ খৃঃ ) প্রভৃতি সুকী কবি ও সাধুদিগের আধ্যাত্মিক অনুভূতি এইরূপ হইয়াছিল। শুষ্ঠামানন্দ একদিন বৃন্দাবনে এক মন্দিরে যাইয়া দেখিলেন, আরতি হইয়া গিয়াছে, পাণ্ডার চলিয়া গিয়াছেন- এমন সময়ে স্বয়ং রাধিক তথায় আসিয়া কৃষ্ণকে পরিক্রমা করিয়া নৃত্য করিতে লাগিলেন, সে কি স্বৰ্গীয় ভঙ্গী ! কি আনন্দ কি ‘গতি অতি সুলবনী’ ! শুষ্ঠামানন্দ অপালক হইয়া দেখিতে লাগিলেন, দেবনূত্যের বিরাম নাই। সমস্ত রাত্রি নিমেষের মত চলিয়া গেল। পাখীরা কাকলী করিয়া উঠিল। চমকিত হইয়া বাধিক তঁহার এক পায়ের স্বর্ণনূপুর ফেলিয়া গিয়াছেন। সমস্তটাই একটা স্বপ্ন বলিয়া উড়াইয়া দেওয়া চলিত, কিন্তু স্বর্ণনুপুরটিতে একটা খাটি সামগ্ৰী, তাহা কি কবিয়া সেখানে আসিল ? সেই নূপুবটি হাতে করিয়া যখন শ্যামানন্দ সাশ্রনেত্ৰে জীব গোস্বামীব নিকট উপস্থিত হইলেন, তখন বৃন্দাবনেৰ সমস্ত ভক্তমণ্ডলী এই অলৌকিক ব্যাপার বিশ্বাস করিয়াছিলেন, অনেক পুস্তকে এই কাহিনীটি বর্ণিত আছে। নিম্নকুলজাত হইলেও জীব গোস্বামী বিশেষ যত্নের সহিত শ্যামানন্দকে ভক্তিশাস্ত্র পড়াইয়াছিলেন। যুবকের অসামান্য মেধা ও ধাবণাশক্তি-দর্শনে জীব গোস্বামী আশ্চৰ্য্য হইয়া গিয়াছিলেন। প্রশ্নের পর প্রশ্ন কবিয়া গুরু তাহার শিষ্যের নিকট হইতে এরূপ সন্তোষজনক উত্তর পাইয়াছিলেন যে, তিনি তঁহার বিশেষ পক্ষণপাতী না হইয়া পারেন নাই। বৈধী৷ ভক্তি, বাগানুগা, স্বকীয়া ও পবকীয়া ইত্যাদি বিষয়ে প্ৰসঙ্গক্রমে তিনি শুষ্ঠামানন্দকে অনেক উপদেশ দিয়াছিলেন, তাহার সর্বশেষ উপদেশ ছিল :—“তুমি তোমার উপদেশ দেওয়ার পূর্বে ভাল করিয়া বুঝবে, তোমার শ্রোতা জড়বাদী। কিনা, যদি তাহা হয—তবে তাহাক কিছুই বলিবে না, তোমার সমধৰ্ম্মী ও চিত্তবৃত্তির অনুকূল ব্যক্তির সহিত শাস্ত্রালোচনা করিবে।” ইহার প্রথম নাম ছিল “দুঃখী”, দ্বিতীয় নাম “- ফঞ্চদাস”, তৃতীয় নাম জীব গোস্বামীর দেওয়া “শ্যামানন্দ”, এই নামই উত্তরকালে প্ৰসিদ্ধ হইয়াছিল। কোন কোন রাধা-কৃষ্ণবিষয়ক পদে ইনি ‘দুঃখী” “দুঃখিন” অথবা “দুঃখী কৃষ্ণদাস” এইরূপ নাম ভণিতায় ব্যবহার করিয়াছেন। ইনি ভাগবতের দশম ওঁ একাদশ স্কন্ধের একখানি পদ্যানুবাদ রচনা করেন, তাহার এক মাত্র পুথি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। r এই যে তিন ব্যক্তির কথা বলা হইল, ইহারাই গৌড়ীয় বৈষ্ণবধৰ্ম্মের প্রধান পাণ্ডা হইয়া পড়িয়াছিলেন। সম্পূর্ণ সপ্তদশ শতাব্দীতে বঙ্গদেশ এই তিন ব্যক্তির কীৰ্ত্তিপ্রদীপে উজ্জ্বল। সুতরাং ইহাদের সম্বন্ধে আমাদের একটু বিস্তারিত আলোচনা করিতে হইয়াছে। জনসাধারণের উপর ইহাদের যে প্রভাব হইয়াছিল, তাহার তুলনা বঙ্গদেশে বিরল। জীব গোস্বামী কৃষ্ণের প্ৰিয় বলিয়া দুঃখী কৃষ্ণদাসের উপাধি দিলেন “শ্যামানন্দ,” শ্ৰীনিবাসের উপাধি হইল আচাৰ্য্য” এবং নরোত্তমের উপাধি হইল ঠাকুর মহাশয়” । বৈষ্ণবসমাজে আচাৰ্য্য প্ৰভু বলিতে একমাত্ৰ শ্ৰীনিবাসকে ও ঠাকুর মহাশয় বলিতে শুধু নরোত্তমকে বুঝাইবে। এই তিন জনেই জীব গোস্বামীর নিকট ভক্তিশাস্ত্ৰ শিখিয়াছিলেন। তিনি