পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓd S বৃহৎ বঙ্গ আদেশ করিলেন—“আমাদের এই ভক্তিগ্রন্থগুলি লইয়া তোমরা গৌড়দেশে যাও, নতুবা শুধু বই পাঠাইলে কি হইবে-ইহাদের ব্যাখ্যা করিবে কে ?” শ্ৰীনিবাস বলিলেন—“আমরা সন্ন্যাসী, কি করিয়া আমরা গৃহে যাইব, আপনাকে ছাড়াই বা আমরা থাকিব কিরূপে ? আপনার সঙ্গ ছাড়া স্বৰ্গও সুখকর নহে । জীব উত্তব করিলেন, “সত্য নিজে পাইয়া অপরকে বিতরণ করা ইহাই মুখ্য কৰ্ত্তব্য । আমি তোমাদের গুরু । আমি তোমাদিগকে আদেশ করিতেছি, দ্বিরুক্তি করিও না ।” ১২১খানি ভক্তি গ্ৰন্থ-তন্মধ্যে সনাতনেব। হরিভক্তিবিলাস, হরিভক্তিরাসামৃতসিন্ধু, চৈতন্যচবিতামৃত, উজ্জ্বল-নীলমণি, ললিত মাধব, বিদগ্ধমাধব, দানকোলী-কৌমুদী প্রভৃতি গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণের সব্বপ্রধান বস্ত্ৰ ভাণ্ডার ছিল । একটি কাঠের বাক্সে মোমজমার আবরণে সুরক্ষিত করিয়া তাহা বড় একটা শকটে উত্তোলিত হইল । চারিটি বিশালকায় বৃষচালিত শকট ও তৎপরিচালক ১০ জন সশস্ত্ৰ ব্ৰজবাসীর সহিত সুবক সন্ন্যাসিক্ৰয় জয়পুর রাজের নিকট হইতে অনুমতিপত্ৰ লইয়া গৌডাভিমুখে যাত্রা করিলেন। পথে ছোটনাগপুরের বিশাল অরণ্য —ঝারিখণ্ড । ইহা বা তথায্য কোকিল-কলরব-মািখবিত বনাশোভা দেখিয়া মুগ্ধ হইলেন, এবং চৈতন্য একদা ঐ বনে ভক্তিত্ব আবেশে বৃক্ষ ও লতাপল্লবকে রুষঃ ভাবিয়া প্রিয়সম্বোধনপূর্বক চুটিয়া কাদিয়া বেডাইয়াছেন, সেই প্রোমেব পাগল দেবতাব কথা সৰ্ব্বত্র মনে করিয়া ইহাৱা কখনও তাহার পদব্রজের স্পশের আশায় সেই ভূমিতে লুটাইয়া পড়িতেন । বামে মগধেব প্ৰান্তভূমি, তাহারা আগু হইয়। ইটা নামক স্থানে একটা প্রশস্ত পথ দিয়া চলিলেন । এই সময়ে বনবিষ্ণুপুরের রাজা বীৰৱ হাক্ষিত্ৰৰ অতিশয় পরাক্রান্ত ছিলেন। তিনি দাসু্যবৃত্তি করিয়া স্বরাজ্যের বাহিরে নানাবিধ অত্যাচাবি করিতেন । সময়টা ছিল ১৬০০ খৃষ্টাব্দেব সন্নিহিত, পাঠান ও মোগলদের সঙ্গে যুদ্ধ চলিতেছিল! গৌড়েশ্বর প্রবল বহিঃশত্রুকে দমন করিতে ব্যস্ত, সমস্ত নৃপতিরা দেশ লুটপাট করিতেন, রাজস্ব দিতেন না, কিন্তু গৌডের বাদশাহেব মোগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধোদ্যোগ করার সময়ে, গৃহকলহ বাড়াইবার ইচ্ছা বা শক্তি ছিল না ; এইজন্য দেশে এককাপ অরাজকতা চলিয়াছিল। ব্যবহাম্বির কতকটা স্বাধীন হইয়া নানারূপ অত্যাচার করিতেন। সম্ভবতঃ কতলু খা নবাবের নিকট তিনি উত্তরকালে ১,৬৭,০ ০০২ টাকা। বাৎসরিক রাজস্ব দিতে স্বীকৃত হইয়াছিলেন, কিন্তু যে সময়েব কথা বলা হইতেছে তখনও তিনি ঐ রূপ কোন সন্ধি কবেন নাই। তাঙ্গার নিজের ১৫টি প্রধান দুর্গ ছিল এবং তঁাহার অধীন ১২ জন সামন্ত রাজাব আরও ১২টি দুর্গ ছিল। যদিও শেষে রাজস্ব দেও যাব একটা বন্দোবস্ত হইয়াছিল, কিন্তু মুরাসিদ কুলিখা এর রাজত্বের পূৰ্ব্বপৰ্য্যন্ত বনবিষ্ণুপুরের রাজারা একরূপ স্বাধীন ছিলেন। একটা শকটের পিছনে গেরুয়াধারী তিনজন সন্ন্যাসী এবং ১০ জন সশস্ত্ৰ ব্ৰজবাসীকে দেখিয়া বীরহাম্বিরের গুপ্তচরেরা মনে করল--নিশ্চয়ই এই শকট বহু ধনরত্নে বোঝাই। তারপর যখন সন্ন্যাসিগণের একজনকে জিজ্ঞাসা করা হইল যে, ইহার মধ্যে কি আছে ? তখন তিনি শাস্ত্রগ্রন্থগুলির প্রতি শ্রদ্ধার আতিশয্যে নিশ্চিন্তমনে বলিয়া ফেলিলেন বঙ্গদেশে রাজদম্যর খপ্পরে