পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Պ@ 8 বৃহৎ বঙ্গ হাতে শুষ্ঠামানন্দকে সঁপিয়া দিলেন এবং বলিলেন, “যাবৎ এই হৃতরাষ্মের সন্ধান করিতে না পারি তাবৎ আমি এখানেই থাকিব। এই গ্রন্থগুলির উদ্ধার-চেষ্টায় আমার প্রাণ গেলে তাহাও মঙ্গল।” নয়দিন পৰ্যন্ত বিষ্ণুপুরের সমীপবৰ্ত্তী স্থানগুলি ঘুরিয়া শ্ৰীনিবাস জানিলেন, সে দেশের রাজা স্বয়ং একজন দম্য সুতরাং অপহৃত পুস্তকগুলি সম্বন্ধে সেখানে কোন সন্ধান পাওয়া সহজ নহে। দশমদিনে তিনি দেওয়ালি নামক গ্রামে পৌছিলেন- এই গ্রাম বিষ্ণুপুর হইতে এক মাইল মাত্র দূরে অবস্থিত এবং যশোদা নদীর তীরবর্তী। সেইখানে কৃষ্ণবল্লভনামক এক তরুণ ব্ৰাহ্মণ যুবকের সঙ্গে তঁহার দেখা হয় ; ব্ৰাহ্মণ বটু ব্যাকরণ পড়িতেছিলেন। শ্ৰীনিবাসের সঙ্গে আলাপ করিয়া তিনি বুঝিলেন, ইহার পাণ্ডিত্য অগাধ । যুবক তঁহাকে তাহার বাড়ীতে লইয়া গিয়া সেখানে প্ৰস্তাব করিলেন যে, যদি তিনি তাহাকে ব্যাকরণ ও অলঙ্কার পড়িতে একটু সাহায্য করেন, তবে তিনি চিরকৃতজ্ঞ ও কৃতাৰ্থ হইবেন। স্বপাকে শুধু সিদ্ধ তরকারী দিয়া একবেলা দুটি ভাত খাইতেন, পরণে ছোট একখানি কটিবাস, শ্ৰীনিবাস কৃষ্ণবল্লভকে পড়াইতে লাগিলেন। চুম্বক-পাথর যেরূপ ইস্পাতকে আকর্ষণ করে, শ্ৰীনিবাসের বিষন্ন ও করুণ মূৰ্ত্তি ও অগাধ পাণ্ডিত্য কৃষ্ণবল্লভকে সেইরূপ আকর্ষণ করিল। কৃষ্ণবল্লভ রাজসভায় ব্যাসাচাৰ্য্যের ভাগবত-ব্যাখ্যা শুনিতে যাইতেন । হিন্দু রাজগণ সম্ভবতঃ সেনবংশের সময় হইতেই অপরাহে ধৰ্ম্মগ্রন্থের ব্যাখ্যা শুনিতেন, কিন্তু ধৰ্ম্মমঙ্গল কাব্যে পাওয়া যায় যে ধৰ্ম্মপাল প্ৰভৃতি রাজাও ঐ ভাবে ভাগবত-পাঠ শুনিতেন ; তাহারা বৌদ্ধ ছিলেন । ধৰ্ম্মমঙ্গলের এই উক্তি বিশ্বাস্ত নহে। পরবত্তী হিন্দু রাজারা ভাগবতের ব্যাখ্যা শুনিতেন । গ্ৰাম্য কবি প্ৰাচীন সংস্কারগুলির মধ্যে এই গোলযোগ ঘটাইয়া থাকিবেন। বীরহাম্বিধ দস্যপতি দুৰ্দান্ত রাজা হইলেও তঁহার সভাপণ্ডিত ব্যাসাচায্যের নিকট সেই দেশের চিরাগত রীতি অনুসারে অপরাহে শাস্ত্রপাঠ শুনিতেন। উৎসুক হইয়া শ্ৰীনিবাস জিজ্ঞাসা করিলেন, "ভাগবত-পাঠ কেমন শুনিলে ?” কৃষ্ণবল্লভ বলিলেন, “আমার মন আপনার পাদপদ্মে পড়িয়াছিল, আপনার সঙ্গেয় জন্য উৎকণ্ঠিত ছিলাম, তাই তাড়াতাড়ি চলিয়া আসিয়াছি।” শ্ৰীনিবাসকর্তৃক অনুরুদ্ধ হইয়া কৃষ্ণবল্লভ সেই শাস্ত্রব্যাখ্যা শুনিতে তঁহাকে পরদিন রাজসভায় লইয়া গেলেন। প্ৰথম দিন শ্ৰীনিবাস নিৰ্বাকু হইয়া সেই ব্যাখ্যা শুনিলেন । দ্বিতীয় দিন আর থাকিতে পারিলেন না, বলিলেন, “আপনি প্ৰশস্ত পথ ছাড়িয়া এ কি ব্যাখ্যা করিতেছেন !” ব্যাসাচাৰ্য্য একথার কোন উত্তর করিলেন না, তৃতীয় দিনও শ্ৰীনিবাস বলিলেন, “আপনি ভাগবত ব্যাখ্যা করিতেছেন, অথচ শ্ৰীধারকে ত্যাগ করিয়া নিজের মত স্থাপন করিতে চেষ্টা পাইতেছেন ; শ্ৰীধরের টীকা ছাড়িয়া আপনি রাসপঞ্চাধ্যায় বুঝিতেই পারিতেছেন না।” এ কথার উত্তর না দিয়া ব্যাসাচাৰ্য্য ব্যাখ্যা করিতে লাগিলেন। তখন রাজা সভাপণ্ডিতকে বলিলেন, “এই ব্ৰাহ্মণ আপনার ব্যাখ্যায় তুষ্ট নহেন, আপনি কি ভুল ব্যাখ্যা করিতেছেন?” বিরক্তির সুরে ব্যাসাচাৰ্য্য বলিলেন, “এই গৈবিকধারী যুবকের আম্পৰ্দ্ধা দেখুন, আমার ব্যাখ্যায় ভুল ধরিতে পারে এমন পণ্ডিত এদেশে কে আছে ?” শ্ৰীনিবাসের দিকে চাহিয়া বলিলেন, “আসুন, আপনি ভাগবত