পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓውb” বৃহৎ বঙ্গ শ্ৰীনিবাস বিষ্ণুপুর হইতে খেতুরীতে (রাজসাহী জেলা ) নরোত্তমের নিকট গ্রন্থগুলির উদ্ধার ও রাজার দীক্ষাদিসম্বন্ধে সমস্ত কথা জানাইয়া চিঠি পাঠাইলেন। নরোত্তম ফিরিয়া আসিলে তঁাহার পিতা কৃষ্ণানন্দ দত্ত হাতে স্বৰ্গ পাইলেন, কিন্তু নরোত্তম রাজপ্ৰাসাদে গেলেন না, তিনি তথাকার কৃষ্ণমন্দিরে রহিয়া গেলেন এবং পিতামাতাকে জানাইলেন, তিনি যে সন্ন্যাসী সেই সন্ন্যাসী থাকিবেন, গেরুয়া ছাড়িবেন না, এবং কৃষ্ণমন্দিরের যে নির্দিষ্ট ভোগ আছে, তাহা হইতে প্ৰসাদ পাইবেন। খাওয়া-দাওয়া কিংবা অন্য কোন সম্বন্ধে অনুরোধের বাডবাড়ি করিলে তিনি খেতুরী ছাডিয়া পালাইবেন। তঁহার স্থানে তাহার খুল্লতাত-ভ্ৰাতা সন্তোষ দত্ত রাজা হইয়াছিলেন । নুতন রাজা ও বৃদ্ধ কৃষ্ণানন্দ দত্ত ভয়ে আর কোন বাডিাবাড়ি করিলেন না। কিন্তু কৃষ্ণানন্দ ভিন্ন অপর সকলে নরোত্তমের রূপ দেখিয়া মোহিত হইয়া গেলেন, তাহার রাজপরিচ্ছদ নাই, শিরোভূষণ নাই, রাজদণ্ড নাই, শুধু গেরুয়া, মুণ্ডিত মস্তক ও দণ্ডকমণ্ডলু লইয়া যেন একখানি দেবমূৰ্ত্তি ঝলমল করিতেছে । সেই মূৰ্ত্তিতে এমন একটা গৌরবের ঘটা ছিল যে স্বয়ং পিতা কৃষ্ণানন্দ তীহাকে প্ৰণাম করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন। গ্রন্থোদ্ধারের সংবাদ খেতুরী রাজধানীতে ঢাকঢোল এবং অপরাপর বাদ্যযন্ত্রের উচ্চতানে এবং রজনীতে শত শত দীপের আলোকে বিঘোষিত হইয়াছিল। নবোত্তম মনে মনে ইচ্ছা করিয়াছিলেন, খেতুরীতে গৌরাঙ্গদেবের বিগ্ৰহ প্ৰতিষ্ঠা করিবেন। সেই ইচ্ছার কথা আভাসে জানিতে পারিয়া সন্তোষ দত্ত র্তাহার সমস্ত রাজভাণ্ডার মুক্ত করিয়া দিলেন, যথাসৰ্ব্বস্ব বায় করিয়া এই উৎসব সম্পন্ন করিবেন-ইহাই সঙ্কল্প করিলেন। সম্ভবতঃ ১৬০৫ খৃষ্টাব্দে এই স্মরণীয় উৎসব সম্পাদিত হইয়াছিল। এত ঘটা বৈষ্ণব-সমাজে আর হয় নাই ; পাণিহাটির দণ্ডমহোৎসবের ( ১৫০৯ খৃঃ) পর এই উৎসব বঙ্গদেশে বৈষ্ণব-সমাজের সর্বপ্ৰধান ঘটনা। সহস্ৰ সহস্ৰ বৈষ্ণব বঙ্গদেশের নানাস্থান হইতে আসিয়াছিলেন ; নিমন্ত্রণ-পত্রিকা বঙ্গদেশের সর্বত্র বিতরিত হইয়াছিল ; তাহার মৰ্ম্ম এইরূপ-“আমরা সকলের নাম জানি না, জানা সম্ভবপরও নহে। যিনি এই উৎসবে যোগ দিয়া আমাদেব উৎসব সফল করিতে ইচ্ছা! করিবেন, তিনিই দয়া করিয়া আমাদের এখানে আসিয়া আমাদিগকে অনুগৃহীত করিবেন। রবাহুত ও আহতের মধ্যে কোন পার্থক্য আমরা রাখিব না।” এইরূপ সাৰ্ব্বজনীন নিমন্ত্রণ আর কোথায়ও কখনও হইয়াছে কিনা আমরা জানি না। এই উৎসব বৈষ্ণবদিগের “মহোৎসবের” মতই উদার এবং সৰ্ব্বব্যাপী । সন্তোষ দত্ত উপস্থিত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পাথেয় দিয়াছিলেন ; সেই শত সহস্ৰ অভ্যাগতের মধ্যে একজনের উপর সকলের দৃষ্টি আবদ্ধ হইয়াছিল, শতবর্ষবয়স্ক, অতি শীর্ণ, উপবাসকৃশ, তপঃপ্রভায় উজ্জ্বলকান্তি বিশ্বজননীকল্প বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী তঁহার স্বামীর বিগ্ৰহ-প্ৰতিষ্ঠা দেখিবার জন্য খেতুরীতে উপস্থিত হইয়াছিলেন। যখন মন্দিরে স্বামীর বিগ্রহের দিকে যুক্ত করে চাহিতে চাহিতে র্তাহার দুই গণ্ড বাহিয়া অশ্রদ্ধারা বহিয়া পড়িতেছিল তখন শত শত লোকের চক্ষু অশ্রুপূর্ণ হইয়াছিল। ভূত্য ঈশানের মুখে সন্তোষ দত্ত জানিতে পারিলেন, বিষ্ণুপ্রিয়া শেষ দশায় বৃন্দাবন যাইবার ইচ্ছা! পোষণ করেন, জানিয়া তদৰ্থে গোপনে তরুণ রাজা বিষ্ণুপ্রিয়ার পাথেয় এবং ১৫০২ টাকা