পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীনিবাস, নরোত্তম ও শ্যামানন্দ *Voy ভক্তি হইল। তাহারা ছিলেন ঘোর শাক্ত ; শরৎকালে রাজবাড়ীতে বহু আড়ম্বরপূর্ণ যে দুৰ্গাপূজা হইত, তাহাতে শতসহস্ৰ মেষ ও মহিষ বলি দেওয়া হইত। কিন্তু এই সন্ত্রান্ত ব্ৰাহ্মণ-পরিবারের মনে যে পরিবর্তন হইল, তাহার ফলে বৃদ্ধ রাঘবেন্দ্ৰ হইতে আরম্ভ করিয়া রাজবাড়ীর সকলেই কায়স্থ নরোত্তমের নিকট বৈষ্ণব-দীক্ষা গ্ৰহণ করিয়া তাহার শিষ্য হইলেন । এই ঘটনা এরূপ বিস্ময়কর হইয়াছিল যে, লোকে সহসা ইহা বিশ্বাস করিতে 5ांग्र नाई। এই ঘটনার অব্যবহিত পরেই চাঁদ রায় পূর্বকৃত দুষ্কৰ্ম্মগুলির জন্য বহু অনুতাপ করিয়া গৌড়ের বাদশাহকে চিঠি লিখিলেন এবং বলিলেন, এবার বাদশাহের কৰ্ম্মচারী আসিলেই তিনি বাকী রাজস্ব সমস্ত পঠাইয়া দিবেন। পাঠান-রাজসভায় এই চিঠি লইয়া অনেক আলোচনা হইল, অধিকাংশ রাজমন্ত্রী এই চিঠির উপর নির্ভর করা অবিবেচনার কাৰ্য্য মনে করিলেন-মহা ধূৰ্ত্ত চাদ রায় কি গুপ্ত ষড়যন্ত্র করিয়া ভাল মানুষটি সাজিয়াছে তাহার ঠিকানা নাই। যুদ্ধবিগ্ৰহাদি না করিয়া এই ফন্দির জালে পা দিতে কোন রাজকৰ্ম্মচারী স্বীকৃত হইলেন না। চাঁদ রায় গেরুয়া পরেন, সংসারে ঔদাসীন্য, নিজে দুই বেলা কৃষ্ণপূজা করেন। গুরু নরোত্তম দীক্ষা দিয়া চলিয়া গেলেন। চাঁদ রায় খেতুরীর দেবমন্দিরে অগণিত মণি-মাণিক্য ও বস্ত্ৰালঙ্কার উপঢৌকন পাঠাইলেন, নরোত্তম স্বয়ং এক কপৰ্দকও গ্ৰহণ করিলেন না। নরোত্তমের যাওয়ার পর একদা চাদ রায় মাত্র ১০০ অশ্বারোহী ও ৪০ ০ পদাতিক সঙ্গে নিশ্চিন্তমনে গৌড়দ্দ্বার হইতে গঙ্গাশ্লানেৰ জন্য যাত্ৰা করিলেন। গুপ্তচরেরা গৌড়ের বাদশাহকে জানাইল-চাদ রায় অরক্ষিত অবস্থায় দূব পথে যাইতেছেন। এই সুযোগ পাইয়া গৌড়েশ্বর বহু সৈন্য পাঠাইয়া চাঁদ রায়কে বন্দী করিয়া লইয়া আসিলেন। লৌহখৃঙ্খলে আবদ্ধ, অসামান্য দৈহিক বলসম্পন্ন চাদ রায়কে সম্বোধন করিয়া বাদশাহ বলিলেন, “পাপিষ্ঠ, তোমার এত বড় বুকের পাট যে তুমি বহুকাল যাবৎ আমার রাজ্য লুট করিয়া খাইতেছ?” চাদ রায় রাজ্যোচিত মৰ্য্যাদা রক্ষা করিয়া বৈষ্ণব-দৈন্যের সঙ্গে বলিলেন, “আমি হুজুরে পূর্বেই জানাইয়াছিলাম-পূর্বকৃত দুষ্কৰ্ম্মের জন্য আমি অনুতপ্ত, আমাকে উচিত শাস্তি প্ৰদান করুন।” বাদশাহ র্তাহার গাম্ভীৰ্য্য ও সরলতা-দর্শনে কতকটা মুগ্ধ হইলেন, কিন্তু বিশ্বাস করিতে পারিলেন না। "ইহার বিচার পরে হইবে।” এই বলিয়া একটা অন্ধকার কারাগারে ইহাকে পাঠাইয়া দিলেন মাটীর নীচে কারাগার, আলোর প্রবেশপথ নাই ; দাড়াইলে ছাদে মাথা ঠেকে-দিনান্তে অতি তুচ্ছ খাদ্যের ব্যবস্থা। কিন্তু সংসারের কোলাহল হইতে এই গুহায় ঢুকিয়া-ইনি ইহাকে আশ্রমের ন্যায় পবিত্ৰ মনে করিয়া মুক্তির নিশ্বাস ফেলিলেন। তিনি সেই নিভৃত নিকেতনে সারাদিন কৃষ্ণধ্যানে রত থাকিতেন । কোন সময়ে ভাবিতেন তিনি কৃষ্ণের জন্য চন্দন অসিতেছেন এবং অতি যত্নে তাহার টিপ বিগ্রহের মাথায় পরাইয়া দিতেছেন। কখনও ভাবিতেন, তিনি তঁাহার আরতি করিতেছেন, পঞ্চপ্ৰদীপের আলোতে বিগ্ৰহ ঝলমল করিতেছে ; কখনও মনে করিতেছেন, তাহাকে ব্যাজন করিতেছেন, অথবা নৈবেদ্য সাজাইতেছেন। কখনও মনে ܡܠܬ