পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ov8. বৃহৎ বঙ্গ হইত, বনে বনে ঘুরিয়া তিনি কৃষ্ণের জন্য সদ্যঃপ্রস্ফুট ফুল চয়ন করিতেছেন, অথবা তাহার দ্বারা মাল্য রচনা করিতেছেন। এই ভাবে দিনযামিনী কোথা দিয়া কাটিয়া যাইত, তাহা তিনি জানিতেন না । মনুষ্যের হৃদয়ে যখন এই সহজ আনন্দ শতদলের মত ফুটিয়া উঠে, তখন বাসস্থান কৰ্দমাক্ত বা নিবিড় বন্ধনযুক্ত কারাগৃহ-তাহা ভাবিবার অবকাশ কোথায় থাকে ? চাদ রায়ের পিতা রাঘবেন্দ্র রায় কারাধ্যক্ষকে উৎকোচ পাঠাইয়া তাহার আহারের সুব্যবস্থা করিয়া দিয়াছিলেন। আর একজন লোক পাঠাইয়া এমন একটা সুযোগ করিয়াছিলেন, যাহাতে অনায়াসে চাদ রায় মুক্তি পাইতে পারিতেন। সেই লোক অতি গোপনে তাহার সঙ্গে দেখা করিয়া বলিলেন, “আপনি কালীবিগ্ৰহকে ফুল-বেলপাতা দিয়া পূজা করুন ; তারপর আমি আপনার বাহির হইবার ব্যবস্থা করিব।” এই বলিয়া একটি ক্ষুদ্র কালীবিগ্ৰহ উপস্থিত করিলেন। চাদ রায় বলিলেন, “কৃষ্ণ ভিন্ন আমার উপাস্ত আর কেহ নাই, এখানে মারি তাহাও ভাল-কিন্তু আমি অন্য কোন দেবের পায়ে ফুল দিব না। আমার সকল ফুল, সকল নৈবেদ্য, আমার দেহমান তাহার পায়ে বিলাইয়া দিয়াছি ; অপর কাহাকেও দিবার মত আমার কিছুই নাই। আমার পিতাকে বলিও, আমি ভাল আছি, রাজপ্রাসাদে যেরূপ ছিলাম তদপেক্ষা অনেক ভাল আছি, আমি মুক্তির আনন্দ অনুভব করিয়া দেহামনে পরম পবিত্রতা ও অপূৰ্ব্ব শান্তি অনুভব করিতেছি, আমি চুরি করিয়া পলাইয়া যাইতে চাহি না।” পিতার নিযুক্ত দূত দেখিলেন, কালীপূজা না করিলে এসম্বন্ধে কিছু করা তাহার পক্ষে নিষিদ্ধ। তিনি ফিরিয়া গেলেন । যথা সময়ে দরবারে চাদ রায়ের ডাক পড়িল । বাদশাহ বিচার করিয়া “হিস্তিপদদলিত করিয়া হত্যা করা হউক”-এই আদেশ দিলেন। চতুর্দশ, পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে সমস্ত এশিয়াতে বন্দী ও শত্রুদিগকে হস্তিদ্বারা হত্যা করার প্রথা বিশেষভাবে প্ৰচলিত ছিল । চাদ রায়ের শক্তি ছিল অসীম ; একটা বৃহৎ হস্তীকে তঁাহার দিকে ধাওয়াইয়া দেওয়া হইল। তিনি তাহার হস্তদ্বারা হাতীর শুড় ধরিয়া এমনই জোরে মোচড় দিলেন যে, হাতীটা চীৎকার করিয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটিয়া পলাইল। এই অমানুষিক বল দেখিয়া বাদশাহ বিস্মিত হইয়া চাদ রায়কে বলিলেন, “তুমি বহুদিন যাবৎ অতি তুচ্ছ খাদ্যের উপর নির্ভর করিয়া একরূপ অনশনে আছ, এ অবস্থায় তোমার এরূপ অদ্ভুত বল হইল কি প্রকারে ?” চাদ রায় প্ৰথমে কারাধ্যক্ষের জন্য অভয় চাহিয়া বলিলেন, “আমি কারাগারে উত্তম খাদ্য খাইয়াছি। কারাগারে আমি খুব ভাল ছিলাম-আমি সাংসারিক বন্ধন হইতে মুক্ত হইয়া স্বচ্ছন্দ মনে কৃষ্ণসেবা করিতে পারিয়াছি। আমার পিতা আমার মুক্তির ব্যবস্থা করিয়াছিলেন, কিন্তু কালীপূজা করিবার কথা থাকাতে আমি তাহাতে রাজী হই নাই। হুজুর আমায় মৃত্যুদণ্ড বা যে কোন দণ্ড দিবেন, আমার তাহাতে ক্ষোভ নাই। আমি কৃষ্ণে আত্মনিবেদন করিয়া ब्रिांछ् ि।।” বলিতে বলিতে চাঁদ রায়ের চক্ষু সজল হইল । Rifleft(x (stag <ref w9fâ'r cas শ্ৰীত হইলেন যে, তখনই তাহার মুক্তির আদেশ দিয়া যে সকল স্থান চাঁদ রায় বলপূর্বক দখল করিয়াছিলেন, তাহদের অধিকারও ভঁাহাকে ছাড়িয়া দিলেন ।