পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8 বৃহৎ বঙ্গ রাজাকে বলিলেন, “আপনি ধৰ্ম্মের রক্ষক, সনাতন ধৰ্ম্ম যে ঘোর কলিতে রসাতলে যাইতেছে। ব্ৰাহ্মণ শূদ্রের উচ্ছিষ্ট খাইতেছে, ইহা হইতে কি বীভৎস ব্যাপার হইতে পারে ? আপনি দেশ রক্ষা করুন।” অনেক আলোচনার পর এই ঠিক হইল যে রাজা নৃসিংহ পণ্ডিতগণসঙ্গে খেতুরী যাইয়া নরোত্তমকে তর্কযুদ্ধে আহবান করিবেন। পণ্ডিতগণ বলিলেন, “যদি সেই কায়স্থ-গুরু এই সকল অনাচার শাস্ত্ৰদ্বারা সমর্থন করিতে পারেন, তবে আমরা সকলে তঁহার নিকট মাথা মুড়াইব, নতুবা তাহাকে উপযুক্ত শাস্তি গ্ৰহণ করিতে হইবে।” পণ্ডিতেরা চলিলেন, সঙ্গে সঙ্গে তঁহাদের পড়ুয়ারাও চলিলেন, বহুশকট বোঝাই পুথি চলিল। রাজা নৃসিংহের সভাপণ্ডিত রূপনারায়ণ মধ্যস্থত করিবার জন্য সহযাত্রী হইলেন। এই ভাবে রাজা একটা মস্ত বড় দল লইয়া খেতুরীর অভিমুখে রওনা হইলেন। এই অভিযানের সংবাদ খেতুরীতে পৌছিল। নরোত্তমের শিষ্য গঙ্গানারায়ণ চক্ৰবৰ্ত্তা, অন্তরঙ্গ সুহৃৎ রামচন্দ্ৰ কবিরাজ ও তৎসহােদর কবিচুড়ামণি গোবিন্দদাস এই রাজকীয় দলের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র করিলেন। র্তাহারা তাহদের জগন্মান্য আচাৰ্য্য নরোত্তমকে এই দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতরণ করাইতে সম্মত হইলেন না । “আমরা তাহাদিগকে বুঝিয়া লইব, আপনি খেতুরীতে বসিয়া থাকুন”-এই অভিপ্ৰায় জানাইয়া তাহারা তিনজন অগ্রসর হইলেন। খেতুবী আসিবার পথে কামারপুর গ্ৰাম । নৃসিংহ রাজা তথায় শিবির স্থাপন করিয়াছিলেন। তৎপূর্বেই গঙ্গানারায়ণ, রামচন্দ্র ও গোবিন্দ সেই গ্রামে তিনখানি ছোট দোকান খুলিয়া অপেক্ষা করিতেছিলেন। গঙ্গা নারায়ণের তেলের দোকান, রামচন্দ্রের মুদিখান এবং গোবিন্দী একখানি পানের দোকানের মালিক হইলেন। নৃসিংহ রাজার সঙ্গী পণ্ডিতদের পড়ুয়ারা জিনিষ কিনিতে যাইয়া দেখে তেলী, মুদী ও পানওয়ালা সকলেই সংস্কৃতে কথাবার্তা বলে। আশ্চৰ্য্য হইয়া তাহারা ভঁহাদের শিক্ষাসম্বন্ধে প্রশ্ন করিলেন। ছদ্মবেশীরা বলিলেন, “আমরা খেতুরীর লোক, সেখানে ঠাকুর মহাশয়ের কাছে বহু পণ্ডিতের সমাগম হয়, খেতুরীর লোকেরা সকলেই অল্প-বিস্তর সংস্কৃত জানে।” কিন্তু এতো অল্প বিদ্যা নহে! পড়ুয়ারা শাস্ত্রের যে কথা পাড়িল, তাহাতেই তাহারা পরাস্ত হইল। সুতরাং অতি বিস্ময়ে তাহারা যাইয়া তাহদের অধ্যাপকদিগকে এই বৃত্তান্ত অবগত করাইল। সেই ক্ষুদ্র তিনটি দোকানের কাছে রাজকীয় দলের অসম্ভব ভিড় হইল। ছয়জন পণ্ডিত র্তাহাদের বহু পড়ুয়া ও কয়েক শকট পুথি একদিকে, অপরদিকে তেলী, মুদি ও পানওয়ালা ; রাজা স্বয়ং সভা জাকাইয়া বসিয়া গেলেন, মধ্যস্থ স্বয়ং পণ্ডিতরাজ রূপনারায়ণ সরস্বতী । পণ্ডিতদল আশ্চৰ্য্য হইয়া দেখিলেন, প্ৰতিপক্ষ তাহদের অপেক্ষা অনেক বেশী পণ্ডিত-উপরন্তু ভক্তিশাস্ত্ৰে, যাহাতে র্তাহাদের প্রবেশমাত্ৰ নাই, তাহারা সেই নব অমোঘ অস্ত্রের নিপুণ সন্ধানী। সনাতনকৃত হরিভক্তিবিলাসের “যথা কাঞ্চনতাং যাতি কাংস্তং রাসবিধানতঃ । তথা দীক্ষাবিধানেন। দ্বিজত্বং জায়তে নৃণাম” প্ৰভৃতি শ্লোক ও অনিবাৰ্য্য যুক্তির বৃহে পড়িয়া পণ্ডিতেরা একান্তরূপে অসমর্থ হইলেন। তাহদের মনোহারী কথা, ভক্তির আবেগ ও পাণ্ডিত্য সকলকে মুগ্ধ করিল। রাজা নৃসিংহ এবং সতীর্থ পণ্ডিতমণ্ডলী নরোত্তমের তর্কযুদ্ধে আহবান ও 叶邵博雷山