পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীনিবাস, নরোত্তম ও শ্যামানন্দ V6 শরণ লইয়া তাহার শিষ্যত্ব গ্ৰহণ করিলেন। রাজা নৃসিংহ ও রাজ্ঞী রূপমালা একত্র দীক্ষিত হইলেন । ( বিস্তারিত বিবরণ নরোত্তমবিলাস ও প্ৰেমবিলাসে দ্রষ্টব্য । ) নরোত্তম আরও অনেক লোকের জীবনের গতি ফিরাইয়া দিয়াছিলেন। তঁহাদের মধ্যে দসু্যতস্কর ছিল। সদেগাপ-কুলজাত শুষ্ঠামানন্দ পুনরায় দেশে আসিয়া তাহার পূর্বপুরুষের আদিনিবাস ধারেন্দা-বাহাদুরপুরে উপস্থিত হন (পরগনা দণ্ডকেশ্বর, উড়িষ্যা ) । এখানে তিনি অদ্বৈতবাদী দামোদরকে বিচারে পরাস্ত করিয়া বৈষ্ণবধৰ্ম্মে দীক্ষিত করেন। শের খ্যা নামক এক মুসলমান দাসু্য র্তাহার সংস্পর্শে আসিয়া এতই ভক্তিভাবাপন্ন হন যে, তিনি শ্যামানন্দের নিকট বৈষ্ণব-দীক্ষা গ্ৰহণ করিয়া চৈতন্যদাস নামে পরিচিত হন। এই চৈতন্যদাস একজন পদকৰ্ত্তা। ভক্তিরত্নাকরের ১৫শ তরঙ্গে ইহার সংস্কারকাহিনী বিস্তৃতভাবে বর্ণিত আছে। রাধাকৃষ্ণ-গানে ইনি আবিষ্ট হইয়া পড়িতেন (প্ৰেমবিলাস দ্রষ্টব্য)। রয়ানি থানার নিকটবৰ্ত্তী ভারজিৎ নগরে তৎকালে এক পরাক্রান্ত রাজা রাজত্ব করিতেন, হঁহার নাম অচ্যুত। ইহার অধিকার মল্লভূমির অনেক দূৱ পৰ্য্যন্ত প্রসারিত ছিল। ভারজিৎ নগরের একদিকে দোলঙ্গা নদী। এই নদীর তীরদেশ অতি রমণীয়, তথায় একটি বাণেশ্বর শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত ছিল। রাজা অচ্যুত তাহার রাজ্ঞী ভবানীর সহিত অনেক সময়ে এই মন্দিবের নিকটে বাস করিতেন। অচ্যুতের জ্যেষ্ঠপুত্র রসিকমুরারি পিতার মৃত্যুর পর সিংহাসন অধিকার করেন । তিনিও অনেক সময়ে দোলঙ্গ-নদীতীরে বাস করিতেন । শান্তশীলা নামক স্থানে রসিকমুরারি খামানন্দের সাক্ষাৎকার লাভ করেন। সেই সাক্ষাতের পর রসিকমুরারি ভক্তি-সুধার রসাস্বাদ পাইলেন—ৰ্তাহার মনের ভাব ও জীবনের গতি ফিরিল। তিনি মানুষ চিনিলেন, জাতের খোসাটা তাহার নিকট অসার বোধ হইল। ক্ষত্রিয় রাজা রসিকমুরারি তাহার দুই রাজী ঈশানী ও মালতীর সহিত সদেগাপ খামানন্দের শিন্য হইলেন। উড়িষ্যার প্রায় সমস্ত রাজারাই এই রসিকমুরারির শিষ্য। সুতরাং ময়ুরভঞ্জ প্ৰভৃতি উড়িষ্যার অন্তৰ্গত যাৰতীয় রাজ্যের অধীশ্বরদের গুরুর গুরু শুষ্ঠামানন্দ । ভক্তিরত্নাকরে হ্যামানন্দের শিষ্যগণের মধ্যে উদ্ধব, অকুর, মধুবন, গোবিন্দ, জগন্নাথ, আনন্দানন্দ এবং রাধামোহনের নাম উল্লিখিত দৃষ্ট হয়। কিন্তু তঁহার সর্বপ্রধান শিষ্য রসিকমুরারি। সমস্ত উড়িষ্যাদেশে শ্যামানন্দ চৈতন্যধৰ্ম্ম প্রচার করিয়াছিলেন । সুতরাং দেখা যাইতেছে চৈতন্য, নিত্যানন্দ ও অদ্বৈতের পরে শ্ৰীনিবাস, নরোত্তম ও শুষ্ঠামানন্দ বঙ্গীয় বৈষ্ণব-সমাজের নেতা হইয়াছিলেন। ইহারা জাতিভেদ একেবারে অস্বীকার করিয়াছিলেন। শ্রেণী-নির্বিশেষে ধৰ্ম্মমন্দিরের দ্বার সর্বসাধারণের নিকট উন্মুক্ত করিয়াছিলেন। নিত্যানন্দের পুত্র বীরভদ্র একান্ত অন্ত্যজ বৌদ্ধ নেড়ানোড়ীদিগকে বৈষ্ণব-পৰ্যায়ে স্থান দিয়া রক্ষা করিয়াছিলেন । ইহারা পতিতের উদ্ধারকারী ছিলেন, শাস্ত্ৰানুশাসিত জটিলতাগ্ৰস্ত কৃত্রিমতাপূর্ণ হিন্দুসমাজকে একেবারে ইহারা জাগরণমন্ত্রে উদ্বোধিত করিয়াছিলেন। নবজীবনের স্মৃৰ্ত্তিতে বৈষ্ণবগণ মণিপুর হইতে মধ্যভারতের ছতরপুর, উড়িষ্যা হইতে আফগানিস্থান পৰ্য্যন্ত সৰ্ব্বত্র, পাহাড়িয়াদের মধ্যে কুকী, ত্রিপুৱবাসী প্রভৃতি নানা জাতি ও দেশবাসীকে