পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Cleo বৃহৎ বঙ্গ সেই বিশ্বাস অপর কাহারও নিকট হইতে পাওয়া যায় না। শুভ মুহুর্তে তিনি স্বয়ং তাহার অযাচিত করুণা কোন ভাগ্যবানকে দিয়া যান। কিন্তু বর্তমান গৌড়ীয় বৈষ্ণব-ধৰ্ম্ম গুরুবাদের উপর দাড়াইয়া আছে। গোস্বামিগণ মুক্তকণ্ঠে ঘোষণা করিতেছেন-“বৃন্দাবন-লীলার সখীরাই মহাপ্রভুর (স্বয়ং কৃষ্ণের) সহচর হইয়া আসিয়াছিলেন । সুতরাং ব্ৰজরস আস্বাদন করিবার আর উপায় নাই, গোপীগণের হাতেই সেই রসের চাবি। গোস্বামিগণের বংশধরদিগের শরণ না লইলে বৃন্দাবনে প্ৰবেশাধিকার কাহারও হইতে পারে না । গৌরগণোদেশের শ্লোক মুখস্থ করাইয়া বৈষ্ণবশিশুদিগের মনে গোস্বামিগণের দেবত্বে বিশ্বাস সমাজে দৃঢ়ীকৃত করা হইয়াছিল। এই ভাবের বর্তমান বৈষ্ণব-ধৰ্ম্মমত চৈতন্যের ধৰ্ম্ম সমাশ্রয় করিয়া উদ্ভূত হয় নাই। তাহাতে কুল-শীলের-বংশের কোন মৰ্য্যাদা নাই। “কহে চণ্ডীদাস, কানুর পীরীতি-জাতিকুলশীল ছাড়া।” এক এক গোস্বামীর শিষ্যগণ হইলেন-তাহাব পরিবার। ইহারা গ্ৰন্থাদি লিখিতে গিয়া নিজ পিতামাতা কিংবা পূৰ্ব্বপুরুষদের নাম উল্লেখ করেন নাই। র্তাহার গুরু ও গুরুভ্রাতাদের পরিচয়ার্থ দীর্ঘ বন্দনাসূচক কবিতা লিখিয়া মুখবন্ধ করিয়াছেন। নিজের জাতিংশ, গোষ্ঠী বা পারিবারিক অপরাপর সমস্ত বন্ধন ছাটিযা ফেলিয়া ইহারা গুরুপদে মাথা বিকাইয়াছেন ও তৎসমৰ্পিত্যকৰ্ম্ম হইয়াছেন। এরূপ গুরুবাদ বৈষ্ণবেরা পাইলেন কোথা হইতে ? বৌদ্ধগণের মধ্যে গুরুবাদ অত্যন্ত প্ৰবল ছিল-“শুনহে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ বড়, তাহার উপরে নাই”-চণ্ডীদাসের এই মানুষ কে তাহা জানি না, কিন্তু বৌদ্ধগণের যে গুরুই সৰ্ব্বশক্তিমান-অনন্যসাধারণ, একমাত্র পূজাৰ্ছ ছিলেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। নেপালে হিন্দুদিগকে “দোভাজু” ও বৌদ্ধদিগকে “গুভাজু” বলা হয়। দেভাজু অর্থ “দেবতাভজনশীল” ও “গুভাজু” অর্থাৎ “গুরুকে ভজনশীল”। নাথধৰ্ম্মেও গুরুর প্রতি অসামান্য ভক্তির বহু দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। গোরক্ষনাথ তাহাব গুরুর জন্য কি অসামান্য কৃষ্ণু সাধন করিয়াছিলেন। চৈতন্য দেব-মন্দির ও তীর্থস্থানগুলি দেখাইয়া বেড়াইতেন—সুতরাং তঁহাকে “দোভাজু” বলা যাইতে পারে। গুরুর প্রতি এই অসাধারণ ভক্তির লীলা তিনি কোথায়ও দেখাইয়াছেন বলিয়া মনে হয় না। আমার বিশ্বাস এই গুরুবাদ বৌদ্ধতন্ত্র এবং হিন্দুতন্ত্র উভয় তন্ত্র হইতেই বৈষ্ণবগণ লইয়াছিলেন, ইহার মধ্যে চৈতন্যের কোন প্রেরণা ছিল না। এই গুরুবাদের দ্বাবা গোস্বামিগণের সামাজিক প্রতিষ্ঠা ও অর্থসম্পদের শ্ৰীবৃদ্ধি হইয়াছিল, সন্দেহ নাই। পরবর্তী বৈষ্ণবোবা বৌদ্ধ মত হইতে অনেক উপাদান সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন, তাহার প্ৰমাণ পাওয়া যায়। অশোকের ধৰ্ম্মমহামাত্রের পদে গোস্বামিগণ নিজের অধিষ্ঠিত হইয়া পুরস্কার ও নিগ্ৰহ বিতরণ করিতেন। অনেক বৈষ্ণববাড়ীর গৃহে জেল ছিল। শিষ্যদের অপরাধের বিচার গোস্বামীরা স্বয়ং করিতেন, এবং তঁহাদের জেলে অপরাধীরা দণ্ড পাইত । প্ৰভুপাদ অতুলকৃষ্ণ গোস্বামী বলিয়াছেন, খড়দহে তাহদের জেল ছিল,--নিত্যানন্দের বংশধরগণ বিচার করিয়া তাঁহাদের শিষদিগকে শাস্তি দিতেন ! দুই হাজার তিন শত বৎসর পূৰ্ব্বে মহারাজ প্রিয়াদশী যে ধৰ্ম্মমহামাত্রপদের সৃষ্টি করিয়াছিলেন, এতকাল পরে সেই পদে