পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓዓS বৃহৎ বঙ্গ আছে—তাহাতে ইহকালে ইষ্টবন্ধুজ্ঞাতির উচ্চতান-প্ৰশংসা এবং পরকালে অক্ষয় স্বৰ্গ । ইহাদের কোনটির লোভ অলক্ষিতভাবে সীতা-সাবিত্রীদের মনের উপর বেশী কাৰ্য্য করিয়াছিল-ইহা একটি জটিল প্ৰশ্ন। অন্ততঃ সহজিয়াদের আদর্শ ইহারা হইতেই পারেন না । পরকীয়া-প্ৰেমে যে রমণী আত্মসমৰ্পণ করিল, সেই মুহুর্তে সে লোকচক্ষুর বালাই হইল। নিজের পিতামাতা তাহার জন্য চিরতরে গৃহের অর্গল রুদ্ধ করিলেন, পরকীয়া । স্বামি গৃহে সে অস্পৃশ্য, ঘুণিত, অপাঙক্তেয়। বন্ধু ও স্বগণেরা তাহাকে অস্বীকার করিল, শাস্ত্রকারেরা তাহাকে নিম্নতম নরক দেখাইলেন। সুতরাং পরকীয়ার প্ৰথম অবস্থা হইতে সে পার্থিব যাহা কিছু কাম্য তাহ সমস্ত বিসর্জন দিয়া-পরকালের সমস্ত ভীতি অগ্ৰাহ করিয়া কলঙ্কের ডালি মাথায় করিয়া পথে দাড়াইল । সুতরাং ত্যাগসম্বন্ধে সে যে উচ্চতম আদর্শে পৌছাইয়াছে ইহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই। স্ত্রীলোক লইয়া ধৰ্ম্মচৰ্চা বা প্রেমের আদর্শ প্ৰদৰ্শন করা এক সময়ে য়ুরোপের সৰ্ব্বত্র প্রচলিত ছিল। মধ্য যুগের “নাইট এরাণ্ডী” বেশী দিনের কথা নহে। কিন্তু খৃষ্টের পূর্কেও অনেক শ্রেণী এই রমণীদের লইয়া ব্যভিচারকে ধৰ্ম্মের অদীয় মনে করিতেন। তাহাদের কাহারও কাহারও মধ্যে স্ত্রীলোকের গণিকাবৃত্তি অতি সাধুকাৰ্য্য এবং প্ৰশংসনীয় ব্যাপার বলিয়া গণ্য হইত। পুরাকালে উর্বশী-তিলোত্তম প্ৰভৃতি স্বর্গের গণিকারা লোকমতে উচ্চস্থানে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এমন কি মৃচ্ছকটিকে বসন্তসেনাই সেই নাটকের সৰ্ব্বগুণসম্পন্ন প্ৰধান নায়িকা। গণিকাদের নৃত্য, গীত এবং সমস্ত কলাবিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ করিতে হইত। উদালক মুনির পুত্ৰ-কর্তৃক বিবাহ প্ৰথা আৰ্য্য-সমাজে প্ৰচলিত হইবার পূর্ব পৰ্যন্ত স্ত্রীলোকদের বহুনায়কের সহিত সম্বন্ধ প্ৰশংসনীয় ছিল। যে রমণী বহুনায়ককে সন্তুষ্ট করিতে পারিতেন, সমাজে তাহার প্রতিষ্ঠা হইত। যিনি পুরুষের নিবেদন অগ্ৰাহা করিতেন, তিনি সমাজে নিন্দিতা হইতেন, তঁহাকে সমাজ “কৰ্কশ” নাম দিয়া তঁহাদের প্রতিকূলভাব দেখাইতেন। (দুর্গাচরণ সান্যালের সামাজিক ইতিহাস দ্রষ্টব্য। ) যদিও বুদ্ধদেব ভিক্ষু-ভিক্ষুণীর মিলনসম্বন্ধে বহু কঠোর নিয়মাবলী বিধিবদ্ধ করিয়াছিলেন, তথাপি কালে সংঘের মধ্যে নরনাবীর অবাধ মিলন হইতে লাগিল। খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতেও যে একাভিপ্ৰায়ীর দল বিদ্যমান ছিল তাহা পূর্বেই (৩২১ পৃষ্ঠায়) বর্ণিত হইয়াছে। তাহারই নব নব সংস্করণ এখনও পল্লীতে পল্লীতে উৎপন্ন হইয়া সেই অক্ষয়-বটের অবিনাশী বংশধারা বজায় রাখিয়াছে। ঘোষপাড়ার মত শত শত গ্রামে রজনীর অন্ধকারে অর্গলবন্ধ গৃহে নরনারীর অৰাধ ধৰ্ম্মানুশীলন এখনও চলিতেছে । আমরা পাৰ্ব্বতীচরণ কবিশেখর-প্ৰণীত চারুদৰ্শন নামক পুস্তক হইতে এই নরনারী-মিলনের একটা দৃশু উদ্ধৃত করিয়া দেখাইতেছি। “কিশোরী-ভজনের মেলায় যাইয়া হাকিম চতুর্দিকে তাকাইয়া দেখিলেন প্ৰায় পাঁচশত লোক উপস্থিত। সেই লোকের মধ্যে স্ত্রীলোকের সংখ্যাই বার আনা । সেই স্ত্রীলোকদের মধ্যে বিধবার সংখ্যাই দশ আনা। সেই বিধবাদের মধ্যে যুবতীর সংখ্যা আট আনা । কোন স্ত্রীলোকের কোলেই শিশু নাই। বৃদ্ধের সংখ্যাও বড় কম, যুবতী ও যুবকদের সংখ্যাই পনের