পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গুরুবাদ ও পরকীয়া ዓዓ¢ পাশমুক্ত হইতে হইবে। পাশমুক্ত না হইলে জীব বালকের ন্যায় সরল হয় না। সরল না। হইলে ভগবৎপ্ৰাপ্তি হয় না।” হাকিমবাবু স্ত্রীলোকদের নির্লজ্জতা ও কমলদাসের উক্তি মিলাইতে গিয়াও মিলাইতে পারিলেন না। এমন সময়ে কমলদাস আবার ধৰ্ম্মব্যাখ্যা করিতে আরম্ভ করিল। যথা-ধৰ্ম্মজগতের দেশ চারি প্রকার--(ক) স্থূল, (খ) প্ৰবৰ্ত্তক, (গ) সাধক, (ঘ) সিদ্ধ। প্ৰত্যেক দেশের জন্য ছয়টি শিক্ষিতব্য বিষয় আছে, যথা-(১) দেশ, (২) কাল, (७) डाथम्र, (8) °tटि, (१) अविश्वन (७) ठनोoीक’ - · দেশের অর্থ ও গানের অর্থ হাকিমবাবু কিছুই বুঝিতে পারিলেন না। তজ্জন্য হাসাহাসির সঙ্গে যোগ দিতে পারিলেন না, বলিয়া অনেকের মুখে হাসি জাগিল • • • • • • • তাই তিনি বাহির হইয়া আসিলেন । যাতায়াত কালে যাহা চক্ষে দেখিলেন বা অনুমান করিলেন তাহা বৰ্ণনার যোগ্য নহে* (১৪০-১৪২ পৃষ্ঠা)। ইহা একটি ব্যঙ্গদৃশ্য হইলেও এই বর্ণনার ভিতর যে কতকটা সত্য আছে তাহাতে সন্দেহ নাই। এই ছবির আর একটা দিক আছে। উন্নত সহজধক্ষ্মীর আদর্শসংস্কারের উৰ্দ্ধে। নরনারীর প্রেমসম্বন্ধে সহজিয়াদের ধারণা খুব উচ্চ। তাহ সাধারণের বোধগম্য নহে । চণ্ডীদাস বলিয়াছেন, “প্ৰণয় করিয়া ভাঙ্গয়ে যে, সাধন-অঙ্গ পায় না। সে ।” যাহাকে প্ৰেম দিয়াছ, তাহা হইতে সে প্ৰেম আর ফিরাইয়া আনিতে পরিবে না-সে ব্যভিচারী হউক বা ব্যভিচারিণী হউক তাহাতে কিছু আসে যায় না ; সাংসারিক সুখ হয়ত হইল না, হয়ত প্রেমের পাত্র বা পাত্রী পুনরায় নিৰ্বাচন করিলে ঘরকন্ন সুখের হইত। কিন্তু সহজিয়া সে সুখ চায় না। ফুল যেরূপ তাহার সৌরভ। বিতরণ করিয়া তাহ ফিরাইয়া আনিতে পারে না, ভালবাসিয়া প্ৰকৃত প্রেমিক তাহা নষ্ট করিত্বে পারে না। দান-ধৰ্ম্ম ইহা নeে', দান করিয়া তুমি নিঃস্ব হইতে পার দ্বিতীয় হরিশ্চন্দ্রের মত ;-কিন্তু প্ৰেমকে যিনি সাধনার বস্তু বলিয়া গ্ৰহণ করিয়াছেন, তিনি দুঃখ সুখের অতীত হইয়া গিয়াছেন। দুঃখের বোঝা মাথায় করিয়া তাহাকে সাধনার পথ পরিষ্কার রাখিতে হইবে-প্ৰেম আদান-প্ৰদানের-কারবারের বা বিনিময়ের সামগ্ৰী নহে। যিনি শেষ রক্ষা করিতে পরিবেন না-তিনি সাধন-অঙ্গ পাইবেন না। সহজিয়া-প্ৰেমে “তলাকনামা” অগ্ৰাহ্য। চণ্ডীদাস লিখিয়াছেন, তাহাব সময়ে “সহজ প্রেমের” নেশায় যুবকযুবতীর উন্মত্ত ছিল। কিন্তু এ সাধনা বড় শক্ত। কবি বলিয়াছেন, যোগ্য ব্যক্তি “কোটিকে গোটক হয়”, এক কোটী সাধনপন্থীর মধ্যে একজন হয়। সে ব্যক্তি কেমন, তৎসম্বন্ধে চণ্ডীদাস বলিয়াছেন-যিনি “সুমেরু পর্বতকে সুতা-তত্ত্ব দিয়া বঁাধিয়া আকাশে ঝুলাইয়া রাখিতে পারেন, যিনি বিষধরের কবলে ভেককে পাঠাইয়া তথায় তাহাকে নৃত্য করাইয়া ফিরাইয়া আনিতে পারেন—তিনি যোগ্য। অর্থাৎ যিনি অসাধ্য সাধন করিতে পারেন, তিনিই যোগ্য। “অন্ধাবন্ধু” গীতিকায় (পূর্ববঙ্গ-গীতিকা, ৪র্থ খণ্ড, দ্বিতীয় ভাগ) এইরূপ প্রেমের দৃষ্টান্ত আছে। প্ৰথম উপদেশ নিজদেহকে “কাষ্ঠ-লোষ্ট্রসম” করিতে হইবে। অর্থাৎ উহাতে ইন্দ্ৰিয়াসক্তির লেশ মাত্ৰ থাকিবে না। দৈহিক উত্তেজনার লেশ থাকিলে সহজিয়াদের আদর্শ-প্ৰেম।