পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳԳV, বৃহৎ বঙ্গ দেবতারা সে প্রেমের স্বৰ্গ হইতে সাধককে তাড়াইয়া দিবেন। “মরম না জানে, ধরম বখানে, এমন আছয়ে যারা । কাজ নাই সখি, তাদের কথায়, বাহিরে রাহুন তারা । আমাব বাহির দুয়ারে, কপাট লেগেছে-ভিতির দুয়ার খোলা।” যাহারা শাস্ত্ৰ লইয়া ব্যাখ্যা করেন-মৰ্ম্মী নহেন—তাহারা দূবে থাকুন,-বহিরিান্দ্রিয়ের লেশ যাহার আছে—তাহার অধিকার নাই। “চৌঙকি রয়েছে সেথা”-প্রহরী আছে, দৈহিক কোনরূপ চাঞ্চল্য দেখিলে তাহারা তাড়াইয়া দিবে-“সে দেশের কথা, এদেশে কহিলে, লাগিবে মরমে ব্যথা ।” সে দেশের সুখদুঃখ-এদেশের সুখদুঃখ নহে। চণ্ডীদাস বলিতেছেন-“ত্রিসন্ধ্যা যাজন, তোমার ভজন, তুমি বেদমাতা গায়ত্রী, তুমি হও পিতৃমাতৃ।” ইত্যাদি কথায় কবি যে স্বৰ্গলোকের প্রতি ইঙ্গিত করিয়াছেন, তাহার পথঘাট প্ৰাচীন কবি তরণীরমণ র্তাহার চণ্ডীদাস-জীবনীতে দেখাইয়া দিয়াছেন, ইহার মূল পুথি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে, এবং বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষৎ তাহা ছাপাইয়াছেন । ইহাতে আছে-প্ৰণয়ী ও প্ৰণয়িনী পরস্পরকে নির্বাচন করার পর পরস্পরের নিকট হইতে দূরে,-পুরুষ সুন্দবী রমণীর মধ্যে, ও নারী সুন্দর যুবকগণের মধ্যে,-বাস করিবেন। নির্দিষ্ট কালের মধ্যে যদি শত প্ৰলোভনসত্ত্বেও তঁহাদের একনিষ্ঠ প্রেমের পরিবর্তন না হয়, তবে তাহদের প্রথম পরীক্ষা হইয়া গেল। দ্বিতীয় অবস্থায় তাহার একগৃহে বাস করিবেন, তখন স্বীয় চরিত্র অক্ষুন্ন রাখিয়া স্বভাব লইয়া তাহারা কি কি স্তর অতিক্রম করিবেন তাহা তরণীরমণ রামীর মুখে এইভাবে বর্ণনা করিয়াছেন- “চারিমাস আগে তার চরণ সেবিয়া। পদতলে পড়ি রবে স্বভাব লইয়া । পুনঃ আর চারিমাস চরণ সেবিয়া । বামভাগে শুতি রবে স্বভাব লইয়া৷ পুনরুপি চারিমাস সৰ্ব্বাঙ্গ সেবিয়া । ছন্দ-বন্দে শুতি রাবে স্বভাব লইয়া। আর চারিমাস তার চরণ ধরিয়া-হৃদয়ে রাখিবে তাকে স্বভাব লইয়া।” প্ৰত্যেক পদের পশ্চাতে “স্বভাব লইয়া” কথাটি আছে- অর্থাৎ স্বীয় সংযমের ও দৈহিক পবিত্রতার আদশটি বজায় রাখিয়া শুদ্ধভাবে এইরূপে সেই মানস প্ৰেমপাত্রের মানসী-পূজা করিতে হইবে ; এত বড় কষ্টিপাথর কে কবে কল্পনা করিতে পারিয়াছে ? পুনঃ পুনঃ বেদকে অগ্ৰাহ করা হইয়াছে। বেদ-বিরুদ্ধ বৌদ্ধধৰ্ম্মের এই বাণী সুপরিচিত। পরকীয়ার ধৰ্ম্ম এই “লোক বেদধৰ্ম্ম পাপ-পুণ্য যে নাহি মানয় । মন নিষ্ঠে অন্য কান্তে করায় প্ৰণয়।” ইহাই পরকীয়ার ধৰ্ম্ম-লোকধৰ্ম্ম, বেদধৰ্ম্ম, পাপপুণ্যে ভেদজ্ঞান-এই সমস্ত পরিত্যাজ্য। এই তান্ত্রিক মতের ধ্বনি আমরা চৈতন্যচরিতামৃতে পৰ্যন্ত দেখিতে পাই । উজ্জ্বলচন্দ্ৰিক নামক সহজিয়া-পুথিতে পাই “লোকশাস্ত্ৰ করে যারে অনেক বারণ” তাহাই পরকীয়ার শ্রেষ্ঠ বিধান। স্বকীয়া অগ্ৰাহ, “পরকীয়ারূপ অতি রসের উল্লাস । তাহাতে পরম রতি মন্মথের হয়।” এই পরকীয়াধৰ্ম্ম কিরূপ উচ্চ এবং তাহা যে শুধু একটা ধৰ্ম্মমত নহে, তাহ অনুষ্ঠিত হইবার যোগ্য এবং এখনও হইতেছে, তাহার দৃষ্টান্তস্বরূপ শ্ৰীযুক্ত অচ্যুতচরণ তত্ত্বনিধি-প্ৰণীত “সাধুচরিতে’র আখ্যায়িকা এখানে অতি সংক্ষেপে দেওয়া যাইতেছে :- জেলার ইট পরগনায় ক্ষ্যেমসহস্র গ্রামে দুৰ্গাপ্ৰসাদ কর (পিতার নাম হরিবল্লভ কর 2न ।