পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙ্গলায় বিদ্রোহিগণ ዓ}yሕ গজদানীর উপাধি-অনুসারে জঙ্গলবাড়ীর ‘দেওয়ান পরিবার” বলিয়া আত্মপরিচয় দিয়া থাকেন । শ্ৰীপুরের ভূঞা কেদার রায়েব ভগিনী সোণামণি ( অপর নাম সুভদ্ৰা) স্বেচ্ছায় ইশা খাকে আত্মদান করিয়া শ্ৰীপুর হইতে পলায়ন করিয়া ইশা খার অঙ্কশায়িনী হন । বঙ্গবিশ্রাত এই ঘটনাসম্বন্ধে অনেক পল্লীগাথা আছে। মৎসম্পাদিত পূর্ববঙ্গ-গীতিকার দ্বিতীয় খণ্ডে আমরা ইশা খা, তাহার যুদ্ধবিগ্ৰহ, প্রণয়কাহিনী, সোণামণির দুই পুত্র আরাম-বিরামের কথা-ইত্যাদির বিস্তারিত আলোচনা করিয়াছি। করিমুল্লার হস্তে কেদার রায়ের মৃত্যু ও শ্ৰীপুর-ধ্বংসের বৃত্তান্তও তথায় বিবৃত হইয়াছে। ইশা খাঁর বংশধর বলিয়া যাহারা দাৰী করিয়া থাকেনতঁহাদের সংখ্যা অগণ্য। কথিত আছে হয়বৎপুরের দেওয়ানেরা সোণামণির সন্তানের কুলোদ্ভব । এই দেওয়ান পরিবারের সোলেমানকে দাউদ খাঁর সহোদর প্রতিপন্ন করিয়া বঙ্গের নবাবের সঙ্গে তঁহাদের রক্তসম্বন্ধ প্ৰমাণ করিতে যে চেষ্টা পাইয়াছেন, ঐতিহাসিক প্ৰমাণাভাবে তাহা অগ্ৰাহ হইয়া গিয়াছে। দ্বিতীয় বিদ্রোহী যশোরের প্রতাপাদিত্য। ইহার পিতা বিক্ৰমাদিত্য এবং খুল্লতাত বসন্ত রায় পাঠান বাদশাহ দাউদ খার অন্তরঙ্গ সুহৃৎ ও বিশ্বাস্ত কৰ্ম্মচারী চিলেন । বঙ্গদেশের শাসনসংক্রান্ত ও রাজস্বের হিসাবপত্রের সমস্ত কাগজপত্র ইহাদের হন্তে ছিল। সুতরাং দাউদের মৃত্যুর পর বঙ্গাধিপ রাজা তোদরমল্প ইহাদিগের অনুসন্ধান করেন। ইহারা মোগলদিগের বশ্যতা স্বীকাব করায় তোদরমল্ল ইহাদিগকে বিস্তৃত ভূমির অধিকার প্রদান করিয়া বিক্ৰমাদিত্যকে মহারাজা উপাধি প্ৰদান করেন। যশোরে মহারাজা বিক্ৰমাদিত্যের পুত্ৰ প্রতাপাদিত্য জন্মগ্রহণের পর রাজজ্যোতিষী গণনা করিয়া বলিয়াছিলেন-“ইনি পিতৃহন্তা হইবেন।” বিক্ৰমাদিত্য এই ভবিষ্যদ্বাণী বিশ্বাস করিয়া ইহাকে হত্যা করিবার ইচ্ছা! প্ৰকাশ করিয়াছিলেন, এরূপ কিংবদন্তী আছে ; কিন্তু খুল্লতাত বসন্ত রায় শিশুর প্রতি কোন অত্যাচাব হইতে দেন নাই। তিনিই পিতার অধিক বাৎসল্য দেখাইয়া প্রতাপাদিত্যকে লালনপালন করিয়াছিলেন। বসন্ত রায় স্বয়ং সুদক্ষ বীরপুরুষ ছিলেন, তাহার ‘গঙ্গাজল’ নামক এক সুবৃহৎ খড়গ ছিল । তিনি বালক প্ৰতাপাদিত্যের রণশিক্ষার গুরু। কৈশোর অতিক্ৰম করিয়া প্ৰতাপাদিত্য দুই বৎসর কাল আগ্ৰায় অতিবাহিত করেন, তথায় তিনি মোগল সম্রাটের সভা, রাজনীতি, সৈন্যবৃহ-এ সকল দেখিয়া অভিজ্ঞতা লাভ করেন। যৌবনে তিনি নাগবংশীয় শরৎকুমারী নামী এক পরম সুন্দরী ও গুণবতী কন্যার পাণিগ্রহণ করেন। বিক্ৰমাদিত্য মৃত্যুর পূর্বে তাহার রাজ্যের দশ আনা প্রতাপাদিত্যকে ও ছয় আনা বসন্তু রায়কে ও তাহার পুত্ৰগণকে প্ৰদান করিয়া যান। প্রতাপাদিত্যের ক্ষমতী-লিঙ্গা ও দুর্দান্ত চরিত্র স্মরণ করিয়া বসন্ত রায় এই অসম রাজ্যবিভাগে বরং সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন। প্ৰথম যৌবনে প্রতাপাদিত্য কতলু খার পক্ষ হইয়া মোগলদিগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়াছিলেন, কিন্তু মানসিংহ বঙ্গাধিপ হইয়া আসিলে তিনি মোগলদের বস্ততা স্বীকার করিয়াছিলেন। - এই সময়ে তিনি ক্ৰমাগত সৈন্যবৃদ্ধি ও দুর্গাদি রচনা করিয়া উত্তরকালে g\vRSI