পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳS o বৃহৎ বঙ্গ মোগলশক্তি নিৰ্ম্মল করিয়া সমস্ত বাঙ্গলাদেশে স্বাধীন রাজা হুইবার কল্পনা করিয়াছিলেন। র্তাহার রাজধানী কোথায় ছিল-ইহা লইয়া অনেক মতভেদ আছে। কেহ বলেন সাগরদ্বীপ, কেহ বলেন ঈশ্বরপুবের নিকটে, কেহ বা বলেন চ্যাণ্ডিকানে । কিন্তু সতীশচন্দ্ৰ মিত্র মহাশয় অনেক অকাট্য প্রমাণ দ্বারা প্ৰতিপন্ন করিয়াছেন যে ধূমঘাটেই প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ছিল। পর্তুগীজগণ বাহাকে চ্যাণ্ডিকান বলিয়াছেন, আমার মনে হয় তাহা সাগরদ্বীপের সন্নিহিত স্থানগুলির প্রাচীন নাম-চণ্ডিকানগর-হইতে পারে । প্রতাপাদিত্যের বহু দুর্গেব মধ্যে ১৪টি প্রধান দুর্গ ছিল - (১) যশোর দুর্গ, (২) ধূমঘাট দুর্গ, (৩) রায়গড় দুর্গ, (৪) কমলপুর দুৰ্গ, (৫) বেদ কাশী দুৰ্গ, (৬) শিবসাহি দুর্গ, (৭) প্ৰতাপনগবের দুর্গ, (৮) শালিখা দুৰ্গ, (৯) মাতলা দুৰ্গ, (১০) হায়দার গড়, (১১) আড়াইকাকী দুর্গ, (১২) মণিদুর্গ, (১৩) রামমঙ্গল দুৰ্গ, (১৪) চক'শ্ৰী বা চাকৰী দুর্গ। কথিত আছে বৰ্ত্তমান কলিকাতার নিকটে প্রতাপাদিত্যের ৭টি দুর্গ ছিল -যথা, মাতলা, রায়গড়, টালা, বেহালা, শালখিয়া, চিৎপুর, মুলাজোড় । প্রতাপাদিত্য জাহাজনিৰ্ম্মাণের প্রধান উৎসাহদাতা ছিলেন । তাহার নৌবহবের জন্য সুন্দরী কাঠের অনেক জাহাজ ও রণতবিী নিৰ্ম্মিত হইত। কোন কোন নৌকার ৬৪টি বা তদাধিক দাড় ছিল এবং অনেক তবীতেই কামান থাকিত । তাহার নৌকা, রণতরী ও জাহাজের অনেক নাম ছিল, এখনও তাহদের কতক নাম বাঙ্গলা দেশে প্ৰচলিত আছে | যশোরে প্রতাপাদিত্যের নৌবহরে ‘পিয়ারা’, ‘মহলগিরি’, ‘ঘুৱাব’, ‘পাল’, ‘মাচোয়া”, “পশত', ডিঙ্গি,” “গছাড়’, ‘বালাম’, ‘পালওয়ার’, ‘কোচ” প্ৰভৃতি অনেক শ্রেণীর তরী ছিল। প্রতাপাদিত্যের সময়ে যশোরের কারিগরেরা জাহাজ-নিৰ্ম্মাণে বিশেষ দক্ষতা লাভ করিয়াছিল । তাহার ফলে সায়েস্তা খ্যা অনেক জাহাজ যশোর হইতে প্ৰস্তুত করাইয়া লইয়াছিলেন । ( যশোর-খুলনার ইতিহাস, ২১১ পৃষ্ঠা । ) প্ৰতাপের উৎকৃষ্ট যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা ১০,০০০-এৰ উপরে ছিল এবং অন্যান্ত পোতের সংখ্যাও দ্বিসহস্র কিংবা তদধিক ছিল । জাহাজঘাটা এখনও নামে মাত্ৰ বৰ্ত্তমান। আবদুল লতিফের ভ্রমণবৃত্তান্ত হইতে জানা যায়—“প্ৰতাপাদিত্যের যুদ্ধের উপকরণ শত শত তরীতে বোঝাই থাকিত ।” এই রণতরীগুলি প্ৰথম বাঙ্গালী কৰ্ম্মচারীর অধীন ছিল, কিন্তু পরে পর্তুগীজ ফ্রেডরিক ডুডলাই এই কাৰ্য্যের ভার প্রাপ্ত হন। প্ৰতাপের সৈন্য (১) ঢালী, (২) অশ্বারোহী, (৩) তীরন্দাজ, (৪) গোলন্দাজ, (৫) নৌসৈন্য, (৬) গুপ্তসৈন্য, (৭) রক্ষিসৈন্য, (৮% হস্তিসৈন্য-এই আট বিভাগে বিভক্ত ছিল। ঢালী সৈন্যের অধিনায়ক ছিলেন। কালিদাস রায় মদন মল্ল (“যুদ্ধকালে সেনাপতি কালা”-ভারতচন্দ্র ) । অশ্বারোহী সৈন্যের প্রধান অধ্যক্ষ প্ৰতাপসিংহ দত্ত, সহকারী মহিউদ্দিন ও নুরউল্লা। তাঁরন্দাজের অধ্যক্ষ সুন্দর ও ধুলিয়ান বেগ । নৌবহরের অধ্যক্ষ অগষ্টাস পেড়ে। বিপক্ষদেব গতিবিধির গুপ্ত সংবাদ লইবার জন্য যে গুপ্তসৈন্য সৃষ্ট হইয়াছিল তাহার অধ্যক্ষ ছিল ‘সুখ’ নামক এক অসমসাহসী বীর ( “গুপ্তসেনাপতিশচাপি সুখাখ্যে ভীমবিক্রমঃ”-ঘঢ়ককারিকা) , কুকী সেনাদের অধ্যাক্ষের নাম রঘু। “ষোড়শ হালকা হাতী, অযুত তুরঙ্গ সতী, বায়ান্ন হাজাল যার ঢালী”-প্রতাপাদিত্যের সৈন্যসংখ্যার এই নির্দেশ ভারতচন্দ্র