পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

AAN বৃহৎ বঙ্গ করিয়া রাজ্যের শ্ৰীবৃদ্ধি করিলেন। ১৬০৮ খৃঃ অব্দে ইসলাম খাঁ নবাব হইয়া বঙ্গের মসনদ অধিকার করেন। তিনি একটু উগ্ৰপ্ৰকৃতি ছিলেন। বক্রপুরে তাহার সঙ্গে প্ৰতাপের দেখাসাক্ষাৎ ও সন্ধির প্রস্তাব দৃঢ়ীভূত হইলেও স্বাধীনতার সেই চিরপোষিত ইচ্ছা তিনি কিছুতেই দমন করিতে পারিলেন না। এ ছুতো সে ছুতো ধরিয়া তিনি সন্ধির নিয়ম ভাঙ্গিলেন। পুনরায় যুদ্ধ আরম্ভ হইল। এইবার প্রতাপাদিত্য ধূমঘাটের নৌযুদ্ধে ইসলাম খাঁর সেনাপতি ইনায়েৎ খাঁ ও মীর্জা সহনের হাতে সম্পূৰ্ণ পরাস্ত হইয়া বন্দী হইলেন। তাহার বন্দী হওয়ার সংবাদে তৎপুত্ৰ উদয়াদিত্য মুষ্টিমেয় সৈন্য লইয়া প্ৰাণের আশা পরিত্যাগপূর্বক মোগল সৈন্যসমুদ্রে বঁাপাইয়া পড়িলেন। শালিখার যুদ্ধে পবাস্ত হইয়া তিনি নিবৃত্ত হন, এবং পিতার যোগ্য পুত্রের প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। এদিকে বন্দী প্ৰতাপাদিত্যকে লইয়া ঢাকায় গিয়া ইসলাম খাঁ পিঞ্জরাবদ্ধ ব্যাস্ত্ৰকে আগ্ৰায় প্রেরণ কবেন। পথে কাশীধামে ১৬১১ খৃষ্টাব্দে ৫০ বৎসর বয়সে প্ৰতাপের লীলাবসান হয়। ভারতচন্দ্র এবং অপর দুই একজন লেখক লিখিয়াছেন-মানসিংহের দ্বারাই তিনি পিঞ্জরাবদ্ধ হইয়া আগ্ৰায় প্রেরিত হইয়াছিলেন, তাহা ভুল। মানসিংহ নহে, ইসলাম খাঁর হাতেই তাহার পতন । প্ৰতাপাদিত্যের ইতিহাস বহুস্থান হইতে পাওয়া যাইতেছে। রামরাম বসু ফোট উইলিয়ম কলেজ হইতে প্ৰতাপাদিত্য সম্বন্ধে একখানি নাতিক্ষুদ্র ইতিহাস প্ৰণয়ন করেন । তিনি লিখিয়াছেন, একখানি পাশাতে লেখা “প্ৰতাপাদিত্য-চরিত’ হইতে র্তাহার উপকরণ সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন। নূরজাহানেব ভ্ৰাতা আসাদ খাঁর অনুচর আবদুল লতিফ খাঁ প্ৰতাপাদিত্যের সমসাময়িক। তঁহার ভ্রমণ-বৃত্তান্ত হইতে প্ৰতাপসম্বন্ধে অনেক কথা জানা যায়। প্ৰতাপাদিত্যের সমসাময়িক মীর্জা সহন আলাউদ্দিন " ইস্পাহিনী ( অপর নাম ঘাইবী' ) “বাহিরিস্তান ঘাইবী” নামক গ্রন্থে প্ৰতাপাদিত্যের কথা সবিস্তারে লিখিয়াছেন, তাহা মূলতঃ বিশ্বাসযোগ্য এবং খুঁটি-নাটি তত্ত্বে পূর্ণ। ঘটকীকারিকা গ্ৰন্থসমূহেও প্ৰতাপসম্বন্ধে অনেক কথা লিপিবদ্ধ আছে । বিদ্যারোজ-লিখিত বাখরগঞ্জের ইতিহাস, পর্তুগীজদের লিখিত অনেক বিবরণ, বিশেষত: ভুজারিকের ইতিহাস-প্রভৃতি বহুগ্ৰন্তে যশোররাজসম্বন্ধে অনেক কথা পাওয়া যায় । ইহা ছাড়া যশোর ব্যাপিয়া প্ৰতাপাদিত্য ও বসন্ত রায় সম্বন্ধে অনেক প্ৰবাদ আছে ! আমাদের প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব কবি গোবিন্দ দাসের সঙ্গে প্ৰতাপের খুল্লতাত ও ভ্রাতুষ্পপুত্র উভয়েরই সখ্য ছিল—তিনি তঁহার পদে ইহাদের নামের উল্লেখ করিয়াছেন । : ” আর একটি কথা বলিয়া প্রতাপাদিত্যের কথা উপসংহার করিব । মোগলদের বিরুদ্ধে ইশা খাঁ যুদ্ধ করিয়াছিলেন। কেদার রায়ের সঙ্গে মানসিংহের অনেক যুদ্ধ-বিগ্ৰহ চলিয়াছিল, অন্যতম ভূঞা সত্ৰাজিৎ ও আরও অনেকে মোগলদিগের প্রতিকূলতা করিয়াছিলেন। এদিকে পাঠামেরা মোগলের চিরশত্ৰু, বঙ্গদেশে তখনও তঁহাদের প্রভাব একেবায়ে নষ্ট • ক্ষয় - নাই। সুতরাং মোগল সমস্ত দেশের শত্রু-স্বরূপ উপস্থিত হইয়াছিলেন। ইহার কেন মিলিত হইলেন না-প্ৰতাপের শুভাকাঙ্কী সুঙ্গৎ ইশা খা, যিনি মান উৎসৰে ধুমঘাটে আসিয়া প্রতাপাদিত্যের