পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙ্গলার বিদ্রোহিগণ boor\O} তথাপি তাহার বংশধরগণ অনেক দিন পৰ্য্যন্ত মোগলদের বশ্যতা একান্ত ক্ষোভের কারণ বলিয়া মনে করিতেন। আমরা ‘ফিরোজ খা’ শীর্ষক পল্লীগাথায় এই ভাব দেখিতে পাই । তরুণ ফিরোজ খাঁ জঙ্গলবাড়ীর গদীতে উপবিষ্ট হইয়া একদা তাহার সুহৃদ ও সামন্তদিগকে তাহার সুবৃহৎ “বারদুয়ারী।” গৃহে আহবান করিলেন। তঁহাদিগকে সম্বোধন করিয়া তিনি বিষন্নভাবে বলিলেন, “আমি দিনরাত আমার মহিমান্বিত পূৰ্বপুরুষদের কথা স্মরণ করিয়া থাকি-তাহারা তো দিল্লীশ্বরের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়াছিলেন। আমার পূর্বপুরুষ এই দেওয়ান বংশের প্রতিষ্ঠাতা মহামতি ইশা খা এত বড় পরাক্রান্ত ছিলেন যে, স্বয়ং দিল্লীশ্বর তঁহাকে ভয় করিতেন । আমি তাহারই বংশধর একথা একমুহূৰ্ত্তও ভুলিতে পারিতেছি না। আপনারা এখন আমার সঙ্কল্পের কথা শুনুন-ঈশ্বর আমাকে সৃষ্টি করিয়া এই জঙ্গলবাড়ীতে পাঠাইয়াছেন। আমি এই প্রদেশের মালিক। আমি বৎসর বৎসর আমার সমস্ত রাজ্যের আয়েব আৰ্দ্ধাংশ দিল্লীতে পাঠাইয়া এই অপমানসূচক দেওয়ানগিরি। আর রাখিতে চাই না। এখন আমি কি ঠিক করিয়াছি, শুনুন-আমি দিল্লীতে রাজস্ব দেওয়া এখন হইতে বন্ধ করিয়া দিব । আমি দিল্পীৰ দরবারে আর হাজিরা দিতে পারিব না । সমাটের সৈন্য আমায় যাহা ইচ্ছা করুক । আমার যদি মৃত্যু হয়—ঈশ্বর যদি তাঁহাই বিধান করেন, তবে সেই মৃত্যুকে বরণ করিয়া লাইতে আমার কিছুমাত্র ভয় নাই। ইহাই আমার স্থির সঙ্কল্প, আমি মৃত্যুকে আমার গৃহদ্বারে ডাকিয়া আনিতেছি।” যখন ফিরোজ খাঁ এই কথাগুলি শেষ করিয়াছেন সেই মুহুর্তে অন্তঃপুর হইতে এক দাসী আসিয়া জানাইল যে তঁাহাকে রাজমাতা আহবান করিয়াছেন ; ফিবোজ খাঁ সেদিনের জন্য দরবার শেষ করিয়া অন্তঃপুরে মাতার সঙ্গে দেখা কি 'রতে চলিয়া গেলেন। “অন্তঃপুবে প্ৰবেশ করিয়া অবিলম্বে তিনি তঁহার মাতার সহিত দেখা করিলেন। দাসীরা তঁহাকে সুস্নিগ্ধ সরবৎ আনিয়া দিল । তিনি তাহা পান করিয়া তৃপ্ত হইয়া কোচের উপর অৰ্দ্ধশায়িত অবস্থায় উপবেশন করিলেন । বেগম তাহার উদীয়মান চন্দ্ৰিকার ন্যায় তরুণ কান্তি মুগ্ধনেত্ৰে দেখিয়া গৌরব অনুভব করিলেন। দেওয়ান মাতাকে অভিবাদন করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, তিনি তঁাহাকে কেন ডাকিয়াছেন। বেগম গদগদ কণ্ঠে বলিলেন“বৎস, আমার প্রতি নিষ্ঠুর হইও না। তোমার মুখখানি আমি যতবার দেখি ততবার আমি মনে করি, তোমার বিবাহ না হইলে আমি কিছুতেই সোয়াস্তি পাইব না। বিবাহ করিতে সম্মতি দাও ; তোমার তরুণ যৌবন, কেন বল যে “বিবাহ করিব না ?’ আমার বারংবারের অনুরোধ কি তুমি এইভাবে অগ্ৰাহ করিবে ? আমার বয়স হইয়াছে, আমার বড় ইচ্ছা যে কবরে যাওয়ার পূর্বেই আমি একটী সুন্দরী বউ দেখিয়া মরি।” “দেওয়ান তাহার মাতার কথা শ্ৰদ্ধা ও মনোযোগের সহিত শুনিলেন। তিনি উত্তরে বলিলেন-“আমার মনের কষ্ট মা তুমি বুঝিতে পরিবে না, আমার পূর্বপুরুষ ইশা খাকে দিলীশ্বর স্বয়ং ভয় করিতেন; তাহার শৌৰ্য্য, বীৰ্য্য ও পরাক্রমের পরিচয় পাইয়া তিনি যাচিয়া ফিরোজ খাঁর প্রতিজ্ঞ ।