পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b”8Nኃ বৃহৎ বঙ্গ আছে, সম্ভবতঃ এইস্থানে যুদ্ধ হইয়াছিল। সীতারাম এইবার চিরুলিয়া, মধুদিয়া প্ৰভৃতি পরগনা অধিকার করিয়া লইলেন । যশোর খুলনার ইতিহাস-লেখক সতীশ বাবু বলেন “সীতারামের রাজ্য পদ্মার উত্তর পার হইতে আরম্ভ করিয়া বঙ্গোপসাগরের তীর পর্য্যন্ত বিস্তৃত ছিল।” ( ৫৬৩ পৃঃ)। উত্তরে পাবনা, দক্ষিণে ভৈরব নদ, পশ্চিমে মামুদসাহী পরগনা-তেলিহাট পরগনার শেষ। এই এক অংশ, আর দ্বিতীয় অংশ-দক্ষিণে সুন্দরবনের আবাদী মহল, উত্তরে ভৈরব নদ হইতে আবাদ শেষ, পূর্বে বালেশ্বর হইতে বরিশালের কতকাংশ পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই বিস্তৃত অধিকার ৪৪টি পরগনায় বিভক্ত ছিল এবং ইহার আয় তখনকার দিনে এককোটী টাকার উপরে হইত। মোগলেরা সীতারামকে এতদিন পৰ্য্যন্ত প্ৰশ্ৰয় দিয়াছিলেন কেন ?--তাহার একমাত্র কারণ—তাহারা হিন্দুজমিদারদিগকে নগণ্য মনে করিয়াছিলেন, জনশ্রুতিতে যত কিছু শোনা যাইত, নবাব তাহা কাণে আনিতেন না। সীতারামের সুশাসনে মুসলমানের প্রীত ছিল। তৎকালে নবাবে বা পাঠানদিগকে ও মগদিগকে আশঙ্কা করিতেন । সীতারাম নবাবের পক্ষ হইয়া দুর্দান্ত পাঠান ও মগদিগকে দালন করিয়াছিলেন, ইহাতে সায়েস্তা খা-প্রমুখ শাসনকৰ্ত্তারা বরং তাহার উপর প্রতই হইয়াছিলেন। সীতারাম যে রাজস্ব দিতেন নাইহাতে র্তাহারা এই কারণে উপেক্ষা করিয়াছিলেন । কিন্তু বৃদ্ধির একটা সীমা আছে, সীতারাম যখন সে সীমানা লঙ্ঘন করিয়া গেলেন, তখন তাহার প্রতি নবাব সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হইল । পাঠান-নিৰ্যাতনের অছিলায় সীতারাম বহু দুৰ্গ নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন, দীঘিকা-খননের উপলক্ষে তিনি রাজ্যের শতসহস্ৰ প্ৰজাকে সামরিক শিক্ষা দিয়াছিলেন, দসু্যদলন-প্ৰচেষ্টায় তিনি বহু দস্যকে করতলগত করিয়াছিলেন। র্তাহার সৈন্যশ্রেণীতে হিন্দু, পাঠান, মোগল প্ৰভৃতি নানা সম্প্রদায়ের লোক রাজভক্তিপরায়ণ ও সন্তুষ্টচিত্ত ছিল ; এইভাবে বলসঞ্চয়পূর্বক সীতারাম রাজত্ব করিতে লাগিলেন। তিনি মহম্মদপুরের দুৰ্গকে অতি দুৰ্গম করিয়া নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন। বিশাল অরণ্য ও তিনদিকে বিল পরিবেষ্টিত থাকায় নিভৃত প্রদেশে তিনি স্বদেশী কৰ্ম্মকার্যকর্তৃক বড় বড় কামান প্ৰস্তুত করাইয়াছিলেন । মহম্মদপুর বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হইল। রাজার আয় বাড়িয়া গেল। রাজা নিজে বিদ্বান ছিলেন। শৈশবে তিনি টােলে সংস্কৃত পড়িয়াছিলেন, তিনি বাঙ্গলা ও উর্দু, খুব ভাল জানিতেন। জয়দেব ও চণ্ডীদাসের পদ খুব ভাল করিয়া আবৃত্তি করার পুরস্কারস্বরূপ তিনি জগন্নাথ চক্ৰবৰ্ত্তকে জমি দান কারিয়াছিলেন-সেই সনন্দে লিখিত ছিল—“পরমপূজনীয় জগন্নাথ চক্ৰবৰ্ত্তী শ্ৰীচরণেষু-আমার জমিদারি পরগনে মাহিমসাহীর হোগলডাঙ্গা ও কল্যাণপুর গ্রামে বার পাখী ও পরগণে নলদীর নারায়ণপুর ও নহাটি গ্রামে আট পাখী জমি আপনার চণ্ডীদাস ও জয়দেবের মুখস্থ কবিতা শুনিবার জন্য ব্রহ্মোত্তর দিলাম--আপনি পুরুষানুক্ৰমে আশীৰ্ব্বাদ করিয়া ভোগদখল করুন। সন ১১:১৩, তাং ৫ই বৈশাখ ( ১৭০৭ খৃঃ ) । মহম্মদপুর অঞ্চলে