পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

brot 3 বৃহৎ বঙ্গ বং হাজি আহম্মদের ভ্রাতা আলিবর্দী খাকে নবাব করিলে সম্রাটকে যে তিনি অপরিমিত অর্থ দিবেন তাহার এমন একটা লোভনীয় প্ৰস্তাব করিয়াছিলেন যে, সম্রাট পাটনার শাসনকৰ্ত্তা আলিবন্দী খাকে গোপনে বাঙ্গলাব গদি দখলের জন্য নিয়োগপত্র দিলেন । এদিকে হাজি মহম্মদ ও জগৎ শেঠ নবাবকে কুপরামর্শ দিয়া ব্যয়-সঙ্কোচের উপলক্ষে তাহার বহু সৈন্য বিদায় করিয়া দিলেন । নবাবেব মাঝে মাঝে সন্দেহ হইত, কিন্তু আলিবর্দী খাঁ নানারূপ বাহরাজভক্তি প্ৰদৰ্শন করিয়া পত্র লিখিতেন ও হাজি মহম্মদ এবং জগৎ শেঠ মিষ্ট কথা বলিয়া নবাবকে ভুলাইয়া রাখিতেন, তারপরে ভোজপুরীদের বিদ্রোহ দমনের ভান করিয়া আলিবর্দী ধর্থা র্তাহার বিপুল বাহিনীর সঙ্গে পাটনা হইতে যাত্ৰা করিলেন। পথিমধ্যে তিনি একজন মৌলভির হাতে কোবান ও একজন ব্ৰাহ্মণের হাতে গঙ্গাজলের ঘাট ও তুলসীপত্ৰ দিয়া সমস্ত সেনাপতি ও সৈন্যদিগকে আহবান করিলেন। মুসলমান কোরান ও হিন্দু গঙ্গাজল ও তুলসী স্পশ করিয়া প্ৰতিজ্ঞা করিল-আলিবর্দী যাহা বলিবেন, ন্যায় হউক অন্যায় হউক তাহারা তাহা করিবে । এই প্ৰতিশ্রুতির পরে, আলিবর্দী যে নবাবেব বিরুদ্ধে যাইতেছেন তাহা তাহাদিগকে জানাইলেন । হাজি মহম্মদ, আলিবর্দী ও জগৎ শেঠ মন্ত্রগুপ্তি এত চাতুৰ্য্যের সহিত রক্ষা করিয়াছিলেন যে, যখন 'আলিবন্দী সৈন্য লইয়া একেবারে রাজপ্ৰাসাদের নিকটবৰ্ত্তী, তখনও নবাব সম্যক বিশ্বাস করিতে পারেন নাই যে, তঁাহাবা র্তাহার বিরুদ্ধে সত্যসত্যই ষড়যন্ত্র করিতেছেন। শেষ মুহূৰ্ত্তে যখন শক্রিপক্ষের শিবির হইতে কামান গর্জন করিয়া বলিল যে আলিবর্দী তীহার শত্ৰু, তখন নবাব হস্তিপৃষ্ঠে আরোহণ করিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হইলেন। তাহার মাহুত বলিল, এ অসম যুদ্ধে অগণিত শত্রুর মধ্যে প্ৰাণ দেওয়ার কোন সার্থকতা নাই, বরঞ্চ হাতী দ্রুতবেগে ছুটাইয়া দিই,--বনবিষ্ণুপুরের রাজার প্রবল সাহায্যে হয়ত তিনি শত্রুদলনে সমর্থ হইবেন । নবাব সে কথা শুনিলেন না, বিশ্বাসঘাতক আলিবর্দীর বিরুদ্ধে মহাবীরের ন্যায় যাত্ৰা করিয়া রণক্ষেত্রে তিনি মহাপ্ৰয়াণ করিলেন (১৭৪০) । আলিবর্দী খা—১৭৪০-১৭৪৬ খৃঃ নবাব সরফরাজ খাকে হত্যার পর মুরাসিন্দাবাদে প্ৰবেশ করিয়াই আলিবন্দী মৃত নবাবের মান্ত গা জোন্নত অলনিস্তার দর্শনপ্রার্থ হইয়া স্বয়ং তঁহার গৃহদ্বারে যাইয়া সংবাদ পাঠাইলেন--- “আমি নবাবকে হত্যা করিয়া অকৃতজ্ঞতার অনুতাপে পুড়িয়া মরিতেছি । আমি ক্ষমাহঁ নহি, তথাপি ক্ষমা চাহিতে আসিয়াছি। আমি প্ৰতিশ্রুতি দিতেছি। এই ঘোর পাপকাৰ্য্যের পর আপনার মনে আর কোন কষ্ট দিব না, সর্ববিষয়ে আপনার আদেশের অনুবন্ত্ৰী হইয়া চলিব।” অনেকক্ষণ আলিবর্দী দ্বারে অপেক্ষা করিলেন, কিন্তু শোকসন্তপ্ত মাতা কোন জবাবই দিলেন না। সুতরাং পুত্ৰহন্ত নবাবকে তাহার সঙ্গে দেখা না করিয়াই ফিরিয়া আসিতে হইল। পাপটি কম গুরুতর নহে-নবাব সরফরাজ খাঁ স্বয়ং তঁহার অন্তরঙ্গ pa বিহারের শাসনকৰ্ত্তা নিযুক্ত করিয়াছিলেন-ভঁাহাকে হত্যা করা।