পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরবত্তী বাদসাহগণ b”dኵሕ ১৭৪৫ খৃঃ অব্দে মুস্তাফা খাঁ রাজমহল লুণ্ঠন করিয়া মুঙ্গের হইয়া পাটনায় জিনউদ্দিনের রাজধানী আক্রমণ করেন। যদিও জিনউদিনের সৈন্যসংখ্যা অল্প ছিল, তথাপি তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সহিত যুদ্ধ করেন। একটা তীর লাগিয়া মুস্তাফার ডান চক্ষুটা নষ্ট হইয়া যায়। যুদ্ধক্ষেত্ৰ হইতে র্তাহাকে কষ্টে আনা হয়-ইহার পর তিনি বেশী দিন বাচেন নাই। কিন্তু সমসের পাঠানও বেশীদিন বিশ্বস্ত রহিলেন না। তিনি গোপনে রঘুজীর সহিত যড়যন্ত্রে লিপ্ত হইলেন। একসময়ে নবাবসৈন্য রঘুজীকে অনায়াসে বন্দী করিতে পারিত, কিন্তু সমসের তাহাকে পালাইতে সুবিধা করিয়া দিয়াছিলেন । আলিবাদী সমস্তই জানিতে পারিলেন। সমসের হঠাৎ পাটনায় যাইয়া জিনউদ্দিনের সঙ্গে যুদ্ধে প্ৰবৃত্ত হইলেন এবং নিৰ্দয়ভাবে জিনউদ্দিনকে নিহত করিলেন ; তঁহার ভূ-প্রোথিত সত্তরলক্ষ টাকা ও বহু মণিমাণিক্য সমসেরের হাতে পড়িল । সমসের এতদ্ব্যতীত জিনউদিনের পরিবারবর্গকে বন্দী করিয়া লইয়া গেল, ইহাদের মধ্যে বেগম আমনাও (আলিবদীর কন্যা) ছিলেন। এদিকে রঘুজীর পুত্র জানোজী কটকের নিকট লুণ্ঠনাদি চালাইতে লাগিলেন। আলিবর্দী ইহাদিগকে দমন করিবার জন্য বহু সৈন্যসহ সেনাপতি মীরজাফরকে মেদিনীপুর অঞ্চলে পাঠাইয়া দিলেন। কিন্তু মীরজাফর ভয়ে মেদিনীপুর হইতে বৰ্দ্ধমানে পালাইয়া গেলেন এ ১ তঁহার ধনরত্ন ও হস্তীগুলি বৰ্গীরা সহজেই লুণ্ঠন করিয়া লইল । মীরজাফরকে একো রে অকৰ্ম্মণ্য দেখিয়া আলিবর্দী আতাউল্লা নামক এক কৰ্ম্মঠ সেনাপতিকে নিযুক্ত করিলেন। ইনি প্ৰথম জানোজীর একদল সৈন্যকে পরাস্ত করিয়া কাৰ্য্যতৎপরতা দেখাইলেন, কিন্তু এক পাগলা ওমরাহ। গণিয়া বলিল যে, তিনি শীঘ্রই বাদসাহ হইবেন । এই ভবিষ্যদবাণী শুনিয়া আতাউল্লার মুণ্ড ঘুরিয়া গেল এবং তিনি নবাবের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিতে লাগিলেন। মীরজাফরকে তিনি নবাব হইয়া বেহারের শাসনকর্তৃত্ব দিবেন-এই লোভ দেখাইয়া নিজের দলে টানিয়া লইলেন। আলিবর্দীর গুপ্তচরেবা এ সমস্ত সংবাদই তঁহাকে দিয়াছিল । তিনি সময় নষ্ট না করিয়া এই দুই সেনাপতিকে অবমানিত করিলেন ; তিনি মীরজাফরকে ক্ষমা করিতে প্ৰস্তুত ছিলেন, কিন্তু এই ব্যক্তি র্তাহাকে হিসাব-নিকাশ দিতে অসম্মত হওয়াতে র্তাহাকে কৰ্ম্মচুত্যুত করিলেন। ইহার পরে যে যুদ্ধ হয় তাহতে নবাব জয়ী হন, সমসের নিহত হন এবং তাহার সমস্ত সম্পত্তি ও পরিবারবর্গ নবাবের হস্তগত হয়। নবাব তাহার কন্যাকে আশাতীতরূপে ফিরিয়া পাইয়া বিশেষ সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন। ১৭৪৮ খৃঃ অব্দে জিনউদ্দিনের মৃত্যুর পর নবাব জানকীরামকে বেহারের শাসনকর্তৃত্বে নিযুক্ত করেন। তখন আলিবর্দীর বয়ঃক্রম ৭২ বৎসর ; জানোজীর আক্রমণ তখনও থামে নাই। অবশেষে উভয় পক্ষই দীর্ঘকালের যুদ্ধবিগ্ৰহে ক্লান্ত হইয়া পড়িয়া"*" ছিলেন। বর্গীদের সঙ্গে সন্ধি করিয়া নবাব এই বিবাদ মিটাইয়া ফেলিলেন ; সন্ধির সর্জানুসারে বর্গীদিগকে কটক প্রদেশের অধিকার ছাড়িয়া দিলেন এবং