পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bPVe বৃহৎ বঙ্গ বঙ্গদেশ হইতে বৎসরে বারলক্ষ টাকা মহারাষ্ট-সরকারে পৌছাইয়া দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ হইলেন (১৭৫১ খৃঃ) । ইহার পর বর্গীরা আর কোন উপদ্রব করে নাই। আলিবাদী এত বড় বীর হইয়াও স্নেহজনিত দুর্বলতা এড়াইতে পারেন নাই। তিনি সিরাজকে প্ৰাণাপেক্ষা ভালবাসিতেন এবং এই সুশ্ৰী কিশোরবয়স্ক দৌহিত্রের শত অপরাধ মার্জনা করিতেন। সিরাজের বিবাহে তিনি এমন ঘটা এবং বিপুল অর্থব্যয় করিয়াছিলেন যে, বহুদিন পৰ্য্যন্ত এই সমারোহ-ব্যাপারের কথা বাঙ্গলাদেশের সর্বত্র আলোচিত হইত। যখন আলিবর্দী খাঁ। এইভাবে বঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যা সুশাসন করিয়া বাৰ্দ্ধক্যে উপস্থিত হইলেন, তখন তিনি সিরাজউদৌলাকেই তাহার উত্তরাধিকারিাপদে মনোনীত করিলেন। মাতামহের আদরে সিরাজউদ্দৌলা অত্যন্ত বাড়িয়া উঠিয়াছিলেন, আলিবর্দী তাহার শত দোষ দেখিতেন না। সিরাজউদৌলা যাহাকে তাহার দাদা মহাশয় বা তঁহার ভাইদের প্ৰিয় মনে করিতেন, তঁহাকেই হত্যা করিতেন। এই ভাবে হুসেনকুলি খাঁ ও র্তাহার ভ্রাতাকে হত্যা করিলেন। নবাব তাহার মেহেব দুলালকে কোন দণ্ড দিলেন না। প্ৰজার সিরাজউদ্দৌলার প্রতি বিতৃষ্ণ হইয়া উঠিল। ইহাই শেষ নহে-হঠাৎ সিরাজ মুরাসিন্দাবাদ হইতে কতক সৈন্য লইয়া বিদ্রোহ ঘোষণা করিলেন, নবাবকে লিখিলেন, “আপনি আমাকে পুতুলের মত আদর দিয়া রাখিয়াছেন, কোন রাজ্যের শাসনভার দেন না, সুতরাং আমি আপনার সঙ্গে লড়াই করিব এবং বলপূর্বক রাজ্য কাড়িয়া লইব ।” সিরাজ পূর্ণিয়ার দিকে সসৈন্যে যাইয়া তথাকার শাসনকৰ্ত্ত জানকীরামের শাসনভার তঁহাকে ছাড়িয়া দেওয়ার দাবী করিয়া যুদ্ধের উদ্যোগ করিতে আরম্ভ করিলেন। এদিকে নবাব তাহার দুলালটি পাছে এইরূপ অস্বাভাবিক যুদ্ধবিগ্রহে আহত হন,- র্তাহার অধিকার নষ্ট হওয়া অপেক্ষা উহাই তাহার বেশী ভাবনার বিষয় হইল। তিনি অতি স্নেহের সহিত তঁহাকে জানাইলেন—“তুমি এই সিংহাসন পাইবে, ফিরিয়া এস” ইত্যাদি। সিরাজ সে সকল মেহেব বাক্যে ভুলিলেন না। জানকীরাম দেখিলেন, সিরাজের সঙ্গে যুদ্ধ করিলে পাছে তিনি হত বা আহত হন, ইহাও যেরূপ ভাবনার বিষয় হইল, এদিকে নবাবের বিনা অনুমতিতে তিনি সিরাজকেই বা কি করিয়া শাসনকর্তৃত্ব ছাড়িয়া দেনএই সমস্যায় বিচলিত হইয়া পড়িলেন ; অবশেষে যুদ্ধ করাই স্থির করিলেন। সিরাজের প্ৰধান পরামর্শদাতা মাধি নিম্পার খাঁ যুদ্ধে নিহত হইল এবং সিরাজ দূর এক পল্লীতে আশ্রয় গ্ৰহণ করিলেন। জানকীরাম কৌশলে তঁহাকে বন্দী করিয়া তাহার বাসস্থানের জন্য মস্ত বড় এক প্রাসাদ নিয়োজিত করিয়া দিলেন এবং অল্প পরেই তঁহাকে শরীররক্ষকগণ-পরিবৃত করিয়া মুরাসিন্দাবাদে নবাবের নিকট পাঠাইয়া দিলেন । নবাব তাহাকে কিছুমাত্র তিরস্কার না। করিয়া অক্ষতদেহে যে তিনি তঁহাকে ফিরিয়া পাইলেন, এজন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। নবাধের ভ্রাতা হাজি মহম্মদের ছেলেরা একে একে দুইজন এই সময়ে মৃত্যুমুখে পতিত হন, র্তাহারা উভয়েই জনপ্ৰিয় ছিলেন । নবাবদুহিতা ঘেষেটি বেগম বিস্তর টাকাকড়ি লইয়া মতিঝিলে বাস করিতে লাগিলেন এবং যাহাতে সিরাজ না হইয়া তিনিই পিতৃ-রাজ্যের