পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৃহৎ বঙ্গ جوا\=by এই চারিমাস বিদেশীদিগের সঙ্গে মনোমালিন্য এবং স্বীয় দরবারের ষড়যন্ত্রের ফলে তিনি একটি দিনও শান্তিতে নিদ্ৰা যাইতে পারেন নাই। এই অল্প সময়ে তিনি এত কি অত্যাচার করিতে পারিতেন যে জগতের ইতিহাসে। তঁহাকে ‘নিরো’র পার্শ্বে স্থান দিতে হইবে ? জগৎ শেঠের অন্দরে রমণীর বেশে প্ৰবেশ করিয়া তিনি সন্ত্রান্ত মহিলাদিগকে অপমান করিয়াছিলেন বলিয়া প্ৰবাদ আছে এবং নবীনচন্দ্ৰ সেন “বেগমের বেশে পাপী পশি অন্তঃপুরে” ইত্যাদি সরোষ উক্তি শেঠজীর মুখ হইতে বাহির করিয়াছেন, কিন্তু আমরা দেখিতে পাইয়াছি, ঐরূপ একটা দুষ্কাৰ্য্য নবাব আহম্মদ করিয়াছিলেন। গোলাম হুসেন নবাব আহম্মদ সম্বন্ধে এই কথা লিখিয়াছিলেন। সিরাজের সম্বন্ধে এই অপবাদ সম্পূর্ণ অমূলক। অন্ধকূপ হত্যাটা অমূলক নহে, কিন্তু উহা নিশ্চয়ই অত্যন্ত অতিরঞ্জিত করা হইয়াছে। যুদ্ধের সময়ে শত্রুপক্ষের বন্দীদিগকে কেহই রাজপ্রাসাদে স্বর্ণখটায় শোয়াইয়া রাখেন না। হয়ত সেখানে কৰ্ম্মচারীরা কিছু অত্যাচার করিয়াছিল, কিংবা বন্দীদিগের অভাব-অভিযোগের দিকে কৰ্ম্মচারীরা মনোযোগী হয় নাই। ঠিক ঘটনার সময়ে এই বিষয়টা এত অকিঞ্চিৎকর ছিল যে তাহ সাহেবের প্রথম দিককার রিপোর্টে উল্লেখ করেন নাই, শেষকালে উহার একটি অতিরঞ্জিত বৰ্ণনা দেওয়া হইয়াছিল। মুসলমান ঐতিহাসিকগণ একবাক্যে বলিয়াছেন, নবাব উহার কিছুমাত্র খবর রাখিতেন না। এখনই কি বড়লাট ভারতবর্যের কোন জেলে কোন বন্দীর প্রতি কি অত্যাচার হইতেছে, কাহার কি অসুবিধা হইতেছে। ইহার সকল সংবাদ রাখেন ? জেলের কৰ্ম্মচারীরা কি বন্দীদিগের সহিত ব্যবহারে প্রত্যেক বিষয়ে বড়লাটের মণ্ডুৱী লইয়া কাজ করেন ? আমাদের বিশ্বাস অন্ধকূপ-হত্যা ব্যাপারটা একেবারে অমূলক নহে, কিন্তু শেষকালে তিলকে তাল করিয়া লেখা হইয়াছে। রাজীবলোচন, যিনি ইংরেজদের পক্ষ হইয়া কেরি সাহেবের প্রেরণায় তাহার পুস্তকখানি লিখিয়াছেন, তিনিও এই ঘটনার উল্লেখ করেন নাই! ১৭৫৭ খৃঃ অব্দে এই ঘটনা সংঘটিত হয় এবং ১৮০৭ খৃষ্টাব্দে কৃষ্ণচন্দ্র-চরিত লণ্ডনে ছাপা হয় ;-ইহাতে সিরাজের সম্বন্ধে অতি বীভৎস বহু মিথ্যা কথা-যাহা আমরা পূর্বে দেখাইয়াছি-লিপিবদ্ধ হইয়াছিল। মাত্ৰ ৫০ বৎসর পরের লিখিত এই বিবরণটিতেও সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে নানা দোষারোপ থাকা সত্ত্বেও অন্ধকূপের কথা একবারও উল্লিখিত হয় নাই ; যুদ্ধবিগ্রহের সময় এইরূপ সকল ঘটনা এত সচরাচর দৃষ্ট হয় যে তাহ কেহ অত্যাচারের দৃষ্টান্ত বলিয়া গ্ৰহণ করে না। এই ঘটনা অত্যাচারমূলক স্বীকার করিলেও নবাবকে এ সম্বন্ধে অভিযুক্ত করা সঙ্গত হইবে না । তবে নবাব যে জনপ্রিয় হইতে পারেন নাই, তাহ নিশ্চিত কথা । তিনি তঁাহার দাদামহাশয়ের আদরে অত্যন্ত প্ৰশ্ৰয় পাইয়াছিলেন, তিনি গুরুতর অপরাধ করিলেও বৃদ্ধ নবাব তঁহাকে শাসন করেন নাই, এজন্য তিনি যাহা ইচ্ছা তাহা করিতেন। প্ৰজাদিগকে অযথা পীড়ন করিতেন, লোকে জানিত সিরাজ যাহা করিবেন, তাহার উপরে নালিশ চলিবে না। সুতরাং জনসাধারণ এই অতিরিক্ত প্রশ্ৰয়প্রাপ্ত খামখেয়ালী তরুণ যুবকের প্রতি বীতরাগ