পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

W8 বৃহৎ বঙ্গ ছোয়াচে রোগের চূড়ান্ত লীলা দেখাইয়া জনসাধারণকে সর্বপ্রকার উন্নতির পথ হইতে ঠেকাইয়া রাখিয়াছিলেন। সুতরাং তঁাহারা সেন বংশের কীৰ্ত্তিগুলি তঁহাদের পল্লীগাথার অন্তৰ্ব্বতী করেন নাই। কিন্তু সহস্ৰ দোষসত্ত্বেও হতভাগ্য সিরাজউদ্দৌলাকে রাজনীতিক্ষেত্রে কোনরূপ C? Cofres 65ed, er | সিরাজউদৌলার মাসী ঘোষিটি বেগম বহু ঐশ্বৰ্য্য লইয়া মতিঝিলে বাসা করিয়াছিলেন। আলিবদীর মৃত্যুর পর তিনি কতকগুলি ওমরাহকে হাত করিয়া সিংহাসন লাভ করিবার জন্য অকাতরে অর্থ ব্যয় করিয়াছিলেন। সিয়ার মুতাক্ষরিনের লেখক লিখিয়াছেন-এই দুশ্চরিত্র এবং বুদ্ধিহীন রমণী যদি সিরাজকে নিজের ছেলের মত দেখিতেন, তবে কত ভাল হইত। তঁহাকে যাহারা উৎসাহ দিয়া প্রচুর অর্থ গ্ৰাস করিয়াছিল, সেই সকল ওমরাহ—মীর নজর আলি, দোস্ত মহম্মদ এবং রহিম খ-সেই অর্থে দূরে যাইয়া প্ৰাসাদ-নিৰ্ম্মণপূর্বক সুখে বাস করিতে লাগিলেন, এবং সিরাজ তাহার বিপুল অর্থ স্বীয় ভাণ্ডারে আনিয়া তাহাকে মতিঝিল হইতে বন্দীবাসে প্রেরণ করিলেন । সিরাজ প্ৰাচীন কৰ্ম্মকৰ্ত্তাদিগের কয়েকজনকে বিদায় দিয়া বাকী কয়েকজনের মাথা ডিঙ্গাইয়-স্বীয় মনোনীত দুই তিনটি প্ৰধান কৰ্ম্মচারী নিয়োগ করিয়াছিলেন। কথিত আছে ইহাদের স্পৰ্দ্ধা ও অহঙ্কারে প্রবীণ কৰ্ম্মচারী ও ওমরাহরা অত্যন্ত বিরক্ত হইয়াছিলেন। পরবর্তী ঘটনাগুলি আলোচনা করিলে সিরাজ যে অবিবেচনার কাজ করিয়াছিলেন, তাহা বোধ হয় না। যাহাদিগকে তিনি বিদায় করিয়াছিলেন-তাহদের মধ্যে একজন ছিলেন মীরজাফর। ইনি অলিবন্দী খাকে সিংহাসনচ্যুত করিবার চেষ্টা অনেকবার করিয়াছেন, বৃন্ধ নবাব তথাপি ইহাকে দুই একবার কৰ্ম্মচু্যত করিয়াও শেষে ক্ষমা করিয়াছিলেন। সিরাজ কুসঙ্গীদিগের সঙ্গে মিশিয়া অত্যাচার করিতেন—এই অভিযোগ তাহার কাৰ্যকলাপে সমর্থিত হয় না, বরঞ্চ তিনি র্যাহাদিগকে পদমৰ্য্যাদা দিয়া শাসনভার দিয়াছিলেন।--তাহদের একটিও অবিশ্বাস্ত বা অযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন বলিয়া বোধ হয় না। তঁহার উদারহৃদয় দাদামহাশয় বরং র্যাহাদিগকে বিশ্বাস করিয়াছেন। তঁহাদের প্রায় সকলেই বিশ্বাস হারাইয়া বিদ্রোহী হইয়াছেন, কিন্তু সিরাজ এবিষয়ে চতুর ছিলেন। মীরজাফরকে তিনি প্ৰথম হইতেই অবিশ্বাস করিয়াছিলেন। যে দুই ব্যক্তিকে নবাব শাসনবিভাগের সর্বেসর্বা করিয়াছিলেন, তঁহাদের মধ্যে একজন মোহনলাল। ইনি সিরাজের পারিবারিক বিভাগের দেওয়ান বা প্ৰধান সরকার ছিলেন ; সিরাজ ইহাকে “মহারাজা” উপাধি দিয়া সর্বপ্ৰধান মন্ত্রীর পদ ( Prime Ministership) দিয়াছিলেন। বাজার-সরকার দণ্ডমুণ্ডের কৰ্ত্ত হইলেন, তারপর তিনি কাফের। প্ৰবীণ ওমরাহদের দল তঁহার নামে যেসকল কথা রাষ্ট্র করিল, তাহা সত্য কি না কে বালিবে ? হিসে, দ্বেষ প্ৰভৃতি ভাবের উত্তেজনায় মানুষ অনেক মিথ্যা কথার সৃষ্টি করিয়া থাকে। কথিত আছে, মোহনলালের একটি ভগিনী ছিলেন, তিনি প্ৰাচ্য আদর্শ-অনুসারে শ্ৰেষ্ঠ সুন্দরী ছিলেন-সো আদর্শের কথা আমরা সংস্কৃত, বাঙ্গল, পারসী প্ৰভৃতি অনেক ভাষায় লিখিত দেখিতে পাই ; “দীর্ঘকেশী কৃশাঙ্গী”-পদ্মিনীলক্ষণাশ্রিত নারীর বর্ণনায় পাওয়া