পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরবত্তী বাদসাহগণ হইতে তিন প্রদেশের সনন্দ পাইয়াছি, তদনুসারে আমি বঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যা এই তিন প্রদেশেব মালিক। কিন্তু যেহেতু আপনার সঙ্গে আমার নিকট সম্পর্ক রহিয়াছে, তজ্জন্য আপনার প্রাণের উপর হস্তক্ষেপ করিতে আমার ইচ্ছা নাই। আপনি এই পত্র পাওয়া মাত্র ঢাকা কি অন্য প্রদেশে গ্ৰাসাচ্ছাদনের উপযুক্ত জায়গীর গ্ৰহণ করিয়া চলিয়া যাউন, কিন্তু খবরদার, আপনি মুসিন্দাবাদের রাজপ্ৰাসাদ হইতে একটি কপর্দক বা কোন দ্রব্যসামগ্ৰী লাইতে পরিবেন না, এই পত্রের উত্তরের জন্য আমি ঘোড়ার পাদানিতে পা দিয়া অপেক্ষা করিতেছি।” সত্যসত্যই কতকগুলি নিবুদ্ধি আমীরের মন্ত্রণায় সকৎজঙ্গ বহু টাকা খরচ করিয়া সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর হইতে বঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যার মালিকানির সনন্দ আনাইয়াছিলেন, উক্ত সম্রাটকে এক কোটী টাকা বৎসরে রাজস্ব দেওয়ার সর্ত তাহাতে ছিল। মুতক্ষরিনে লিখিত আছে-এই সনন্দ পাইয়া “তিনি ছিলেন চন্দ্ৰলোকে, লাফ দিয়া একেবারে উঠিলেন সুৰ্য্যলোকে,” বঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যার অধিকার পাইয়া তিনি কি কি করিবেন, তাহার বিশ্বস্ত মন্ত্রী দাগের সহিত তাহা আলোচনা করিয়া বলিতেন, “আমি তাহার পর সুজা উদ্দিন খ্যা ও সাহেবুদ্দিনকে দমন করিব, তারপর ইচ্ছামত একজন সম্রাটকে আমার হাতের পুতুলের মত আগ্রার সিংহাসনে বসাইব । অতঃপর আমি লাহোর ও কাবুল হইয়া কান্দাহার ও খোরাসানে যাইয়া বাস করিব, যেহেতু বাঙ্গলার হাওয়া আমার একেবারেই সহ্য হয় না।” আলানাস্কারের মত এই ক্ৰমোন্নতির পরিকল্পনা করিতে যাইয়া তাহার পূর্ণিয়া রাজ্যটি একটা খেলানার মত ভাঙ্গিয়া গেল। মীর আলি খা নামক এক ফৌজদার একদা তাহাকে “জগতের একমাত্ৰ আশ্ৰয়” বিশেষণ দিয়া চিঠি দিয়াছিলেন । সকৎজঙ্গের এই উপাধিটি এত ভাল লাগিয়াছিল যে সরকারী সমস্ত দলিলপত্রে ও সনন্দে তিনি ঐ উপাধি ব্যবহার করিতে আদেশ করিয়াছিলেন। যে ব্যক্তি কঁর স্থাকে, ঐ উপাধি ছাড়া চিঠিপত্র লিখিত, র্তাহার পত্র তিনি না পড়িয়াই টুকরা টুকরা করিয়া ছিড়িয়া ফেলিতেন। সেরূপ কোন পত্র নবাবের সেরেস্তায় গৃহীত হইত না। তিনি সমস্ত প্ৰবীণ ও তঁহার পিতার বিশ্বস্ত কৰ্ম্মচারীদিগকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিয়া চটাইয়া দিলেন । এমন কি রণস্থলেও তিনি তঁহার বড় বড় ওমরাহ দিগকে এইরূপ ভাষায় তাড়া করিতেন,-“গুলিগোলার লক্ষ্য হইয়া থামের মত দাড়াইয়া আছ কেন ? দেখছি না। হিন্দু শ্যামসুন্দর কতটা এগিয়া গেল ?” বয়স্থ যোদ্ধগণ এইরূপ সম্বোধনে এরূপ বিরক্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন যে যখন সিরাজের সঙ্গে প্ৰকৃত সংঘর্ষ আরম্ভ হইল-তখন খুব অল্পলোককেই তিনি স্বীয় অনুচরস্বরূপ পাইলেন। মীরজাফর লোভ দেখাইয়া তাহাকে বঙ্গদেশ আক্রমণ করিতে গোপনে চিঠি পাঠাইয়াছিলেন। তিনিও কাৰ্য্যকালে তঁহার কোন সহায়তা কবিলেন না। সমস্ত মন্ত্রী ও ওমরাহ। তাহার উপর বিরক্ত ছিল, তিনি তাহার প্রধান কৰ্ম্মচারী লালীকে তাড়াইয়া দিয়া তাহার দুই দিন বয়স্ক পুত্রকে হাতীর পিঠে চড়াইয়া তাহাকেই সেনাপতি বলিয়া ঘোষণা করিয়াছিলেন। লালীকে তিনি বেত্ৰাঘাত করিতে হুকুম দিয়াছিলেন, সমস্ত মন্ত্রী ও ওমরাহগণ একত্র হইয়া নিবেদন করিলেন-এরূপ উচ্চ রাজকৰ্ম্মচারীকে এভাবে দণ্ডিত করা নীতিবিরুদ্ধ,