পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৃহৎ বঙ্গ فbN\ তাই লালী রেহাই পাইয়াছিলেন। সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে যুদ্ধের সময়ে তিনি এত মদ খাইয়াছিলেন যে, স্বলিতপদে টালিতে টলিতে মাহুতের কঁাধে ভর করিয়া কোনরূপে হাতীর পিঠে চড়িয়াছিলেন এবং শক্রিশিবিরের গুলিতে যখন তাহার মাথাটা উড়িয়া যায়, তখন সে মাথায় মদের নেশা ছাড়া কোন বুদ্ধি এমন কি বেদনা-বোধটাও ছিল কিনা সন্দেহ। অনেক ঐতিহাসিক সকৎজঙ্গের সঙ্গে সিরাজউদৌলার তুলনা করিয়াছেন ; মাসতুতো ভাইদের প্রকৃতি কতকটা একরূপ ইহাই পৃষ্ঠাহাবা বলিয়া থাকেন, একথা সর্বৈব ভুল। একটা বিষয়ে সাদৃশ্য ছিল, উভয়েই জনমতকে একেবারে অগ্ৰাহ করিয়াছিলেন এবং প্রাচীন কৰ্ম্মচারী ও সন্ত্রান্ত ব্যক্তিদিগের পদ-মৰ্য্যাদানুসারে তঁহাদের সহিত ব্যবহার করিতেন না। কিন্তু সিরাজ অবিশ্বাসীদিগের প্রতিই ঐরাপ আচরণ করিয়াছিলেন—সকৎজঙ্গ নির্বিচারে সকলকে অপদস্থ করিয়া গালাগালি করিতেন। সিরাজের সঙ্গে তাহার তুলনাই হয় না। ঢাকার সহকারী শাসনকর্তা রাজবল্লভ নানা উপায়ে বিপুল অর্থ সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন, তিনি সিরাজউদ্দৌলার বিপক্ষদের সঙ্গে মিশিয়াছিলেন, সিরাজের মনে এ ধারণা বদ্ধমূল হইয়াছিল; সুতরাং কোন মুহুর্তে খামখেয়ালী নবাব তাহার প্ৰতিশোধ লইবেন, তাহার ঠিকানা নাই। —এই ভয়ে তিনি তৎপুত্ৰ রাজা কৃষ্ণবল্লভকে বহু অর্থসহ ইংরেজদের আশ্রয়ে কলিকাতায় পাঠাইয়া দেন। ড়েক সাহেবের তখন কলিকাতায় অসীম প্ৰতিপত্তি। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে কৃষ্ণবল্লভ তাহার সমস্ত ভাণ্ডারসহ নিরাপদ হইলেন। নবাব এই সংবাদ গুপ্তচরের নিকট পাইয়া ড়েক সাহেবের নিকট উমিচাঁদ ও কৃষ্ণবল্লভকে তঁহার অর্থাদির সহিত মুর্সিদাবাদে পঠাইয়া দিতে আদেশ করিয়া চিঠি লিখিলেন। ড্রেক অস্বীকার করিলেন। নবাব ক্ষেপিয়া গেলেন। তিনি বঙ্গদেশে ইংরেজ-বাণিজ্য একেবারে উন্মলিত করিতে সংকল্প করিয়া পূৰ্ণয়া হইতে অবিলম্বে বাঙ্গলাদেশে উপস্থিত হইলেন । তঁহার অন্যতম প্ৰধান মন্ত্রী দুর্লভরাম এবং অপরাপর প্রধান অমাত্যগণ ইংরেজদের পক্ষপাতী ছিলেন, তিনি তাহদের কাহাকেও অনুরোধ করিলেন না, ইংরেজের কারখানা আক্রমণ করিয়া মিঃ ওয়াটকে বন্দী করিলেন। ড্রেক সাহেবের স্পদ্ধিত উত্তরে তিনি যে ক্রুদ্ধ হইয়াছিলেন, তাহা উক্ত সাহেব বুঝিতে পারিয়া প্ৰথমতঃ চুচুড়ায় ডাছ ও তৎপরে চন্দননগরে ফরাসীদের নিকট সাহায্য চাহিয়াছিলেন, তাহারা কোন সাহায্য দিলেন না ! সুতরাং সাহেব পালায়নপর হইলেন। তিনি শুনিয়াছিলেন, সিরাজ তর্তাহাকে হত্যা করিবেন--তিনি প্ৰথমতঃ ১,৫০০ বন্দুকধারী বাঙ্গালী সৈন্য সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন-কিন্তু তাহার বারুদ ভিজিয়া যাওয়াতে বন্দুকগুলি অকৰ্ম্মণ্য হইয়াছিল, সুতরাং তিনি কতকগুলি সাহেবৰিবি লইয়া কলিকাতা হইতে তিন মাইল দূরবর্তী গোবিন্দপুরের জাহাজে উঠিয়া মান্দ্ৰাজে প্ৰয়াণ করিলেন। এদিকে হাউএল সাহেব খুব বীরত্বের সহিত দুৰ্গরক্ষা করিতে চেষ্টা পাইয়া যখন ১৯০ জন মাত্র ইংরেজ অবশিষ্ট-তখন নবাবের নিকট আত্মসমৰ্পণ করিলেন । এইখানে বন্দীদের জন্য ভাল বন্দোবস্তই হইয়াছিল-তাহারা বারান্দায় থাকিবেন। এই কথা ছিল। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত ইংরেজ-সংঘর্ষ।