পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

yo e বৃহৎ বঙ্গ কর্তৃত্ব দিয়াছিলেন ! এজন্য এই দুইজনের ইহার বিরুদ্ধে জাতক্ৰোধ ছিল। বৃথা-প্ৰজ্ঞাভিমানিনী FINNS I ঘেসেটি বেগমের মাথায় হাত বুলাইয়া মীরজাফর যে বিপুল অৰ্থ লাভ করিয়াছিলেন, তাহ সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকাইয়া তুলিবার জন্য তিনি সৈন্যসংগ্রহে এবং সৈন্যদিগকে সম্পূর্ণ হস্তগত করিবার অভিপ্ৰায়ে ব্যয় করিয়াছিলেন। পূৰ্ণয়ায় সকৎজঙ্গকে সিরাজের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম তিনিই নাচাইয়া তুলিয়া তঁহার সর্বনাশ সাধন করিয়াছিলেন । দাদামহাশয়ের আমলেব লোক-এবং আত্মীয়, এইজন্য সিরাজ তাহার গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখিয়াও তেঁহাকে শাসন করিতে পারেন নাই । এমন কি পলাশীর যুদ্ধের কিছু পূর্বে মীরজাফর ও দুর্লভরাম যে ইংরেজদের সঙ্গে একযোগ হইয়া তাহার সর্বনাশী-সাধনের চেষ্টা পাইতেছে-একথা জানিয়াও তিনি তঁহাদিগকে দণ্ডিত করিতে সাহস পান নাই। সেই সময়ে মুসিও লাস (ফরাসী সেনাপতি) তঁহাকে বলিয়াছিলেন, “নবাব সাহেব, আপনাব আমলা ও ওমরাহ সকলে আপনার শত্ৰু-ইহাদের ইচ্ছা ফরাসীদের তাড়াইয়া। আপনি ইংরেজদের হাতে যাইয়া পড়েন। তখন আপনার সর্বনাশ ইহারা সহজেই করিতে পরিবেন । আমাকে যদি আপনার অধীনে কাজ দেন, তবে আমি ও আমার সৈন্যদল প্ৰাণপণে আপনার জন্য যুদ্ধাদি করিব।” ( মুতক্ষরিন, ২য় খণ্ড, ২২৭ পৃ: ) । লাস সাহেব ফরাসী এবং ইংরেজেব শক্র,- এদিকে নবাব স্পষ্ট বুঝিলেন দুই একটি লোক ছাড়া সকলেই তাহার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ; এজন্য কতক মীরজাফরের ভয়ে, কতক ইংরেজের চটিয়া যাইবেন এই আশঙ্কায় তিনি বিশ্বাসী ফরাসী সেনাপতিকে নিযুক্ত করিতে পারিলেন না। লাস সাহেব ঠিক বুঝিয়াছিলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে নবাব অচিরাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হইবেন, এজন্য যখন নবাব অত্যন্ত দ্বিধার সহিত বলিলেন, “সময় হইলে আপনাকে আহবান করিব,” তখন সাহেব স্পষ্টাক্ষরে তাহাকে বলিয়াছিলেন, “আপনার সহিত আমার আর দেখা হইবে না।” শেষমূহুর্তে যখন বিপদ আসন্ন, তখন তিনি চারিদিক অন্ধকার দেখিয়া লাসকে আহবান করিয়াছিলেন, কিন্তু অনিবাৰ্য্য বিস্ত্র অতিক্ৰম করিয়া লাসের আসিতে গৌণ হইল, যখন আসিলেন, তখন সিরাজ আর মর্ত্যলোকে ছিলেন না। লাসকে ইংরেজের তাড়া করিয়া ধরিতে বিশেষ চেষ্টা করিয়াছিলেন, একানক্রমে তিনি ভাগ্যবলে রক্ষা পাইয়াছিলেন । ইংরেজেরা নবাবের সঙ্গে সন্ধি করিলেন। কিন্তু ইহার মধ্যে ক্লাইভ আসিয়া পুনরায় যুদ্ধের উদ্যোগ করিতে লাগিলেন। সন্ধি অনুসারে যে টাকা দেওয়ার কথা ছিল, নবাব তাহা দিতে বিলম্ব করিয়াছিলেন, এইরূপ অজুহাতের অভাব হইল না। মোট কথা মীরজাফর, দুর্লভরাম, কৃষ্ণচন্দ্ৰ, জগৎ শেঠ প্ৰভৃতি দেশের প্রধান ব্যক্তিরা ইংরেজাদিগকে উস্কাইতে ছিলেন। এদিকে কলিকাতার দুৰ্গধবংসের ব্যাপারে তঁাহারাও মনে মনে প্ৰতিশোধ লওয়ার জন্য প্ৰস্তুত হইয়াছিলেন । চতুর ক্লাইভ বুঝিতে পারলেন,-মুর্সিদাবাদে নবাবের মিত্ৰ নাই, সকলেই শত্রু। মীরজাফরাদির পুনঃ পুনঃ প্ৰতিশ্রুতি তিনি অবিশ্বাস করিতে পারিলেন না। এদিকে মীরজাফরের। প্ৰবৰ্ত্তনায় ঘেসেটি বেগম আসিয়া সিরাজ তাহার প্রতি