পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ክሦዓቅ.. বৃহৎ বঙ্গ এইজন্য নবদ্বীপের কৃষ্ণচন্দ্ৰও আসিয়া এই দলে ভিড়িয়া গেলেন। তিনি তাহার বংশের পূর্বসংস্কার ও ব্রাহ্মণসমাজের গুরুর স্থান অধিকার করার দরুন বহু ব্যয় করিতেন,-পুজাৰ্চনা, দানধ্যান, বার মাসে তের পাৰ্ব্বণ খুব জাকিয়া করিতেন, এইজন্য তিনি একজন চির-দেউলিয়া জমিদার ছিলেন। বণিক্‌ ও অর্থশালী ব্যক্তিদের কাছে, ঋণগ্রহণের ব্যপদেশে তাহাকে সর্বদা ঘুরিয়া বেড়াইতে হইত-ইংরেজদের সঙ্গে সম্ভবতঃ এই সূত্রে তঁহার ঘনিষ্ঠত হইয়াছিল। মুসিন্দাবাদে যখন মীরজাফর, দুর্লভরাম ও জগৎ শেঠ এই ষড়যন্ত্র করিতেছিলেন, তখন কৃষ্ণচন্দ্রের ডাক পড়িল । মীরজাফর রাজাকে তথায় আনিবার জন্য লোক পাঠাইলেন । রাজীবলোচন বিস্তারিত ভাবে এই দৌত্যের বিররণ লিখিয়াছেন। কৃষ্ণচন্দ্ৰ সহসা এরূপ একটা ব্যাপারে মাথা দিতে দ্বিধা বোধ করিলেন, তিনি তঁাহাব প্ৰধান অমাত্যকে প্রথমতঃ পাঠাইয়া দিলেন । দুর্লভরামের সাহায্যে অমাত্য নবাবের দেখা পাইয়া বলিলেন, “আমাদের রাজা হুজুরের সঙ্গে সিংহাসন পাইবার পর দেখা করেন নাই—একবার দর্শনপ্রয়াসী-হুজুরের অনুমতির জন্য আসিয়াছি।” তাহার হঠাৎ মুর্সিদাবাদে আসা যদি কোন সন্দেহের সৃষ্টি করে, এই আশঙ্কায় নবাবদর্শনের অছিলায় কৃষ্ণচন্দ্র রাজধানীতে আগমন করিলেন । এদিকে কিরূপে সিরাজকে সিংহাসনচ্যুত করা যাইতে পারে, ধূৰ্ত্তত্রয় সেই বিষয়ে প্রতি রাত্রে জটিল করিতেছিলেন। কেহ বলিলেন-ইহাকে গুপ্তভাবে হত্যা করা যাউক । কেহ বলিলেন, আমরা প্ৰকাশ্যভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করি, কেহ বলিলেন, যবনের অধিকার আর কোনরূপে সহ্য করা যায় না-অপর একজন মীরজাফরের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া বলিলেন, “আপনি কি বলিতেছেন ? এখানে যে মীরজাফর উপস্থিত, তাহা কি ভুলিয়া গেলেন।” তখন একটা হাসির রোল পড়িয়া গেল । সৰ্ব্বসন্মতিক্রমে স্থির হইল, কৃষ্ণচন্দ্ৰ অতি চতুর ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি, তাহাকে ডাকাইয়া আনিয়া পরামর্শ করা হউক ; তিনি ধীর স্থির-বুদ্ধি, এ সমস্তার তিনি যে সমাধান করিবেন, তাহাই গৃহীত হইবে । এই অবস্থায় কৃষ্ণচন্দ্ৰ আসিয়া বুদ্ধি দিলেন, “ইংরেজদের সঙ্গে একযোগে কাজ করা হউক, আমি কালীঘাটে মায়ের দর্শনকামনায় { বোপ হয় ঋণ পাওয়ার চেষ্টায়ও বটে। ) প্রায়ই কলিকাতায় যাইয়া থাকি। তাহারা মান্য, বদান্য, বুদ্ধিমান, রণনিপুণ, তাহাদিগের সঙ্গে যুদ্ধ লাগাইয়া আমরাই দাবার চাল চালিব, শেষ পৰ্য্যন্ত নবাব আমাদের হাতে কলের পুতুলের মত থাকিবেন, আমরাই যুদ্ধ চালাইব ; “ধরি মাছ না। ছুই পানি’-নীতি অবলম্বন করিলে কেহ আমাদিগকে সন্দেহ করিতে পরিবে না, অথচ অভীষ্টসিদ্ধি অতি সহজেই হইবে, মীরজাফরকে আমরা নবাব করিব ” এই যুক্তি শুনিয়া সভায় “বাহবা।” পড়িয়া গেল। তখন মীরজাফরের সঙ্গে ক্লাইভের গোপনে চিঠি-পত্ৰ চলিতে লাগিল। এদিকে নবাবকে জব্দ করিবার জন্য ক্লাইভ ও ইংবেজের নানা উপায় চিন্তা করিতেছিলেন, তাহার মধ্যে এই সম্পূর্ণ অপ্ৰত্যাশিত সুবৰ্ণ-সুযোগ আসিয়া উপস্থিত হইল। এদিকে মীরজাফর অর্থের যে লোভ দেখাইলেন, তঁহাদের অবাধ বাণিজ্য ও নবাবের অপরিমিত ধনভাণ্ডারের বাখরার যে আশা দিলেন, তাহাতে নিতান্ত উদাসীন ব্যক্তিরও মাথা ঘুরিয়া যাইতে পারিত। ইংরেজ সৈন্য দাক্ষিণাত্য হইতে আসিয়াছিল, তাহদের মধ্যে “সাজ সমাজ” রব পড়িয়া গেল।